এলাকায় মিষ্টি বিতরণ, সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মিছিল: মশিয়ালীর আলোচিত তিন জন হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন ভাই ঢাকায় গ্রেফতার

0

ফুলবাড়ীগেট (খুলনা) সংবাদদাতা ॥ খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন মশিয়ালী গ্রামে আলোচিত তিন গ্রামবাসী হত্যা মামলার প্রধান খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা শেখ জাকারিয়া, তার ভাই শেখ মিল্টন এবং রাজুকে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকার মিরপুর-১৪ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে একটি বহুতল ভবনের একটি কক্ষ থেকে তাদের আটক করে খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশ। তাদের গ্রেফতারের খবরে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে এলাকাবাসী। একই সময়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মিছিলও হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এ মামলায় আটক হল ১৩ জন। এর আগে হত্যাকান্ডের অপর মাস্টারমাইড তিন সহদরের একজন জাফরিনকে যশোর থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। এ নিয়ে এই মামলায় এজাহারভুক্ত ২২ আসামির মধ্যে প্রধানসহ ১৩ আসামি গ্রেফতার হলো। পুলিশের সূত্রে জানা যায়, মশিয়ালী গ্রামের আলোচিত তিন গ্রামবাসী হত্যা মামলার মূলহোতা জাকারিয়া এবং তার ভাই মিল্টন ঢাকার মিরপুর-১৪ নম্বর এলাকায় একটি আঠারতলা ভবনে ফাট ভাড়া নিয়ে লুকিয়ে আছে এমন তথ্য পুলিশ জানতে পারে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় মীরপুরের ওই ভবনের একটি ফাটে জাকারিয়া, মিল্টন এবং রাজুর অবস্থান। শুক্রবার সকালে ফাটটিতে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় খুলনা ডিবি পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর এনামুল হক জানিয়েছেন, মশিয়ালী ট্রিপল মার্ডারের পর শেখ জাকারিয়া, মিল্টন ও রাজু আত্মগোপন করে। মহানগর ডিবি পুলিশের একাধিক টিম তাদের গ্রেফতারে কাজ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। আসামিদের ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
এদিকে, হত্যাকান্ডের মূলহোতাদের গ্রেফতারের খবর মশিয়ালী গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবারে এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করে। বিকেলে বৃহত্তর মশিয়ালী গ্রামবাসীর উদ্যোগে ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে মিছিল বের হয়। মিছিলটি মশিয়ালী মাদ্রাসা প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে খুলনা যশোর মহাসড়কের আফিল ও ইষ্টার্ণগেটের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ইস্টার্ণগেটে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, মশিয়ালীর আলোচিত থ্রি মার্ডারের হত্যাকারীরা যেন আইনের ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে বেরিয়ে এসে শান্তি প্রিয় মশিয়ালী গ্রামবাসীকে আবারও অশান্ত করতে না পরে। সে জন্য তাদেরকে ক্রসফায়ারের দাবি জানান। তারা বলেন, জাকারিয়া-মিল্টন ও জাফরিন বাহিনীর গুলিতে ৩ জন নিহত এবং ৮/১০জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। জাকারিয়া-মিল্টন হত্যাকান্ডের পর তারা লুকিয়ে থেকে মোবাইলে অনেককে হত্যা করার এবং অনেককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। শেখ আব্দুল হামিদ সরদারের সভাপতিত্বে এবং রেজওয়ান আকুঞ্জি রাজার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন আটরা গিলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ মনিরুল ইসলাম, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কিসমত আলী, মহিলা মেম্বর শিরিনা আক্তার, ওয়ার্ড ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি হুমাউন আহম্মেদ, মেম্বর এস এম বখতিয়ার পারভেজসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখ্য মশিয়ালী গ্রামের একটি মসজিদ কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সভাপতির পদ থেকে শেখ জাকরিয়াকে পদত্যাগ করতে বলেন মিল শ্রমিক মুজিবর রহমানসহ মসজিদের মুসল্লিরা। সকলের দাবির মুখে বাধ্য হয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে সম্মত হয়ে ১৭ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর আগে ১৬ জুলাই বৃহষ্পতিবার বিকেলে জাকারিয়া ও তার ভাইয়েরা অস্ত্র দিয়ে মিল শ্রমিক মুজিবরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী এলাকাবাসীর উপর জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনী নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মশিয়ালী গ্রামের মৃত বারিক শেখের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম(৬০) একই এলাকার মো. ইউনুছ আলীর ছেলে গোলাম রসুল(৩০) এবং পরে গুলিবিদ্ধ এলাকার সাইদুল ইসলামের ছেলে আটরা মেট্রো টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ্কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম(২২) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। গুলি বর্ষণে হতাহতের ঘটনায় নিহত কলেজ ছাত্র সাইফুল ইসলামের পিতা সাইদুল ইসলাম বাদি হয়ে ১৮ জুলাই শনিবার খানজাহান আলী থানায় মামলা দায়ের করেন।