মঞ্জু সরকারের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার গল্প

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা॥ সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মঞ্জু সরকার। স্বামী-সংসার সামলেও এই শিক্ষক ২০২০ সালে জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারী শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল চিন্তায় পাঠদানকে এই গৌরব অর্জনের নেপথ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এই শিক্ষক। মঞ্জু সরকার সাতক্ষীরা শহরের মধুমল্লারডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা। স্বামী কান্তি লাল সরকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। একমাত্র ছেলে হিমেল সরকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন।
২০০৩ সালে ৪ জুন শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেন মঞ্জু সরকার। ২০১০ সাল থেকে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। শিক্ষক দিবসে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন তার শিক্ষক হওয়া ও আদর্শ নারী শিক্ষক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প। শুরুতেই শিক্ষক পেশায় আসার কারণ হিসেবে মঞ্জু সরকার বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাকতা একটি সেবামূলক পেশা। এই পেশার মাধ্যমে একটি সচেতন জাতি গঠনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ আছে। এই কারণে আমার এই পেশায় আসা। ছোটবেলার স্বপ্ন আর স্বামীর উৎসাহ শিক্ষক হওয়ায় অনুপ্রাণিত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তখন থেকে শিক্ষক পেশাটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তারপর বিবাহিত ও সংসার জীবনে প্রবেশের পর স্বামী আমার ভালোলাগাকে প্রাধান্য দেয়। স্বামী আরও বেশি উৎসাহ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছে। অবশেষে আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
অন্য পেশার সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অভিনবত্ব রয়েছে উল্লেখ করে মঞ্জু সরকার বলেন, শিক্ষাকতা পেশা থেকে অন্য পেশার উপযোগী মানুষ তৈরি করা গেলেও অন্য পেশা শিক্ষক সৃষ্টি করতে পারে না। আমার মতে এটাই এই মহান পেশার অভিনবত্ব। সাতক্ষীরা জেলার শ্রেষ্ঠ নারী শিক্ষক হওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে মঞ্জু সরকার বলেন, ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল চিন্তা চেতনায় পাঠদান করাসহ আমার ওপর অর্পিত সরকারি দায়িত্ব যথাযথ পালন করছি। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক ও সহকর্মীদের সহায়তায় নিত্য নতুন উপযোগী ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন করছি। সবকিছু জরিপ ও যাচাই-বাছাই শেষে ২০২০ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ নারী শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি, সম্মাননা পেয়েছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল আধেয় ও উপকরণ তৈরি এবং সংরক্ষন, শিশু জরিপ, শিশু ভর্তি ও শিশুর পোশাক ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ে অভিভাবককে সচেতন করা, অনলাইনে উপবৃত্তির চাহিদা প্রদান করা, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ই-স্কুল ও ই-স্কুল ব্যবস্থাপনা প্রদান করা, বিদ্যালয়ে ফুলের বাগান পরিচর্যা করা, শিশুদের বাড়ি যাওয়া ও মায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করা, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করা, অভিভাবকদের বুঝিয়ে শিশুদের সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন করে স্কুল ব্যাংকিং চালু করা, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটির পর বিশেষ ক্লাস নেয়া, দৈনিক সমাবেশ করা ও নীতিবাক্য শেখানো, বিদ্যালয়ে পত্রিকা কর্নার স্থাপন করা, এসো পত্রিকা পড়ি, শিশুদের সৎ ও নৈতিক চরিত্র গঠনে সততা স্টোর পরিচালনা করা, বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ পরিচালনা করা, নিজের যা প্রয়োজন নয় তা অন্যকে দেয়ার মানসিকতা তৈরিতে মানবতার দেয়াল কর্নার তৈরি, সবুজ সাতক্ষীরা গঠনে ক্লিন সাতক্ষীরা গ্রীন সাতক্ষীরা বাস্তবায়নে কর্মসূচি গ্রহণ, স্টুডেন্ট কাউন্সিল ও ক্ষুদে ডাক্তার টিম দ্বারা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম করা, নিয়মমাফিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া ও শিক্ষাদান। এসব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
শিক্ষক মঞ্জু সরকার বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকর্মীদের সহায়তায় ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে শ্রেষ্ঠ নারী শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হয়েছি। আমি মনে করি, এসব ব্যতিক্রমী কাজের জন্যই আমি শ্রেষ্ঠ নারী শিক্ষক। সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, জেলায় প্রতিবছরই প্রধান শিক্ষক (নারী ও পুরুষ) ও সহকারী শিক্ষক (নারী ও পুরুষ) মোট চারজনকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০২০ সালে পলাশপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মঞ্জু সরকার শ্রেষ্ঠ নারী সহকারী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।