‘মৃত্যুদন্ড আইন’ তদন্তে সতর্কতা প্রয়োজন

0

অবশেষে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। গতকাল রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনটি পাস করেন। এর আগেরদিন মন্ত্রীসভা নীতিগত অনুমোদন দেন। এখন আইনের সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অর্জিত এ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না হলে অনেক নিরাপরাধীর প্রাণ যেতে পারে। অপরাধ্য মুক্ত হয়ে যেতেও পারে। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী ও বিচার সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ভাবতে হবে।
সাম্প্রতিকালে ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত অপরাধের বীভৎসতা যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তা নজিরবিহীন। বিবেকবান প্রত্যেক মানুষ এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রতিবাদ জানাতে তাই সারা দেশেই মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এসব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি তোলা হয় দাবি করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদত্যাগ। শ্লোগান দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে। এমন পরিপ্রেেিত সোমবার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এসংক্রান্ত সংশোধিত “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০২০”-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইনটি গতকাল অধ্যাদেশ আকারে জারি হয় রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরদানের পর। এতে মানুষ খুশিই হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাতে কি বন্ধ হবে এই ন্যক্কারজনক অপরাধ? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু কঠোর আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোরতা থাকতে হবে। অভিযোগ তদন্তে সততা ও দক্ষতার বিকল্প নেই।
সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের চেষ্টা, লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণসহ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এ রকম অনেক খবর আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নিলেও তাতে অপরাধ থামছে না, বরং বেড়েই চলেছে। অনেকেই মনে করেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান হওয়ায় দেশে এসিড-সন্ত্রাস কমে গেছে। তাই ধর্ষণের েেত্রও মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হলে এ অপরাধ কমে যাবে। এক্ষেত্রে অনেকের মন্তব্য, ধর্ষণজনিত হত্যার েেত্র মৃত্যুদণ্ডের বিধান এখনো আছে; কিন্তু তাতে ধর্ষণজনিত হত্যা কমেছে কি? তাঁদের মতে, এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, সেই কারণগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। যখন যে দল মতায় থাকে, কিছু চিহ্নিত দুর্বৃত্ত সেই দলের নেতাকর্মী সেজে নানা ধরনের অপরাধ করে। ধর্ষণের ঘটনায়ও তাদেরই সম্পৃক্ততা বেশি থাকে। তবে এবার প্রায সকল ঘটনায় ছাত্রলীগ যুবলীগের নাম আসছে। আছে আইন-শৃঙ্খলা রা ব্যবস্থার দুর্বলতা। অভিযোগ আছে, অনেক েেত্রই এসব দুর্বৃত্ত পুলিশের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তদন্তের দুর্বলতায় অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের এক দশকে ধর্ষণজনিত অপরাধে পাঁচ হাজার ১১৭টি মামলা হলেও বিচার হয়েছে মাত্র ৮৮১টির এবং শাস্তি হয়েছে মাত্র ১০১ জনের। প্রভাবশালীদের হস্তপে, তথ্য-প্রমাণের অভাব, স্যা প্রদানে অনীহাসহ আরো অনেক কারণেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে বিদ্যমান বিচারপ্রক্রিয়া অপরাধীদের মনে ভয় ধরানোর মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারছে না। এসব কারণে হাইকোর্ট ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত হত্যা মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা-ও ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। ফলে বিলম্বিত বিচারের জন্য প্রস্তুতকৃত ফাইলে ত্রুটি এবং বিচারহীনতা বেড়েছে। মানুষক্ষুব্ধ হয়েছে।
আমরা মনে করি, সংশোধন হওয়া এই আইনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত বীভৎসতার বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার কোন বিকল্প নেই। আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীগুলোকে দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীরা যেন কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায় সেদিকে ল্য রাখতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সেই সঙ্গে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধের ভীত শক্তিশালী করতে হবে। আমরা চাই, ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ।