ধর্ষণ বিরোধী লংমার্চ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশব্যাপী চলমান ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিতে ঢাকা থেকে নোয়াখালী অভিমুখী লংমার্চ করছে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ সংগঠন। গতকাল সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নোয়াখালীর দিকে অগ্রসর হয় বাম ধারার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর এই মঞ্চটি। গুলিস্তান হয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া, সোনারগাঁ পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। বিকালে চান্দিনা ও কুমিল্লার টাউন হলের সামনে সমাবেশ করেন লংমার্চে অংশ নেয়া সংগঠনগুলো। রাতে লংমার্চটি ফেনীতে অবস্থান করে। শনিবার সকালে ফেনীতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে লংমার্চটি দাগনভূঁঞা, চৌমুহনী, নোয়াখালীর একলাসপুর হয়ে মাইজদীতে পৌঁচ্ছাবে। সেখানে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে লংমার্চ।  ধর্ষণ ও বিচারহীনতার জন্য সরকারকে দায়ী করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এ ধর্ষণ সংস্কৃতি ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আমাদের এ লংমার্চ। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’- এ লংমার্চে পূর্ব ঘোষিত ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে জনমত গঠন করা হবে। এ সময় ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করা, আইন প্রয়োগ ও ঘরে ঘরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সমাবেশে ধর্ষণসহ নারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হয়।
বক্তারা বলেন, গত নয় মাসে সারা দেশে ২১২টি গণধর্ষণসহ ৯৭৮টি ধর্ষণ হয়েছে। ধর্ষণের পর ৫৬ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। বিগত ২০ বছরে দেশে যত ধর্ষণ হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র তিন শতাংশের বিচার হয়েছে। মাত্র দশমিক তিন শতাংশ অপরাধীর সাজা হয়েছে। এসব ব্যর্থতার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করা উচিত।
লংমার্চের যাত্রা শুরুতে এক সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা বলেছেন, সারা দেশে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ষণ অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। এখন যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, জনগণ তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, সরকার আজকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই করে সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। সিপিবি নারী সেলের সদস্য লুনা নূর বলেন, সার্টিফিকেট হারানো বিচারহীনতার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে লড়াই-সংগ্রামকে সমন্বিত করতে, দেশবাসীর চেতনা ও অবস্থানকে সমন্বিত করতে আমাদের আহ্বান থাকবে এই লংমার্চ। এর আগে, চলতি মাসের প্রথম দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে গত ৫ই অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু করেন বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর শাহবাগে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এবার ‘লংমার্চ’ কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা থেকে নোয়াখালীর অভিমুখে যাত্রা করছেন তারা।
৯ দফা দাবি: অব্যাহত ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাহাড় সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও প্রথা বাতিল করতে হবে। নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।