গণধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে কাতরাচ্ছেন সেই তরুণী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানার সিঅ্যান্ডবি মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায় আড়াই ঘণ্টা ধরে গণধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন সেই তরুণী। গুরুতর অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন তিনি। শনিবার সকালে এমন তথ্য জানিয়েছেন, চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আক্রান্ত তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, গভীর রাতে নির্জন সড়কে আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ জন মিলে তাকে গণধর্ষণ করে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, ধর্ষণের পর তরুণীর শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ অবস্থায় আছেন। গণধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতি তাকে তাড়া করছে। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন তিনি।
আমরা তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তিনি জানান, আনুমানিক ২২ বছর বয়সী তরুণী বৃহসপতিবার রাত ৯টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত ১১টার দিকে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় অটোরিকশা থেকে নেমে চকবাজারে যাওয়ার জন্য রিকশায় ওঠেন। এসময় সিএনজি অটোরিকশাযোগে কয়েকজন ওই রিকশার পিছু নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় জনৈক আনোয়ার সাহেবের চতুর্থ তলা ভবনের ডান পাশের গলিতে নিয়ে অন্তত ১০ জন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ভোর ৪টার দিকে তরুণী নিজেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যান। হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে আক্রান্ত তরুণীর অভিযোগ নেন। এরপর অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। গণধর্ষণে জড়িত জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৮) চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর ওই তরুণী জাহাঙ্গীর আলমকে চিনতো। সে তার স্বামীর পূর্বপরিচিত। বাকি সাত জনকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হল-মো. ইউসুফ (৩২), মো. রিপন (২৭), মো. সুজন (২৪), দেবু বড়ুয়া (৩১), মো. শাহেদ (২৪), রিটু দত্ত (৩০) এবং মনোয়ারা বেগম (৫৫)। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর, ইউসুফ, দেবু ও রিটু অটোরিকশা চালক। রিপন ও সুজন বখাটে এবং মনোয়ারা বেগম গৃহিণী বলে জানিয়েছেন পুলিশ। বিজয় কুমার বসাক বলেন, মনোয়ারা ও জাহাঙ্গীর মিলে মেয়েটিকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। গলিতে নিয়ে একের পর এক তাকে ধর্ষণ করে। তরুণীর বক্তব্যমতে আমরা ৮ থেকে ১০ জনের সমপৃক্ততা পেয়েছি। রাত দেড়টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত তারা মেয়েটিকে আটকে এই ঘটনা ঘটায়। সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আক্রান্ত তরুণী নিজেই বাদি হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন, এই পুলিশ কর্মকর্তা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া বলেন, আক্রান্ত নারী বিবাহিত। জাহাঙ্গীর তার স্বামীর পূর্বপরিচিত। পূর্বপরিচয়ের সূত্রেই জাহাঙ্গীর ওই নারীকে গলির ভেতরে নিয়ে যায়। যে গলিতে ঘটনা হয়েছে সেখানে মনোয়ারা থাকে। ঘটনায় জড়িতদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মনোয়ারা ধর্ষণের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আট জনকে শনিবার আদালতে নেওয়া হয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে বলে জানান।