মনিরামপুরে জোড়া হত্যাকাণ্ডে ৮জন আটকের গুঞ্জন, মোটিভ উদ্ধার হয়নি

0

রূপদিয়া (যশোর) সংবাদদাতা ॥ তরতাজা দুই যুবককে নৃসংশভাবে খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত জয়ন্তা গ্রামের মানুষ। কারা কী অপরাধে তাদেরকে এভাবে হত্যা করলো সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছেন না কেউ। পুলিশ এখনও পর্যন্ত হত্যাকারী শনাক্ত ও হত্যার মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি। তবে ওইদিন বিকেলে জয়ন্তা বাজার থেকে যুবকদের একজনকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো প্রতিবেশী ইমলক। সে পলাতক থাকায় সকল সন্দেহের তীর এখন তার দিকে। অপরদিকে জোড়া হত্যার ঘটনায় নিহতের মা আঞ্জুয়ারা বেগম অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার মনিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৮ জনকে আটক করেছে বলে খবর মিলেছে। যদিও পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটকের কথা অস্বীকার করেছে।
হত্যাকা-ের শিকার আহাদ আলীর বাবা লোকমান হোসেন ওরফে নিকমল জানান, তার দুটি ছেলে। আহাদ দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট। সে মাছের চাষ করতো। গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে আহাদ জয়ন্তা বাজারে ছিলো। এ সময় তাদের প্রতিবেশী ইলিয়াস গাজীর ছেলে ইমলক কচুয়া ইউনিয়নের নিমতলীতে ফুটবল খেলা দেখার কথা বলে সেখান থেকে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি খবর পান যে, তার ছেলে মনিরামপুরের উত্তরপাড়ায় খুন হয়েছে। আহাদ ছাড়াও তাদের প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী আক্তার গাজীর ছেলে বাদলও সেখানে খুন হয়েছে বলে জানতে পারেন। কিন্তু কী কারণে আহাদ ও বাদলকে দুর্বৃত্তরা খুন করলো তা তিনি জানেন না। তবে ওই ঘটনার পর থেকে ইমলকের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার ধারণা, এই হত্যাকা-ের সাথে ইমলকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সে আটক হলে হয়তো হত্যার কারণ এবং কারা খুন করেছে তাও জানা যাবে। তিনি আরও জানান, আড়াই বছর আগে সুমাইয়া নামে একটি মেয়ের সাথে তার ছেলের বিয়ে হয়েছে। দাম্পত্য জীবনে তাদের ফারজানা নামে ৯ মাসের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। গ্রামবাসী জানান, নিহত বাদল বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। বাদলের আরও দুটি বোন রয়েছে। তবে তিনি সকলের ছোট। বাদল ইন্টারনেট সংযোগ লাইনের কাজ করতেন। পাশাপাশি নিজের মোটরসাইকেল ভাড়ায় দিতেন। কিন্তু কী কারণে কারা বাদল ও আহাদকে খুন করেছে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছেন না কেউ। তবে জোড়া হত্যার ঘটনায় গ্রামের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন। সূত্র জানায়, হত্যার শিকার বাদলও প্রায় আড়াই বছর আগে বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীর নাম ময়না বেগম। দাম্পত্য জীবনে তাদের ৭ মাস বয়সের তাসকিন নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
অপরদিকে কেউ কেউ ওইদিন বিকেলে জয়ন্তা বাজারের একটি স্থানে বাদল ও আহাদকে ক্যারাম খেলা করতে দেখেছেন। পরে তারা সেখান থেকে বাদলের মোটরসাইকেলে করে চলে যান বলে প্রচার রয়েছে। জয়ন্তার পাশের বলরামপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে ইখলাছ জানান, তিনি সন্ধ্যার দিকে চেঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থল এলাকায় যান। এ সময় সেখানে গুরুতর জখম অবস্থায় আহাদকে দেখতে পান। ফলে সাথে সাথে তাকে ভ্যানে উঠিয়ে তিনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে চাউলিয়া গেটে মারা যান আহাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, জয়ন্তা গ্রামসহ গোটা নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। মূলত স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ক্যাম্প পুলিশের রহস্যজনক নিষ্ক্রীয়তার সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনো কারণে হয়তো বাদল ও আহাদ মাদক ব্যবসায়ীদের বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে এই মাদক ব্যবসায়ী চক্র তাদের খুন করতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের সামনের রাস্তা দিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে ৬ যুবককে দ্রুত চলে যেতে দেখেছেন কেউ কেউ। কিন্তু এ বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন লোকজন।
এদিকে গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে জয়ন্তা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের স্বজনদের কেউ কেউ আহাজারি করছেন। আবার কেউ কেউ যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। শ শ নারী-পুরুষ শেষবারের মতো দেখার জন্য বাদল ও আহাদের বাড়িতে ভিড় করছেন। তাদের কারো কারো চোখে পানি চলে এসেছে। দুপুরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বাদল ও আহাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে তাদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয় একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শ শ মানুষ অংশ নেন। মনিরামপুর থানা পুলিশের ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, জোড়া হত্যার ঘটনায় শুক্রবার নিহত বাদলের মা অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে হত্যার মোটিভ উদ্ধার বা জড়িত কেউ আটক হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ঘটনার দিন রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। শুক্রবারও অভিযান চালায়। পুলিশ এ সময় বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ জনকে ধরে নিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এরা হচ্ছে-রূপদিয়ার শাকিল, চাউলিয়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে সেলিম, চান্দামিয়ার ছেলে মানিক, নরেন্দ্রপুরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুল মজিদের ছেলে মামুন প্রমুখ। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মনিরামপুর উপজেলার বারপাড়া সংলগ্ন উত্তরপাড়ায় রাস্তার পাশের মাঠে দুর্বৃত্তরা বাদল ও আহাদকে গলা কেটে হত্যা করে।