পুলিশের আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত পথসভা ; মাসহ আরাফাতকে আটকের কথা স্বীকার, সাড়ে ৬ লাখ টাকা ও চাকু উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে ব্যাংকের সামনে থেকে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে অন্যতম অভিযুক্ত আরাফাত রাজু ও তার মা মেহেরুন নেছাকে আটকের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। তাদের দুজনের কাছ থেকে মোট সাড়ে ৬ লাখ টাকা উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া যে চাকু দিয়ে এনামুল হককে আঘাত করা হয়েছিলো সেটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আরাফাত রাজু। গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে ছিনতাইয়ের স্থান যশোর শহরের এম কে রোডস্থ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক এক পথসভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার এ সময় বলেন, অনেক গডফাদার তাদের (ছিনতাইকারীদের) আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারা রক্ষা করতে পারেননি। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশ, কোতয়ালি পুলিশ ও র‌্যাব সমন্বিতভাবে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িতদের আটকে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ সুপার জানান, সোমবার ভোরে রাজধানী ঢাকার আদাবরের শান্তিরবিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী আরাফাত রাজুকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর আগে ৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মা মেহেরুন নেছা বরিশাল থেকে মাগুরার আড়পাড়ায় এসে ছেলের রেখে দেয়া ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, পরে আরাফাত রাজুর স্বীকারোক্তিতে সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে ভগ্নিপতি সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়। ওই চাকু দিয়ে এনামুল হককে আঘাত করা হয়েছিলো। তিনি আরও বলেন, টাকা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত সোহেল শেখ নামে আরেক ছিনতাইকারীকে র‌্যাব সদস্যরা আটক করেছে। নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা ফেরিঘাটের বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে আটক করা হয়।


পুলিশ সুপার বলেন, তারা তদন্তে টাকা ছিনতাইয়ের সাথে ৮ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাব ৭ জনকে আটক করতে পেরেছে। বাকি রয়েছে জামাই রাজ্জাক। তাকেও আটকের চেষ্টা চলছে। দুই দফা অভিযানে প্রায় ৯ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। আরও টাকা উদ্ধার হবে। এ জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও তাদের যারা গডফাদার আছেন তাদেরকে বলছি, এসব (অপরাধমূলক কর্মকান্ড) কাজ থেকে সরে আসুন। নতুবা যেখানে থাকেন না কেন সেখান থেকে আমরা ধরে আনবো। ছিনতাইকারীদের গডফাদাররা শনাক্ত হয়েছে কি-না সাংবাদিদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, তাদের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে ইতোমধ্যে এসব গডফাদার সতর্ক হওয়ার বার্তাও পেয়ে গেছেন।
শ শ মানুষের উপস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক ওই পথসভায় আটক আরাফাত রাজু ও সোহেল শেখকেও উপস্থিত করা হয়েছিলো। এ সময় তারা কারা ও কোথায় অবস্থান এবং কীভাবে টাকা ছিনতাই করেছিলো তার বর্ণনা দেয়। পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সালাউদ্দিন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল গোলাম রব্বানী, কোতয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান, ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিকেলে আটক আরাফাত রাজু ও সোহেল শেখকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এদের মধ্যে আরাফাত রাজু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইন তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আটক সোহেল শেখের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলো। শুনানিকালে আটক সোহেল শেখ নিজেই তাকে ২ দিনের রিমান্ডে দেওয়ার কথা জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এদিকে বিকেলের পর আরাফাত রাজুর মা মেহেরুন নেছাকে আসামি হিসেবে আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে ডিবি পুলিশ। এ সময় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে আরাফাত রাজু আদালতকে জানিয়েছে যে, টাকা ছিনতাই মিশনে সেসহ সোহেল শেখ, শুভ ও ভাগ্নে বিল্লাল অংশ নিয়েছিলো। জামাই রাজ্জাক তাদেরকে টাকা ছিনতাইয়ের জন্য ডেকে এনেছিলো। একটি সূত্র জানায়, পূর্ব বারান্দীপাড়া খালপাড়ে কালুর বাড়িতে টাকা ভাগাভাগির দায়িত্ব পালন করেছিলো টিপু। এ সময় জামাই রাজ্জাককে ৬ লাখ টাকা দেয়া হয়। আটক সোহেল শেখ ১ লাখ টাকা ভাগ পেয়েছিলো। টাকা ছিনতাইয়ের পর সে যশোর থেকে পালিয়ে বরিশালে এক বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখানে বন্ধুর কাছে ওই ১ লাখ টাকা সে রেখে দিয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, সোহেল শেখকে র‌্যাব আটক করলেও অপর ৬জনকে আটকে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ডিবি পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশ ও এসআই মফিজুল ইসলাম ঢাকার আদাবরের শান্তিরবিল এলাকার ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আরাফাত রাজুকে আটক করেন। ওই বাড়িতে আরাফাত রাজু ছাড়াও তার স্ত্রী ছিলো। এ সময় আরাফাত রাজুর স্ত্রী তার কাছে রেখে দেয়া ১ লাখ টাকা ডিবি পুলিশকে ফিরিয়ে দেয়। সূত্র জানায়, আরাফাত রাজুর মা মেহেরুন নেছা ছেলের দেয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে বরিশালে যান। সেখানে তিনি তার মামাতোভাইয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ডিবি পুলিশ অবস্থান শনাক্তের পর তার সাথে যোগাযোগ করে। পরে মেহেরুন নেছা ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বরিশাল থেকে মাগুরার আড়পাড়ায় এলে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ। সূত্র আরও জানায়, ডিবি পুলিশ যে ব্যাগটি উদ্ধার করেছে সেটি বোমা ও চাকু বহনের কাজে ব্যবহার করেছিলো আরাফাত রাজু। কিন্তু টাকার ব্যাগটি পুড়িয়ে ফেলেছে সে। কাশিমপুরে ভগ্নিপতির বাড়িতে গিয়ে সে টাকার ব্যাগ পুড়িয়ে ফেলে। আটকের পর ডিবি পুলিশ তাকে কাশিমপুরে নিয়ে গেলে সে ব্যাগ পোড়ানোর স্থানটি তাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে।