ঢাকায় মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৌতূহল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দু’দিনের এক তাৎপর্যপূর্ণ সফরে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই-বিগান এখন বাংলাদেশে। গতকাল বিকালে স্পেশাল ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে ঢাকা পৌঁছান তিনি। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে অতিথিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান অংশীদারিত্ব মূলক সম্পর্ক আরো বিস্তৃত ও গভীর করার আলোচনায় ঢাকা এসেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী ওই কূটনীতিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয়ের তরফে সফরটিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন- করোনাকালে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা বিগানের ঢাকা সফরটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রয়োরিটি বিবেচনায় তার সফরটি ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে বিবেচ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মার্কিন মন্ত্রীর সফরে ঢাকার ফোকাস থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করার বিষয়টি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের ভাষ্য মতে, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ চাইবে ঢাকা। জনবহুল এবং সমস্যাসঙ্কুল বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান অর্থাৎ বর্মী বর্বরতা থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে তাদের আদি নিবাস রাখাইনে দ্রুত ফেরত পাঠাতে অং সান সূচি সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর চাপ বাড়ানোর অনুরোধ জানাবে ঢাকা। মানবিক সহায়তার বদলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। মার্কিন মন্ত্রীর সফরে চলমান করোনা সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অন্তত ২-৩ বছরের জন্য তৈরি পোশাকসহ এদেশীয় পণ্যের শুল্কমুক্তি চাওয়া হবে। বাংলাদেশের কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তিসহ সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতে মার্কিন সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে জানিয়ে ঢাকার প্রতিনিধিরা মানবজমিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে মুজিব শতবর্ষে ফেরানোর বিষয়ে কথা হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার দণ্ড কার্যকর করা জরুরি বলে মনে করে সরকার। তাছাড়া মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টে একসেস পাওয়াসহ দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের ক্রুসিয়াল অনেক ইস্যুও আসবে আলোচনায়। ওই সফরে সার্বিকভাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার প্রয়াস রয়েছে বাংলাদেশের।
অন্যদিকে শুক্রবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক মিডিয়া নোটে জানানো হয়, ঢাকা সফরকালে বিগান বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে মিলিত হবেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার অংশীদারি সম্পর্কের নানা দিক ও বিভাগ নিয়ে ঢাকার বৈঠকগুলোতে আলোচনা করবেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠেয় ওই সফরে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে কথা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা দিক ও চ্যালেঞ্জ প্রশ্নে পারস্পরিক সহযোগিতা কতটা বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ রয়েছে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিশাল টিম থাকার পরও এখানে স্বতন্ত্র একটি ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস খুলছে যুক্তরাষ্ট্র। স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি মতে, বিগানের ঢাকার এনগেজমেন্টে সবার সমৃদ্ধির জন্য প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত অবাধ, মুক্ত, সমন্বিত, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে। তবে ঢাকা বলছে, আইপিএস-এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ডিফেন্স কো-অপারেশন বিশেষত অস্ত্র-সরঞ্জামাদি বিক্রির যে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের এখনো যথেষ্ট রিজারভেশন রয়েছে। এ বিষয়ে একদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, তারা আমাদের কাছে মিলিটারি ইকুইপমেন্ট বিক্রি করতে চায়। আমরা এতে খুব একটা আগ্রহী নই। কারণ আমরা মারামারি চাই না, আমরা চাই শান্তি। উল্লেখ্য, আইপিএস বিষয়ে গত মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. মার্ক টি এসপার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি মতে, একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি যৌথ প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসপারের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ভোজ-বৈঠক অনুষ্ঠিত, ব্রিফিং আজ: ঢাকা সফরের প্রথম দিনেই মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই-বিগান বাংলাদেশে তার কাউন্টার পার্ট পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাতে গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আনুষ্ঠানিক আলোচনার সমাপনীতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ওই অতিথির সম্মানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে একটি নৈশভোজ আয়োজন করে হোস্ট বাংলাদেশ। রাতে ভোজ-বৈঠকের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক হবে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। ওই বৈঠকের পর মোমেন-বিগান যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। মূলত সেই ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার বিষয়ে জানানো হবে। দুপুরে মার্কিন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে যাবেন। দুপুর ১২টায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার সৌজন্য সাক্ষাতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক হয়েছে। সেগুনবাগিচা বলছে, একাধিক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে এলেও স্টেট ডিপার্টমেন্টের নাম্বার টু বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারীর এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। তাছাড়া ওই পদে বিগানের মতো হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত আস্থাভাজন, তার কাছ থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু আদায়ের সুযোগ রয়েছে। সূত্র মতে, আজ রাজধানীর একটি হাসপাতালও পরিদর্শন করতে পারেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে পরিদর্শন শেষে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যৌথ ব্রিফিংও হতে পারে। সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, শ্রম খাতের প্রতিনিধি, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের সঙ্গেও তার একান্ত আলাপ এবং মতবিনিময়ের আয়োজন রয়েছে। সরকারি একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, প্রস্তাবিত সূচি মতে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ধানমণ্ডি-৩২ নম্বর সড়কস্থ জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারেন তিনি।