থাইল্যান্ডের দুই ব্যাংকে অনলাইন ক্যাসিনো সেলিমের অবৈধ লেনদেন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান। গত বছর ক্যাসিনো অভিযানে যখন একের পর এক রাঘববোয়ালরা আইনের জালে বন্দি হয় তখন তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর শুরু হয় সেলিমের বিরুদ্ধে নানা অনুসন্ধান। একাধিক সংস্থা অনুসন্ধান চালিয়ে বের করে সেলিমের সম্পদের সব চমকপ্রদ তথ্য। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে সম্প্রতি বেরিয়ে আসে নতুন কিছু তথ্য। বিদেশে অর্থ পাচার, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে লেনদেন, সেলিমের নামে থাকা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তথ্য উদ্‌ঘাটন করে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডের দুই ব্যাংকে ২০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ লেনদেন করেছেন সেলিম প্রধান। ব্যাংকগুলো হলো ব্যাংকক ব্যাংক ও দ্য সায়েম কমার্শিয়াল ব্যাংক। অনলাইন ক্যাসিনো থেকে আয়ের অবৈধ অর্থ এসব ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতেন সেলিম প্রধান।
সূত্র আরো জানায়, অনলাইন ক্যাসিনোর এই হোতা ১৩ কোটি টাকা পাচার করেছেন থাইল্যান্ডে। দেশে বসে ক্যাসিনো খেলে এই পরিমাণ অর্থ থাইল্যান্ডে পাচার করেন সেলিম প্রধান। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পাচারের প্রমাণ। তবে সংস্থাটি বলছে, এখনই থামছে না অনুসন্ধান। সেলিম প্রধান আরো কোন কোন দেশে অর্থ পাচার করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, দুদকের অনুসন্ধান সূত্র আরো বলছে, বাংলাদেশেই সেলিম প্রধানের রয়েছে অন্তত অর্ধশত ব্যাংক হিসাব এবং আয়কর নথি। যা এরই মধ্যে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা জব্দ করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সংস্থাটি সেলিম প্রধানের দেশে থাকা বেশ কয়েকটি স্থাবর সম্পদও জব্দ করেছে বলে জানিয়েছে।
অপরদিকে, অনলাইন ক্যাসিনোর এই ডন বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছেন। এসবের মধ্যে প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড, তমা হোম পাতায়াসহ সাতটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার মালিকানায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কী পরিমাণ অর্থ আয় হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে দুদক। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব যাচাই বাছাই শেষে শিগগিরই সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে। এর আগে গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। এরপর তাকে নিয়ে তার অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দু’টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে সেলিম প্রধানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডও দেয়া হয়। ওই বছরই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে দু’টি মামলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাতে জানা যায়, সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল’ ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন। সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি। এ ছাড়া ক্যাসিনো অভিযানে গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও। সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে। প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তিনি খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন। গত বছর র‌্যাবের গ্রেপ্তারের পর সিআইডি ও দুদক সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। ১৭ই নভেম্বর থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। সে সময় পাঁচ দিন টানা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফের কারাগারে প্রেরণ করা হয় সেলিমকে। একই বছর ২৭শে অক্টোবর ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ সেলিমের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন করার অভিযোগে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এই মামলার বাদী।