ময়না তদন্তের রিপোর্ট : মনিরামপুরে গৃহবধু চুমকিকে শ্বাসরোধের পর মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়

0

এস.এম মজনুর রহমান,মনিরামপুর (যশোর)॥ মনিরামপুর পৌর শহরে শিশু সন্তানের সামনে নেশাখোর স্বামী শ্বাসরোধের পর দেওয়ালে মাথায় আঘাত করেই খুন করে স্ত্রী চুমকি চন্দ্রকে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা তরুণ চন্দ্র স্বামী মৃত্যুঞ্জয় ও তার বাবা ইজিবাইক চালক কৃঞ্চ দত্ত, মা চায়না দত্ত এবং ছোটভাই আকাশ দত্তের নামে মামলা করেন। তবে পুলিশ হত্যা মামলার পরিবর্তে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা রেকর্ড করেন। লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে চুমকিকে শ্বাসরোধের পর মাথায় আঘাত করেই হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার ময়না তদন্ত রিপোর্টটি মনিরামপুর থানায় পৌঁছেছে।
জানা যায়, পৌর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তরুণ চন্দ্রের একমাত্র মেয়ে চুমকি চন্দ্রের সাথে হাকোবা এলাকার ইজিবাইক চালক কৃঞ্চ দত্তের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মৃত্যুঞ্জয় বেকার থাকায় চুমকির অভিভাবকরা এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ফলে তারা ২০১১ সালে গোপনে বিয়ে করে। এক পর্যায়ে মৃত্যুঞ্জয় চুমকিকে নিজের(বাবার) বাড়িতে নিয়ে সংসার শুরু করে। ২০১৬ সালে তাদের একমাত্র মেয়ে সন্তান নেহার জন্ম হয়। এরই মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে। চুমকির বাবা জানান, মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মৃত্যুঞ্জয়কে যশোরে একটি কোম্পানির এসআর (সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ) পদে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। চুমকির কাকাতো ভগ্নিপতি মিহির কুমারের অভিযোগ, মৃত্যুঞ্জয় নেশা করে বাড়িতে এসে স্ত্রীর সাথে অহেতুক ঝগড়া করতো। এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এরই ধারাবাহিকতা হিসেবে ৩০ আগস্ট রাতে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে চুমকির ঝগড়া হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল তাদের একমাত্র সন্তান শিশু কন্যা নেহা দত্ত। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মৃত্যুঞ্জয় চুমকিকে মারধর করে। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী শিশু নেহা জানায়, মারধরের পর বাবা তার মায়ের গলা টিপে ধরে এবং মাথা দেওয়ালের সাথে আঘাত করে। নেহা আরও জানায়, মা অজ্ঞান হয়ে পড়লে বাবা(মৃত্যুঞ্জয়) মায়ের মুখে বালিশ চাপা দেয়। ৩১ আগস্ট সকালে পুলিশ চুমকির মরদেহ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা তরুণ চন্দ্র ৩১ আগস্ট মৃত্যুঞ্জয় ও তারা বাবা, মাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে পুলিশ হত্যা মামলার পরিবর্তে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা রেকর্ড করে। এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী নাজমুল সাকিব জানিয়েছিলেন, লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে ওই দিনই পুলিশ নিহত চুমকির স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে আটক করে। দেড় মাস পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুঞ্জয় জামিনে মুক্ত হয়। তবে চুমকির বাবা, মা মঙ্গলা চন্দ্র, ভাই অমিত চন্দ্রসহ পরিবারের লোকজনের অভিযোগ ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে মৃত্যুঞ্জয় লোকজন নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে শিশু কন্যা নেহা(হত্যাকান্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী)কে জোরপূর্বক উঠিয়ে আনার চেষ্টা করে। অবশ্য খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এদিকে নিহত চুমকির লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্টটি অবশেষে বৃহস্পতিবার মনিরামপুর থানায় পৌছেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী নাজমুল সাকিব ময়না তদন্ত রিপোর্টটি হাতে পাবার সত্যতা নিশ্চিত করেন। পুলিশ পরিদর্শক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম,তদন্তে উল্লেখ করেছেন গৃহবধূ চুমকিকে শ্বাসরোধের পর মাথায় আঘাত করেই হত্যা করা হয়। ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা মোতাবেক হত্যা মামলায় চার্জশিট দেওয়া হবে।