যশোরে ৭ বাস শ্রমিককে অভিযুক্ত করে নারীর ধর্ষণ মামলা, বিভ্রান্ত পুলিশ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বাসের মধ্যে এক নারীর (২৫) ধর্ষণ অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শহরের মনিহার বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনার সূত্রপাত। ওই রাতেই নারীকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে ওই নারী নিজের নাম ঠিকানা ও ঘটনা সম্পর্কে প্রথমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ায় পুলিশকে বেকায়দায় পড়তে হয়। কিন্তু শেষমেষ পুলিশকে তিনি তার আসল পরিচয় ও ধর্ষণ ঘটনা সম্পর্কে অন্যরকম তথ্য দিয়েছেন। অপরদিকে পুলিশ ওই রাতেই ধর্ষণ ও তাকে মারধরের অভিযোগে সাতজন বাস শ্রমিককে আটক করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ওই নারী আটককৃতদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান শুক্রবার সকালে প্রথমে সাংবাদিকদের জানান, ওই নারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার শতপাড়া গ্রামে। তিনি রাজশাহী শহরের একটি কিনিকে আয়ার (পরিচ্ছন্ন কর্মী) কাজ করতেন। এর আগে তিনি রাজশাহীর বিভিন্ন বাড়িতে ঝি এর কাজ করেছেন। যশোর থেকে তিনি রাজশাহীতে এমকে পরিবহনের বাসে যাতায়াত করতেন। এ সুবাদে মনির হোসেন (২৮) নামে ওই পরিবহণের একজন হেলপারে সাথে তার সখ্য তৈরি হয়। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ওহিদুল ইসলামের ছেলে ও যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের শহিদুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া। মোবাইল ফোনে ওই নারী ও মনিরের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। গত বৃহস্পতিবার ওই নারী রাজশাহীর কিনিকের চাকরি ছেড়ে বিকেলে এমকে পরিবহনের একটি বাসে করে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত ১১টার দিকে মণিহার এলাকায় নামার পর তিনি মোবাইল ফোনে মনিরের সাথে কথা বলেন। এ সময় মনির ঢাকা রোডে বাসে কাজ করছিলেন। পরে ওই নারী সেখানে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন। এরপর হেলপার মনির ওই বাস চালিয়ে তাকে নিয়ে বকচর হুশতলায় যান। সেখানে বাসের মধ্যে মনির তাকে ধর্ষণ করেন। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ অন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার ও মনিরসহ সাতজনকে আটক করেন। মনির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। একাই এ কাজ করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে ওই নারীর সাথে কথা বললে তিনি পুলিশকে ভিন্ন কথা বলেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী তিনি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভেঙে যায় ধর্ষণ ঘটনার সময়। এক ব্যক্তি তাকে বাসের মধ্যে ধর্ষণ করেছেন। এছাড়া আরও দুজন তাকে মারধর করেন। কিন্তু তিনি এদের কাউকে চেনেন না।
অপরদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, মেয়েটি পুলিশকে প্রচন্ড ভুগিয়েছে। মেয়েটি প্রথমে নিজের নাম ও ঠিকানা যা দিয়েছিলেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। নানা কৌশলে জিজ্ঞাসার এক পর্যায়ে বিকেলে স্বীকার করেন যে, তিনি ভুল নাম ঠিকানা দিয়েছিলেন। প্রথমে যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেটি তার সাবেক স্বামীর ঠিকানা। নিজের ও বাবার নামও সঠিক দেননি। তবে তার আসল বাড়ি বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের মির্জাপুরে। এছাড়া বাসের সুপারভাইজার তাকে কোমল পানীয় পান করতে দিয়েছিলেন এ কথাও সত্য নয়।’ পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, মনির ওই নারীর পূর্ব পরিচিত বলে স্বীকার করেছেন। তবে তার অভিযোগ, মনির রাত দেড়টার দিকে বাসের ভেতর তাকে ধর্ষণ করেন। এ সময় আরও ৩ জন তাকে ধর্ষণের চেষ্টাও করেছিলেন। তিনি বাধা দেওয়ায় ওই তিনজনসহ ৬ ব্যক্তি তাকে মারধর করেন।
ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম আরও জানান, রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে মনিরসহ সাতজনকে আটক করা হয়। আটক অপর ৬ জন হচ্ছেন-যশোর শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ার বাবুর ছেলে শাহিন ওরফে জনি, সিটি কলেজপাড়ার রনজিৎ বিশ্বাসের ছেলে কৃষ্ণ বিশ্বাস, সমর সিংহের ছেলে সুভাষ সিংহ, সিটি কলেজপাড়া বউবাজার এলাকার জাভেদের ছেলে রাকিবুল ওরফে রাকিব, বারান্দীপাড়ার কাজী সামাদের ছেলে কাজী মুকুল ও বেজপাড়া কবরস্থান এলাকার গোলাম মওলার ছেলে মাহিদুল। কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর ভুক্তভোগী নারীর লিখিত এজাহার পেয়ে আটক সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা (নং-২৩) রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে শ্রমিক আটক হওয়ায় খোঁজ নিতে সন্ধ্যায় থানায় ছুটে আসেন পরিবহন শ্রমিক নেতা আজিজুল আলম মিন্টু, সেলিম রেজা মিঠু, হারুন অর রশিদ ফুলু, মিজানুর রহমান মিজু। এ সময় একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা জানান, এম কে পরিবহন বাস মালিক নেতা রমেন মন্ডলের মালিকানাধীন আর এস কোম্পানির। বাসটি (যশোর-ব-১১-০১২৪) রাতে ঢাকা রোড মোল্লাপাড়ার বিসিএমসি কলেজের পাশে আর এস কোম্পানির অফিসের সামনে রাখা হয়েছিলো। রাত পৌনে ১২টার দিকে হেলপার মনির কাউকে কোনোকিছু না বলে বাসটি সেখান থেকে নিয়ে যান। এরপর বাসটি বকচর হুশতলায় রেখে মণিহার এলাকায় এসে তার পূর্ব পরিচিত ওই নারীর সাথে হোটেলে খাওয়া দাওয়া করেন। পরে দুজনে রিকশায় করে বকচর হুশতলায় যান। রাতে তারা বাসের মধ্যে ছিলেন। অপরদিকে বাস চুরি হয়ে গেছে নৈশ প্রহরীর কাছ থেকে এমন খবর পেয়ে রাতেই আর এস কোম্পানির আরও ছয়জন পরিবহন শ্রমিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাত ২ টার দিকে তারা বকচর হুশতলায় গিয়ে বাসের সন্ধান পান। এ সময় মনির এবং ওই নারীকে বাসের মধ্যে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই ছয় শ্রমিক নারীর সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেছে কি-না তা জানা যায়নি। কিন্তু তারা সেখান থেকে ওই নারীসহ মনির এবং বাসটি নিয়ে মণিহার এলাকায় আসেন। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ এ খবর পেয়ে মনিরসহ সাতজনকে আটক এবং ওই নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।