ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন : প্রার্থী দিয়েই ‘দায়িত্ব শেষ’ জাপার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঢাকা-১৮ আসন উপনির্বাচনে প্রার্থী দিলেও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। প্রতীক বরাদ্দের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় নামেনি দলটির কোনও নেতা। প্রার্থী নিজে শুধু একদিন ঘণ্টাখানেক প্রচারণা চালিয়েছেন। ফলে, নির্বাচনে অংশ নিলেও রাজনীতির মাঠ থেকে বলা যায় হাওয়া হয়ে গেছে জাপা। জাপা নেতারা বলছেন, জয়ী হওয়াটা জাপার উদ্দেশ্য নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণই আসল কথা। এর অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক শক্তির তুলনায় জাপার সাংগঠনিক দুর্বলতা। এ অবস্থায় নির্বাচনি ফলও জাপার প্রার্থীর পক্ষে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
নির্বাচনি খরচের জন্য জাপার দলীয় কোনও তহবিলও নেই। প্রার্থীকে নিজের খরচেই নির্বাচন করতে হয়। আবার সংসদে বিরোধী দল হয়েও সরকারেরই একটি অংশ হয়ে আছে জাপা। একাদশ সংসদ নির্বাচনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে করেছে তারা। এ কারণে যেকোনও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এই দুই দল অংশ নিলে জাপা নিয়ে তখন ভোটারদের মধ্যে কোনও আগ্রহ থাকে না। সবদিক বিবেচনা করেই নির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেই হাওয়া হয় জাপা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের প্রধান কর্মকাণ্ডের মধ্যে এক নম্বরে আছে নির্বাচন। এ কারণে জাপা প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এরপর আসে আন্দোলন। বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা আন্দোলনের চেষ্টা করছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ করে যাচ্ছি।’ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার পরও কেন জাপার নেতারা প্রচারণায় যায় না জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, ‘আমি নিজে বিভিন্ন কারণে প্রচারণায় অংশ নিতে পারি না। কিন্তু দলের সর্বস্তরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার। এখন কেউ নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ না নিলে পরে কমিটিতে তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। কেউ অসুস্থ থাকার কারণে নির্বাচনি কাজ না করলে তারও উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি দলের মধ্যে ইমব্যালেন্স করতে চাচ্ছি না। তবে যে নেতা আমাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে বিরোধী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে তাকে সরাসরি বহিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া আছে এবং করা হবে।’
নির্বাচনে প্রচারণা নাই কেন জানতে চাইলে ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থী নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) আমরা নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছি। এরপর দুদিন আবহাওয়া খারাপ ছিল। শনিবার (২৪ অক্টোবর) রংপুরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য যাওয়া হয়নি। গতকাল সোমবার আমি আজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছি।’ নির্বাচনি প্রচারণায় জাপার কেন্দ্রীয় নেতারা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশা করি ধীরে ধীরে সিনিয়র নেতারা আসবেন। এ বিষয়ে আমি আর কী বলবো।’ জাপার নেতাদের অভিমত, ‘কোনও দল যদি নির্বাচন হওয়ার আগেই বুঝতে পারে তাদের পরাজয় নিশ্চিত তাহলে সেখানে কারোরই আগ্রহ থাকার কথা নয়। ঢাকা-৫ এবং ঢাকা-১৮ আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিল। ফলে, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ জিতবে এমনটা ভেবে থাকলে সেটা ভুল। ঢাকা-৫ উপনির্বাচনের প্রচারণায় যায়নি জাপার সিনিয়র কোনও কেন্দ্রীয় নেতা। একই কারণে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। প্রার্থীও নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনে খরচ করে প্রচারণা চালাতে আগ্রহী নয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোনও প্রার্থী দেয়নি। সেখানে জাপাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে, সেখানে আমাদের জয় নিশ্চিত ছিল। সেই কারণে সেখানে কাকে প্রার্থী করা হবে এই নিয়ে দলের জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ দ্বন্দ্বের কারণে দল ভাঙনের পর্যায়ে চলে যায়। জয় নিশ্চিত জেনে রংপুরের নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা প্রচারণায় গিয়েছিল। এরপর গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়ে জাপা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে। ফলে সুষ্ঠু ভোট হলেও যেসব নির্বাচনে জাপার জয়ের সম্ভাবনা থাকবে না, সেগুলোতে কেবল প্রার্থী দিয়েই দায়িত্ব শেষ করবো আমরা।’ নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সংসদে আওয়ামী লীগের কাছে ১৭৫টি আসন আছে। আমরা মহাজোটে থেকে সংসদ নির্বাচন করেছি এবং এখনও মহাজোটে আছি। ফলে আওয়ামী লীগ জাপাকে ২-৫ উপনির্বাচন ছেড়ে দিলে কিছুই আসে যায় না। এই আসনটি আমাদের ছেড়ে দিলে ভালো হতো।’ প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিব হাছান ও বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ ও ১৭নং ওয়ার্ড এবং দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা এবং উত্তরখান থানা নিয়ে ঢাকা-১৮ আসনটি গঠিত। এই আসনের ভোটার ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৩ জন।