কলারোয়ায় একই পারিবারের চার জনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা

0

শেখ মাসুদ হোসেন/আনিছুর রহমান ॥ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বাবা-মা ও দুই সন্তানসহ একই পরিবারের ৪ জন খুন হয়েছেন। দুর্বৃত্তরা তাদেরকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে এ হত্যাকাণ্ড। নিহতরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামের মৃত শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও মেয়ে তাসলিমা খাতুন (৬)।

নিহত শাহিনুর রহমানের ছোটভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, বাড়িতে মা ও বড় ভাইয়ের পরিবারের চারজনসহ তারা মোট ছয়জন এক বাড়িতে বসবাস করেন। বুধবার তার মা এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। তিনি (রায়হানুল) ছিলেন পাশের ঘরে। ভোররাত চারটার দিকে পাশের ঘর থেকে তিনি বাচ্চাদের গোঙানির শব্দ শুনতে পান। তাৎক্ষণিক এগিয়ে গিয়ে দেখেন ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকানো। এরপর দরজা খুলে দেখতে পান বিভৎস দৃশ্য। এর কিছুক্ষণ পর বাচ্চারাও মারা যায়। তিনি জানান, তাদের সাথে জায়গা জমি নিয়ে পাশের কিছু লোকের বিরোধ ছিল। কিন্তু কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তিনি নিশ্চিত বলতে পারেননি। কলারোয়া থানা পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে জানান, নিজেদের ঘরের মধ্যে গৃহকর্তা শাহিনুর রহমানসহ চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এদের মধ্যে শাহিনুরের পা বাঁধা ছিল। বাড়ির ছাদের চিলে কোঠার দরজা ছিল খোলা। ধারণা করা হচ্ছে, ওই চিলে কোঠার দরজা দিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘরের ঢুকে হত্যাকা- ঘটিয়েছে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। থানার এসআই রাজকিশোর বলেন, হত্যাকা-ের খবর পেয়ে ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে পুলিশের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। এটি ডাকাতি বা অন্য কোন সাধারণ ঘটনা নয়। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে পরিবারের চারজনকে হত্যা করা হয়েছে।
কলারোয়া থানা পুলিশের ওসি হারান পাল বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পুলিশকে হত্যাকা-ের খবর দেন। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পাশের এক বাড়িতে রাতে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা একই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছে। এ খবর পেয়ে তিনি (ওসি) কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। ওসি আরও জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনের লাশ দেখতে পায়। সবাইকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বাড়ি থেকে কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। তিনি জানান, পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ হত্যাকান্ডের নেপথ্যে মাদক ব্যবসা, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, নাকি পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব এমন সব বিষয় মাথায় নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে নিহতদের পরিবারের স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাহিনুর রহমান ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কলারোয়া উপজেলার দামোদরকাটী গ্রামের নূর আলীর ছেলে আকবর হোসেনের কাছ থেকে ৩৪ শতক জমি কেনেন প্রতিবেশী ওয়াজেদ আলীর ছেলে আকবর আলী। এর মধ্যে কিছু জমি নিয়ে আকবর আলীর সাথে শাহিনুর রহমানের মামলা চলছিল। এই বিরোধ ছাড়া শাহিনুরের পরিবারের সাথে কারো কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। তাদের ধারণা, এই জমির কারণে তারা খুন হতে পারেন। ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে ওই বাড়িতে জীবিত থাকা একমাত্র শিশুকন্যা চার মাস বয়সী মারিয়া সুলতানার দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। বর্তমানে শিশুটিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নাসিমা খাতুনের কাছে রাখা হয়েছে।