কোটি টাকা জরিমানা দিলেও তারা মাস্ক পরে না

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার ঝুঁকি আর আতঙ্ক থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে নেই স্বাস্থ্য সচেতনতা। সভা, সেমিনার, বাজার, খেলার মাঠ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান কোথাও সচেতনতামূলক মাস্ক এর ব্যবহার নেই। অথচ করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ৪২ জন। জেলা প্রশাসন বলছে, জনগণকে সচেতন করার জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। জরিমানা আদায়ের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরার জন্যে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু গত সাত মাসে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে এক হাজার ৮২২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এক কোটি ৪২ হাজার ৩২০ টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও চারপাশে যাদেরই দেখা যায় তাদের মুখেই মাস্ক নেই। চলতি বছরের মার্চমাস থেকে করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরু হয়। এরপর থেকে কয়েক দফা লকডাউন করা হয় জেলা শহরসহ কসবা এবং নবীনগর পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকা। কিন্তু, করোনার প্রভাব না কাটলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আক্রান্তের পরিসংখ্যান কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫২ জনের। তার মধ্যে নমুনার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে ১৯ হাজার ৬৭২ জনের। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৩৮৮ জন। বর্তমানে হোমকোয়ারেন্টিনে আছেন ৯৫ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা শূন্য। তবে হোম আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ৫৩ জন রয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় মৃতের সংখ্যা ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। এমন ঝুঁকির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নেই বললেই চলে। সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যস্ততম আনন্দবাজার, মেড্ডা বাজার, কোর্টরোড, সড়কবাজার, কেদাস মোড়, কুমারশীল মোড়, কাউতলীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকার বিষয়টি চোখে পড়ে।
এসময় মাস্কবিহীন অবস্থায় থাকা পৌর এলাকার ছয়বাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, আদালতে গিয়েছিলেন আত্মীয়ের এক মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ায় মাস্ক আনতে ভুলে গেছেন। মাস্ক না থাকায় বিষয়ে তিনি বিব্রতবোধ করেন। শহরের পীর বাড়ি এলাকার রিকশাচালক এলাই মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনা টোরোনা নাই নাই। ইতা বড় লোহের (লোকের) রোগ। গরীবেরে ধরে না।’
মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘রিকশা চালাইয়া নাক দিয়া শ্বাস ফালাইতে কষ্ট হয়। তাই এহন আর দেই না। তবে লগে রাহি। আঁৎকা আৎকা (হঠাৎ করে) ম্যাজিস্ট্র্যাট ধরে। না রাখলে বে সেবা (সমস্যা)।’ শহরের পুরাতন কোর্টরোড ফুটপাতে কলা বিক্রি করছেন সফর আলী। তার মাস্ক নেই। কথা হয় সফর আলীর সাথে। তিনি বলেন,‘মাস্ক আছে। কোমরে গুইজ্জা রাখছি। খারান বাইর করছি।’ নাকের মাস্ক কোমরে থাকলে কেমনে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সফর আলী বলেন, ‘ভাই একটা কথা কই, রাগ করবেন না। করোনায় কয়ডা গরিব মানুষ মরছে কন তো দেখি। করোনা আল্লার দেওয়া রোগ। আল্লার ইচ্ছায় হয়। গরিবের সাথে আল্লাহ আছে।’ এমন অসচেতনতা আর মনগড়া ভাবনা কেবল সফর আলীর নয়। চারপাশে যাদের দেখা গেছে, প্রায় সকলের। ফুটপাতের মাছ বিক্রেতা শাহজাহানেরও মাস্ক নেই। শাহজাহান জানান, ‘পানিতে ভিজ্জা মাস্কটা নষ্ট হইয়া গেছে গা। আর করোনাতো ভাই শেষ হইয়া গেছে গা। আপনেরা পত্রিকাত না লেখলে দেখবেন ইতা লইয়া (করোনা নিয়ে) আর কেউ কথা কইতো না ।’ শহরের লোকনাথ ট্যাংকের পাড়ে ফুটবল খেলা দেখছিলেন সুমন ভূইয়া নামে এক যুবক। তার মতো অনেকেরই মাস্ক নেই। সুমন জানান, ‘প্রতিদিন মাস্ক পরতে হয় না। করোনা রোগীর ধারে কাছে গেলে মাস্ক পরে গেলেই হয়। আর হাসপাতালে গেলে মাস্ক পরতে হয়। এ ছাড়া সারাদিন মাস্ক পরার দরকার নেই। তাই তিনি মাস্ক পরেন না।’ এছাড়া প্রতিদিন শহরে এবং গ্রামে যে সভা, সেমিনার, বাজার, খেলার মাঠ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান চলে সেগুলোর কোথাও এখন সতেচনতামূলক মাস্ক এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে জন সচেতনতা একমাত্র জরুরি বলে মনে করছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, শীতে করোনা পরিস্থিতির প্রকোপ বাড়তে পারে এমন প্রস্তুতি নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কমলেও ঝুঁকি রয়ে গেছে। তাই সকলে মাস্ক পড়া জরুরি। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও ডিজি আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে প্রচার অভিযান বাড়াতে হবে। ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে প্রচার অভিযান জোরদার করতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। তিনি করোনা কালে স্বাস্থ্যরক্ষায় মাস্কের বিকল্প নেই বলে জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান,মাস্ক পরিধানের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ২০ মার্চ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে এক হাজার ৮২২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫২২ জন ব্যক্তি ও মোট ৪২৪ টি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি ৪২ হাজার ৩২০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।