বার্তোমেউয়ের বিদায় মানে মেসিই জিতলেন শেষ পর্যন্ত!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাক্ষর জোগাড় করে বিরোধী পক্ষ জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের নেতৃত্বাধীন বার্সেলোনা বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। ভোট হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরের প্রথমেই। কিন্তু করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউকে কারণ দেখিয়ে বার্তোমেউ ওটা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন কাতালান রাজ্য সরকারের কাছে। ভেবেছিলেন রাজ্য সরকার এ আবেদনে সাড়া দেবে। সোমবার পর্যন্তও জোর গলায় বলে গেছেন, পদত্যাগ করার কোনও ইচ্ছেই তাদের নেই, কারণ মার্চ মাসের নির্বাচনের আগে আরও কিছু কাজ তাদের করতে হবে। কিন্তু যখন দেখলেন রাজ্য সরকারের সমর্থন পাচ্ছেন না, আর অপদস্থ হওয়ার ঝুঁকি নিলেন না। মঙ্গলবার বোর্ডসহ পদত্যাগ করলেন বার্তোমেউ। দৃশ্যপটে এখন বার্সেলোনার অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নির্বাহী বোর্ড ক্ষমতা নেওয়ার আগ পর্যন্ত এই বোর্ডই দৈনন্দিন কাজগুলো চালাবে এবং নির্বাচন আয়োজন করবে। এই বোর্ডের প্রধান বার্সেলোনার অর্থনৈতিক কমিশনের প্রধান ড. কার্লেস তুসকেতস। ২৭ বছর বয়সে যিনি সেই সময়ের বার্সেলোনা সভাপতি জোসেপ লুইস নুনেজের বোর্ডে ঢুকেছিলেন কোষাধ্যক্ষ হিসেবে। ১৯৮২ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে বার্সেলোনায় আনার জন্য তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে। আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ম্যারাডোনা ৪ জুন বার্সেলোনায় সাইন করেছিলেন, ১৯৮৪ তে নাপোলিতে যোগ দেওয়ার আগের দু’বছরে বার্সেলোনাকে কোপা ডেল রে, কোপা ডে লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতাতে রাখেন বড় ভূমিকা। ৬৯ বছর বয়সী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তুসকেতসের মাধ্যমেই স্পেনে বিনিয়োগ ব্যাংকের সূচনা হয়। ব্যাংকো মিডিওলেনামের প্রেসিডেন্ট এখন তিনি।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের মনে করে বার্সেলোনার গত গ্রীষ্মকালীন ঝড়টা আসলে বার্তোমেউ বনাম মেসি লড়াইয়ের কারণেই হয়েছে। মেসিকে বার্সেলোনায় আটকে রেখে বার্তোমেউ মনে করেছিলেন, লড়াইয়ের প্রথম পর্বে জিতে গেছেন, তবে শেষ পর্যন্ত তার হার স্বীকারই ছিল নিয়তি। মঙ্গলবার বার্তোমেউ সপারিষদ পদ্যত্যাগের ঘোষণা দিয়েই পরাজয়টা মেনে নিয়েছেন। তাহলে তো মেসির মুখে এখন যুদ্ধ-জয়ের মৃদু হাসি ফুটে ওঠার কথা। জুভেন্টাসের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে তার পারফরম্যান্সও তাহলে হাসবে? সে অবশ্য দেখা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই। তবে এ কথা সত্যি, খুবই খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন বার্সেলোনার প্রাণভোমরা। মৌসুমের শুরুটা এত বাজে খুব কমই হয়েছে তার। পেনাল্টি থেকে লিগের প্রথম পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি গোল করেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচেই গোলের খাতা খুললেও সেটিও পেনাল্টি গোল। মেসিকে এতটা নিষ্প্রভ আগে কখনও মনে হয়নি। নেপথ্য কারণ হিসেবে অনেকেই বার্তোমেউয়ের নেতৃত্বাধীন বোর্ডকেই দাঁড় করিয়েছেন। তো বার্তেমেউ ও তার পরিষদ এখন যেহেতু নেই, অন্তর্লীন হাসিতে নিশ্চয়ই উদ্ভাসিত হবেন মেসি। ভক্ত-সমর্থকেরা চাইছেন হাস্যোজ্জ্বল মেসিকে পাওয়া যাক আজ জভেন্টাসের মাঠ থেকেই। কিন্তু সমস্যা আরেকটি আছে। মেসির মনে আনন্দ ফিরে এলেও রোনাল্ড কোম্যানের মনের মধ্যে যে ঝড় উঠেছে। কারণ তাকেও বিদায় নিতে হতে পারে পুরো দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই। অনাস্থা ভোটের অন্যতম পুরোধা ভিক্তর ফন্ত, যিনি আগামী নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী, বলে রেখেছিলেন তারা নির্বাচিত হলে জাভি হার্নান্দেজকে কোচ করে আনবেনই। বার্তোমেউয়ের প্রধান বিরোধী হিসেবে ফন্ত জিতেও যেতে পারেন। তার মানে বার্সেলোনায় ঝড়টা সহজেই থামছে না! আইন অনুযায়ী আগের কমিটির পদত্যাগ করলে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে পরর্বতী নির্বাচন হতে হবে। সে অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার কথা জানুয়ারিতে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই বার্সেলোনায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে জোরালো মত তৈরি হয়েছে।