কুষ্টিয়ায় ২২ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে ৮ মামলা

0

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা॥ কুষ্টিয়ায় চলতি অক্টোবর মাসের ২২ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। জেলার ৪টি থানায় এসব ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি অক্টোবর মাসে কুষ্টিয়ার মডেল থানায় দুটি, দৌলতপুর থানায় তিনটি, মিরপুর থানায় দুটি ও খোকসা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও কুমারখালী থানায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, অক্টোবর মাসে এখন পর্যন্ত ২টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। দুটির মধ্যে একটি মামলার আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর মামলার আসামিকে খুঁজছে থানা পুলিশ।
স্থানীয় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান, চলতি অক্টোবর মাসে ধর্ষণের অভিযোগে দৌলতপুর থানায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রতিটি মামলার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, চলতি অক্টোবর মাসে ধর্ষণের অভিযোগে মিরপুর থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগে খোকসা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কুমারখালী থানার যৌন নিপীড়নের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুনার রশিদ। তিনি জানান, চলতি অক্টোবর মাসে কুমারখালী থানায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে, ভেড়ামারা ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অক্টোবর মাসে উল্লেখিত থানায় এখন পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগে কোনও মামলা দায়ের হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল বলেন, নির্যাতিত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন কমে আসবে। কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন বাপ্পি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলতি বছর কুষ্টিয়া জেলায় কতগুলো ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কতগুলো এখনও বিচারাধীন এটা তাৎক্ষণিক বলা যাচ্ছে না। তবে আমি মনে করি বিচার প্রক্রিয়া সন্তোষজনক। প্রসঙ্গত, দেশে ধর্ষণের ঘটনা অব্যাহত হারে বাড়ার প্রেক্ষাপটে জনদাবি ওঠায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই সংশোধন গ্রহণ করে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ১৩ অক্টোবর এই অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সই করার সঙ্গে সঙ্গে তা অধ্যাদেশ হিসেবে জারি হয়ে যায়। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এই অধ্যাদেশ উপস্থাপন হবে। আইনটি বলবৎ রাখতে চাইলে পরে বিল আকারে তা আনবে সরকার। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদণ্ডের বিধান আছে। কুষ্টিয়ায় সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনাগুলোর মধ্যে ৭টি ঘটেছে ১২ অক্টোবর বা তার আগে। আর একটি আইন সংশোধন হওয়ার পরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, ১২ অক্টোবর বা তার আগে দায়ের করা মামলাগুলো পুরনো আইনে এবং পরে সংঘটিত একটি ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি নতুন আইনে বিচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।