মনিরামপুরে দেশের অন্যতম বৃহত্তর গ্রাম ঝাঁপা চরম বঞ্চনা অবহেলার শিকার

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম গ্রাম ঝাঁপা চরম বঞ্চনা অবহেলার শিকার। চারদিকে পানিবেষ্টিত এই জনপদে বহু গুণীজনের জন্ম হলেও জনপ্রতিনিধিদের নজর পড়েনি গ্রামটির দিকে। নির্বাচন এলেই তারা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেন না। ফলে, দুর্ভোগ, দুর্দশা নিয়তির লিখন বলেই ধরে নিয়েছেন গ্রামের মানুষ। যশোর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামটি। এর চারদিকে ঘিরে রয়েছে জলরাশি। উত্তর পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বয়ে গেছে সুবিশাল বাঁওড়। পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ। যা দেখলে গ্রামটিকে একটি দ্বীপ বলে মনে হয়। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম গ্রামটিতে রয়েছে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি আলিম ও একটি বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, একটি বালিকা বিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রায় অর্ধশত জামে মসজিদ। আছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চারটি পূজামন্দির। একটি গ্রামেই তিনটি ওয়ার্ড। যার জনসংখ্যা দশ হাজারের কাছে। ভোটার সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। প্রত্যন্ত এলাকার এই গ্রামের কৃষক পরিবার থেকে হয়েছেন পাইলট, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক ব্যাংকার ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন অসংখ্য মানুষ। প্রতিকূল ভৌগলিক অবস্থানকে পিছনে ঠেলে দিয়ে বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে আঁকড়ে ধরে তারা নিজেদের অন্যান্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর বাইরে অনেকে প্রবাস জীবনের মধ্য দিয়ে ভাগ্যবদল করেছেন। এক সময়ে যাদের নুন আনতে পানতা ফুরানোর মত অবস্থা ছিল তারা পরিবার নিয়ে বসেছেন স্বচ্ছলতা। নিজেদের পরিশ্রম আর যোগ্যতা সততা দিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারলেও পরিবর্তন ঘটেনি ঝাঁপা গ্রামের। পূর্ব পুরুষরা যেভাবে গ্রামটিকে অবহেলিত দেখে গেছেন, বর্তমান প্রজন্মও সেভাবে দেখছেন। গ্রামটি এতটাই বঞ্চনা অবহেলার শিকার যে, সামান্য বৃষ্টি হলেই কোন রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করা যায় না। হাটু সমান কাঁদা-মাটির পথ পাড়ি দিয়ে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীরা গন্তব্যে পৌঁছান। সীমাহীন কষ্ট আর দুর্ভোগ নিয়ে কোমলমতি শিশুদের স্কুলে যেতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য ঘরে তুলতে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। বাজরজাতকরণের ক্ষেত্রে রয়েছে একই সমস্যা। ঝাঁপা বাঁওড়ের পাশাপাশি গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বিঘার মৎস্য খামার। এর মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে রাস্তাঘাটের উন্নতি না হওয়ায় মাছ আনা নেয়া ও বাজারজাতকরণে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। গ্রামটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীর চলাচলের পথ মাদ্রাসা মোড় থেকে কোমলপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় রাস্তাটির ঝাঁপা বাগাডান্দীরপাড়ার নিজ থেকে কোমলপুর বাজারের নিজ পর্যন্ত পানি থাকে। পানি সরে গেলে রাস্তাটিতে পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না। কারণ, এই অংশে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার পর ঝাঁপা গ্রামের যে উন্নয়ন হয়েছে তা হলো বাজার থেকে মাদ্রাসা মোড় হয়ে পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটি পাকাকরণ। তবে আশার কথা যে, এক সময়ে গ্রামটির প্রায় অর্ধেক মানুষের বাইরে গমনাগমনের মাধ্যম ছিল নৌকা। এখন সেটি নেই। গ্রামবাসী দুই কোটিরও অধিক টাকা ব্যয়ে দুটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছেন ঝাঁপা বাঁওড়ে। কোন রকম সরকারি সহায়তা ছাড়াই বাঁওড় পারাপারে বিপ্লব ঘটিয়েছেন তারা। অবহেলিত এই জনপদের ৮০ বছরের বৃদ্ধ দেলবার আলী ও নওশের মোড়ল বলেন, জীবদ্দশায় হয়তো গ্রামটির কোন উন্নয়ন দেখে যেতে পারবো না। জানি না আগামীর প্রজন্মের ভাগে কী আছে।