বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে সেই স্যানিটাইজারগুলো

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ এসিআই কোম্পানির স্যাভলন ব্র্যান্ডের মিথাইল অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো বাজার থেকে সরিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে, স্যানিটাইজারে মিথানল ব্যবহার করায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই আদেশের প্রায় এক সপ্তাহ পর বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্যাভলন ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ২৫ মিলিগ্রামের টিউবের ৩টি ব্যাচের এই পণ্য সরিয়ে ফেলেছে তারা। এমনকি নতুন ব্যাচের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারে আনার কথাও এখনই ভাবছে না প্রতিষ্ঠানটি। অভিযান সংশ্লিষ্ট র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ও ইথানলের পরিবর্তে মিথাইল অ্যালকোহল বা মিথানলের ব্যবহার করেছিল এসিআই। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা ইথানলের তুলনায় এর দাম কম। বাড়তি লাভের আশায় এই মিথানল ব্যবহার করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করেছে। এই মিথানল একদিকে যেমন বিষাক্ত, অন্যদিকে ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকারক।’
সারওয়ার আলম আরও বলেন, ‘অভিযানে স্যাভলন ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ২৫ মিলিগ্রামের টিউবের ৩টি ব্যাচের পণ্যে মিথানল পাওয়া যায়। নিম্নমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারজাত ও মজুতের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। ২০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ধ্বংস করার পাশাপাশি বাকি যা আছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাজার থেকে প্রত্যাহার করা নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা খোঁজ নিয়েছি, তারা বাজার থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো সরিয়ে ফেলেছে।’ র‍্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ওই কোম্পানির অন্য কোনও প্রোডাক্টে সমস্যা নেই। অন্য স্যানিটাইজারগুলো ভাল আছে। এদিকে গত দুই দিন মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ও বুধবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগ, গুলশান, বাংলামোটর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসি ও স্টেশনারি দোকানে খোঁজ নিয়ে নিষিদ্ধ এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার চোখে পড়েনি। মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ডের সামনে মাহবুব ক্রিসেন্ট ফার্মেসির মালিক আসিফ আজিজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছেও স্যাভলন ইন্সট্যান্ট ২৫ মিলিগ্রামের টিউবের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এমন ঘোষণার পর কোম্পানির লোকেরা এসে ঐ স্যানিটাইজারগুলো ফেরত নিয়ে যায়। এর পরিবর্তে অন্য যে কোনও প্রোডাক্ট তারা দিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে।
প্রায় একই কথা বলেন ধানমন্ডি ১৫-তে অবস্থিত মতলব ড্রাগসের মালিক আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে স্যাভলনের এমন নিউজ দেখার পর আমরা নিজে থেকেই এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি বন্ধ করে দেই। তার একদিন পর কোম্পানির লোকেরা এসে সেগুলো ফেরত নিয়ে অন্য প্রোডাক্ট দিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্যাভলনের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সমস্যা হওয়ার পর স্যাভলনের অন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলোর বিক্রিও কমে গেছে।’ এদিকে স্যাভলনের এই পণ্যটি তৈরি হয়েছে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে এসিআইয়ের নিজস্ব কারখানায়। পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে এসিআই কৃর্তপক্ষ বলছে, ‘পুরান ঢাকা থেকে কাঁচামাল কেনার সময় ভুলবশত মিথানলের একটি ড্রামের কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এরপর আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে প্রোডাক্ট তৈরি করবো।’ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এসিআই পিওর ফ্লাওয়ার লিমিটেড এবং এসিআই ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি বেশ কয়েকদিন আগে ঘটেছে। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মতে আমরা বাজার থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো সরিয়ে ফেলেছি। যেহেতু নির্দিষ্ট একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেহেতু সেটি ছাড়া অন্যগুলো বাজারে স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে।’ এই ঘটনার পরে নতুন কোনও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে আসছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এসিআই’র এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আপাতত আমরা এসব নিয়ে ভাবছি না। তবে বাজারে যখন নতুন কিছু আসবে, তখন আপনাদের অবশ্যই জানানো হবে।’ প্রসঙ্গত, রবিবার (১১ আক্টোবর) রাতে মিরপুর-১ নম্বরের ঈদগাহ মাঠের পাশে এসিআইয়ের ডিপোতে অভিযান চালিয়ে তিনটি ব্যাচে আনুমানিক ৩৫ হাজার ‘স্যাভলন হ্যান্ড স্যানিটাইজারে’ মিথানলের উপস্থিতি পান র‍্যাব। অভিযানে ওই ডিপোতে থাকা ২০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি যা আছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাজার থেকে প্রত্যাহার করার আদেশ দেন। এর আগে গত ৪ অক্টোবর গাজীপুরে এসিআইয়ের একটি ডিপোতে অভিযান চালিয়েও স্যাভলন হ্যান্ড স্যানিটাইজারে মিথানল পেয়েছিল র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।