ডুমুরিয়ায় সদ্য খননকৃত নদীর পাড় থেকে বাজার রক্ষা বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে গেছে প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয়ে এক ব্যাক্তি

0

ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি॥খুলনার ডুমুরিয়ায় সদ্য খননকৃত ভদ্রা নদীর পাড় থেকে বাজার রক্ষা বাঁধের জন্যে রাখা বিপুল পরিমান মাটি নিয়ে গেছে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর আপন ভাগ্নে পরিচয় দানকারী এক যুবলীগ নেতা। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে স্থানীয় এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা মাটি কাটা বন্ধ করে একটি স্কেভেটর আটক করে রেখেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা বাজারের আপার ভদ্রা নদীর পাড়ে। জানা গেছে, গত বছর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার ডুমুরিয়া ও যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার অভ্যন্তরে ১৯ কিলোমিটার এলাকায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আপার ভদ্রা নদী খনন করা হয়। নদী খননের মাটি নদীর দুই পাড় জুঁড়ে রাখার ফলে নদী সংলগ্ন গ্রামগুলো বন্যা, প্রকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের পানি ও বর্ষা মৌসুমে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পায়। এরই মাঝে মনিরামপুর উপজেলা যুবলীগ নেতা ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য এর আপন ভাগ্নে পরিচয় দানকারী পলাশ চক্রবর্তী নামে এক ব্যাক্তি পাউবোর মাধ্যমে মাটি ক্রয় করেছে মর্মে ভূয়া ট্রেন্ডারের কাগজ পত্র দেখিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা বাজার এলাকা থেকে স্কেভেটর (মাটি কাঁটা যন্ত্র) দিয়ে গত এক সপ্তাহে (রাতদিন) আধা কিলোমিটার জুঁড়ে নদীর পাড়ের বিপুল পরিমাণ মাটি কেটে নিয়ে যায়। মাটি পাচারের ভূয়া কাগজ পত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এমন সংবাদ এলাকায় প্রচার হলে, সোমবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনা স্থলে গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেয় এবং নদীর পাড়ে থাকা একটি স্কেভেটর আটক করে। ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মুন্না, মনিরুজ্জামান রাজু কাঁঠালতলা বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ শেখ এবং সাধারণ সম্পাদক রায়হান মোড়ল যৌথভাবে বলেন ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে যুবলীগ নেতা ও প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয়দানকারী পলাশ চক্রবর্তী ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় কতিপয় নেতার সাথে যোগসাজস কওে এই মাটি অপসারন করেছে। এই মাটি কাটার মূল হোতা মনিরামপুরের যুবলীগ নেতা ও প্রতিমন্ত্রীর কথিত ভাগ্নে পরিচয়দানকারী পলাশ চক্রবর্তী সাংবাদদিকদের বলেন, আমি প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে। ডুমুরিয়ার আটলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগটনের কয়েকজন নেতাকে জানালে তারা আমাকে মাটি কাঁটার ব্যাপারে সকল প্রকার সহযোগীতা করেছে। এই নেতাদের মধ্যে একজন শ্রমিক নেতা, একজন সাবেক ছাত্রনেতা ও যশোর থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি রয়েছেন। এছাড়া কাঠাঁলতলা বাজার কমিটির কয়েকজন নেতার সাথেও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। সত্যি কথা বলতে নদীর মাটি কাটার জন্য টেন্ডার নেয়ার চেষ্টা করছি। মামার মাধ্যমে (প্রতিমন্ত্রী) দ্রুত কাগজ পত্র পেয়ে যাবো।
এ ব্যাপারে আটলিযা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. প্রতাপ কুমার রায় বলেন, নদীর মাটি অপসারনের ফলে বন্যার পানিতে কাঠাঁলতলা বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কেশবপুর পাউবোর উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা মুন্সী আছাদুজ্জামান বলেন, আপার ভদ্রা নদীর মাটি কোনো টেন্ডার দেয়া হয়নি। স্থানীয়দের সহযোগীতায় মাটি কাঁটা বন্ধ করা হয়েছে। মাটি পাচারকারিদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য এমপি সাংবাদদিকদের বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় আমাকে অনেকেই মামা বলে ডাকে সত্য, তবে পলাশ চক্রবর্তী নামে আমার কোনো ভাগ্নে নেই। সরকারি মাটি পাচার কারীদের এলাকার মানুষ কেন আটক করলো না ? আমার নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করলে তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।
এদিকে মাটি অপসারনের প্রতিবাদে কাঠাঁলতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও ্স্থানীয় এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে কাঠাঁলতলা বাজারের কাঁচামাল পট্টিতে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাঠাঁলতলা বাজার কমিটির সভাপতি আঃ আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আটলিযা ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. প্রতাপ কুমার রায়। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইউপি সদস্য অসীম বিশ্বাস, মনিরুজ্জামান রাজু, সিরাজুল ইসলাম শেখ, আব্দুল হালিম মুন্না, কাঠাঁলতলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রায়হান মোড়ল, কেষাধ্যক্ষ মনরিুল ইসলাম মনি, জয়দেব দাশ, আব্দুর রশিদ প্রমুখ। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা ভদ্রা নদীর পাড়ে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
ক্যাপশনঃ-ডুমুরিয়ার কাঠাঁলতলা ভদ্রানদীর পাড়ে মাটি অপসারনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।