দগ্ধ শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন, চিকিৎসক স্থানান্তর করলেও ঢাকায় নেয়া হয়নি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগুনে পুড়ে যাওয়া যশোরের ঝিকরগাছার বাকুড়া গ্রামের শিশু আল আমিনের অবস্থা সংকটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চিকিৎসকরা ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে নেওয়া হয়নি বলে স্বজনরা জানিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেই তার চিকিৎসা চলছে। অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশু আল আমিনকে (৫) পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বাকুড়া গ্রামে বুধবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য শিশুটির নানি হত্যাপ্রচেষ্টার সাথে তার বাবাকে দায়ী করলেও এ নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পুলিশও বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাশফিকুর রহমান বলেন, শিশুটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে বাঁচাতে হলে দ্রুত ঢাকা কিম্বা খুলনায় নিয়ে যেতে হবে। এজন্য শুক্রবার সকালে তাকে ঢাকায় বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। যেকারণে বাধ্য হয়ে তাকে আমরা চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালে শিশুটির নানি সাকিরন নেছা বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা বারবার আমাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলছেন। কিন্তু আমরা গরীব, কী করে নিয়ে যাবো। ঢাকায় চিকিৎসা করতে হলে তো অনেক টাকার দরকার। সে টাকাতো আমাদের কাছে নেই।
হাসপাতালের কয়েকজন সেবিকা বলেন, শিশুটিকে আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছি। হাসপাতালে যেসব ওষুধ আছে তা দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। কিছু ওষুধ বাইরে থেকে আনার কথা বলা হলেও তা আনছে না তার নানি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগী কল্যাণ সমিতি তার চিকিৎসার খরচ বহন করছে।
শিশুটির নানি সাকিরন নেছার ভাষ্যমতে, একই গ্রামের প্রতিবেশী দাউদ সরদারের ধর্ষণের শিকার হয়ে শিশুটির জন্ম হয়। এরপর আদালতে মামলা হলে ডিএনএ পরীায় দাউদ সরদার শিশুটির বাবা নিশ্চিত হন। পরবর্তীতে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেই। মেয়ে অন্যত্র থাকায় শিশুটি তার কাছে থাকে। বুধবার রাত একটার দিকে আল আমিনের চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি বিছানার একপাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে আল আমিনকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। দাউদ সরদারই শিশুটিকে হত্যার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তবে দাউদ সরদারের পরিবারের লোকজনের দাবি এটি পরিকল্পিত ঘটনা। তাদের ফাঁসাতে এমন কাজ করেছে কেউ। দাউদ সরদারের মেয়ে বলেন, শিশুটির নানি দীর্ঘদিন ধরে তাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা আদায় করে আসছেন। এর আগে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে এবং শিশুটির খরচের জন্য ৫ লাখ টাকাও নিয়েছেন। আমরা শিশুটিকে আমাদের কাছে রাখতে চাইলে নানি শাকিরন রাজি হননি। তিনি আরও ১০ লাখ টাকা চেয়েছেন। সামনে মামলার রায় হবে। আর আগুন দিয়ে শিশুটিকে পোড়ানোর ঘটনায় আমার বাবা যাতে ফেঁসে যান সেজন্য এ কাজ করা হয়েছে। নৃশংস এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছেও রহস্যজনক মনে হচ্ছে বলে জানান ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক। শুক্রবার রাতে তিনি বলেন, আমার কাছে পুরোটাই রহস্যজনক মনে হচ্ছে। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। এ ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করলো না কেনো সেটিও রহস্যজনক। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কোনো দুষ্ট চক্র এ কাজ করেছে কি-না সেটি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ মামলা না করলেও প্রয়োজনে আমরাই ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে বাঁকড়া ফাঁড়ি পুলিশকে ঘটনা তদন্ত করে দেখার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে।