যশোর সদর উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন : প্রচারের শুরুতেই বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলা ভাংচুর, সাংবাদিকসহ আহত ১০

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের প্রচারনার শুরুতে বিএনপি প্রার্থী নূর-উন-নবীর ওপর ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। গতকাল সোমবার বিএনপি প্রার্থী নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের রূপদিয়া বাজারে প্রচারণায় গেলে স্থানীয় যুবলীগ সন্ত্রাসী রাজু আহমেদের নেতৃত্বে এক দল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসহকারে হামলা চালায়। প্রার্থী নূর-উন-নবীকে উদ্দেশ্য করে দফায় দফায় চালানো এই হামলায় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে জখম হন কচুয়া ইউনিয়নের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি ডাঃ মশিয়ার রহমান, জেলা যুবদলের নির্বাহী সদস্য আসাদুজ্জামানসহ প্রার্থীর ছেলে খুরশিদ আলম বাবু। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক আলমগীর করিমসহ অন্তত হন ১০ জন। ভাঙচুর করা হয় প্রার্থীর দুটি মাইক্রোবাস এবং রূপদিয়া বাজারের একটি হোটেল।


ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি প্রার্থী নূর-উন-নবী গতকাল সোমবার সকালে দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের রূপদিয়া বাজারে যান। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি হোটেলে বসেন। এ সময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী রাজু আহমেদের নেতৃত্বে সোহেল, সাগর, পিন্টু, ইশারত, ওহিদুলসহ একদল দুর্বৃত্ত দেশি অস্ত্রসহকারে প্রার্থীর ওপর হামলা চালায়। এ সময় প্রার্থীকে রক্ষা করতে গিয়ে পাশের কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি ডাঃ মসিয়ার রহমান সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম হন। তাকে তাৎক্ষণিক যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হন জেলা যুবদলের নির্বাহী সদস্য আসাদুজ্জামান, পার্থীর ছেলে খুরশিদ আলম বাবু, স্থানীয় সাংবাদিক আলমগীর কবিরসহ ৮/১০ জন নেতাকর্মী। ভাঙচুর করা হয় আহত সাংবাদিকের ক্যামেরা এবং রূপদিয়া বাজারের হোটেলটি। ঘটনার সময় রূপদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির বেশ কয়েকজন সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র তান্ডবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে নিরাপদে চলে যান।


এদিকে, রূপদিয়া বাজারে এ ঘটনার পর বিএনপি প্রার্থী দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের নিয়ে পাশের ইউনিয়ন কচুয়ায় গণসংযোগের উদ্দেশ্যে যান। তারা কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছাতেই আবার সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালাতে উদ্যত হয়। ভৈরব নদের সেতু পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা পৌঁছালে স্থানীয়দের বাধায় তারা নিবৃত্ত হয়। তবে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে চলে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিএনপি প্রার্থীর কাছে যান নরেন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মর্ত্তুজা। তিনি প্রার্থীর কাছে শাসক দলের সন্ত্রাসীদের এমন তান্ডবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই। এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার।’ রাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী আমাদের চলতে হয় এমন পরিস্থিতিতে আপনারা প্রচারণা চালালে আমি আপনাদের জন্যে কিছুই করতে পারবো না। আপনারা নিরাপদে স্থান ত্যাগ করেন। এর জন্য আমি সহায়তা করছি।’


এদিকে, সন্ত্রাসীদের এমন তাণ্ডবের বিষয়ে এই প্রতিবেদক এই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। হামলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোতয়ালী মডেল থানায় জানানোর পর ঘটনাস্থলে যান এসআই ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম। তবে তিনিও নিরাপত্তা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে প্রার্থীকে ওই স্থানে প্রচারণা না চালানোর অনুরোধ জানান। এসআই ফজলুর রহমান বলেন, আপনাকে নিরাপদে এই স্থান থেকে পার করে দিচ্ছি। তার কথামত বিএনপি প্রার্থী নূর -উন-নবী দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে যশোর শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রূপদিয়া বাজারে পৌঁছালে সেই সন্ত্রাসীরা আবারও জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা চালানোর জন্য ছুটে আসে। তবে পুলিশি বাধায় তারা হামলা করতে ব্যর্থ হয়।

এদিকে, নাম বলতে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ী জানান, সন্ত্রাসী রাজু আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে। চাঁদা না দেয়ায় তার হাতে অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঘটনার সময় প্রার্থীর সাথে ছিলেন- সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক আব্দার হোসেন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওলিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল, কচুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন ইরান, সাধারণ সম্পাদক একরাম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, জেলা যুবদলের সহসভাপতি ইদ্রিস আলী, আব্দুর রাজ্জাক, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তানভীর রায়হান তুহিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এদিকে সন্ধ্যায় বাহাদুরপুর এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের প্রচার মাইক ও ইজিবাইক ভাঙচুর করে এবং চালককে মারপিট করে।