ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ‘আইওয়াশ’: রিজভী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে আন্দোলন ধামাচাপা দেওয়ার কৌশল হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয় যে, আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়; তার বক্তব্য চরম ধাপ্পাবাজি। “দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেই আন্দোলনকে প্রশমিত করার জন্যই নতুন আইন তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাব ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; সঙ্গে অর্থ দণ্ড দেওয়ারও বিধান আছে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধভাবে মতায় আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় গুম, খুন, ধর্ষণ মহামারী রূপধারণ করেছে। অপরাধীদের অধিকাংশই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়। তাদের শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, উল্টা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ফাঁসির আসামিকে মা করে দেওয়া হয়। “ফলে অপরাধীরা যা খুশি তাই করার উৎসাহ পাচ্ছে। অপরাধ করে রেহাই পাওয়ার সংস্কৃতির জন্যই দেশে নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানিসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধগুলো জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, ধর্ষণ ও দুর্নীতি করলে পার পাওয়া যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করে না- এটি যেন দেশের অলিখিত বিধান হয়ে গেছে।”
রিজভী বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেখানে সরকারের আদর্শ, সেখানে আইন করে নারীর সম্ভ্রমহানির আসামিদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। “আমরা দাবি করি দলের প থেকে, যারা নারী নির্যাতনকারী এবং নারী সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি বলেই, বিদ্যমান আইনেও যে শাস্তি হয়েছে তার প্রয়োগ হয়নি বলেই আজকে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারী রূপ নিয়েছে।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে এইচএম বিপ্লব এবং নাটোরের যুব দল নেতা সাব্বির আহমেদ ওরফে গামা হত্যার আসামিসহ ৩০ জনকে রাষ্ট্রপতির আদেশে মা করে দেওয়া এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নুর বাবুকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্তৃক হত্যার ১২ বছর পরে আসাদিদের গ্রেফতার না করার ফলে অপরাধীরা ‘সমাজের প্রভু হয়ে বসে আছে’। শনিবার অনুষ্ঠিত চাঁদপুর ও জয়পুরটের কালাই পৌরসভা এবং ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের ৪৪ নং ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, “শতভাগ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হলেও সেসব এলাকায় বিএনপির এজেন্ট ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে, মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। জোর করে শুধুমাত্র নৌকার সমর্থকরাই ভোট কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। “বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু ভোট ও গণতন্ত্রের শ্লীলতাহানি করে যাচ্ছেন নিরন্তরভাবে। গতকালে নির্বাচন আবারো প্রমাণ করল- নিলর্জ্জ এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে দেশের সকল নির্বাচনের সম্ভ্রমহানি ঘটতেই থাকবে।” চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার হোসেন এবং কুমিল্লার মুরাদনগরের হীরাকান্দা গ্রামের নাজিমউদ্দিনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। রিজভী বলেন, “আমি সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমার স্বার জাল করে একটি জালিয়াতি চক্র চাঁদপুর জেলাধীন হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলা ও সংযুক্ত দুইটি পৌরসভার বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়েছে বলে মিথ্যা, বানোয়াট ও সম্পূণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে উক্ত কমিটিসমূহ দলের মহাসচিব কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এর বাইরে আর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। “আমার স্বার জাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে চিঠিটি প্রকাশ করেছে সেই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।”