এ বীভৎসতার শেষ কোথায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বীভৎস নারী নির্যাতনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর আটক হয়েছেন চারজন। মূল নির্যাতনকারী দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) গতকাল অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করেছে র‌্যাব। পরে দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদলকে (২০) কামরাঙ্গীর চর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে রবিবার পুলিশ নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করে রহমত উল্লাহ (৪০) ও আবদুর রহিমকে (২০)। নৃশংস এ ঘটনায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে সারা দেশে। প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে ঢাকার শাহবাগ, প্রেস ক্লাব ও উত্তরায়।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে কুপ্রস্তাব ও মাদক বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর স্বামীকে বেঁধে রেখে মধ্যবয়সী এক নারীকে নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে বখাটে যুবকরা। ঘটনার এক মাস পর এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে রবিবার রাতে দুটি মামলা হয়। নয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতনে একটি মামলা ও ভিকটিমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার অপরাধে পর্নোগ্রাফি আইনে আরেকটি মামলা হয় বেগমগঞ্জ মডেল থানায়। মামলা দুটি দায়ের করেন নির্যাতিতা ওই নারী।
জানা যায়, উপজেলার এখলাসপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার মেয়ের সঙ্গে স্বামীর মনোমালিন্য চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এ সুযোগে স্থানীয় বাদল ও মাদকসম্রাট দেলোয়ারের নেতৃত্বে এলাকার রহিম, কালাম ও তাদের সহযোগীরা ওই মহিলাকে কুপ্রস্তাব ও মাদক বিক্রিতে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন। তিনি রাজি না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই গৃহবধূর স্বামী শ্বশুরবাড়ি আসেন। এ সময় স্বামীসহ গৃহবধূকে অপবাদ দিয়ে আটক করে বিবস্ত্র করে ব্যাপক নির্যাতন চালান আসামিরা। তারা স্বামীকে বেঁধে রেখে অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেন। এ সময় তার বিবস্ত্র নির্যাতনের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে রাখেন তারা। তার পর থেকে পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেন। ওই নারী আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে দিন কাটান। ঘটনার ৩২ দিন পর ৪ অক্টোবর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবস্ত্র নির্যাতনের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। দিনভর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। নির্যাতনকারীরা সরকারি দলের হওয়ায় ভয়ে কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও আসামি গ্রেফতারের পর মুখ খোলেন অনেকে।
রবিবার দায়ের হওয়া মামলার আসামি হলেন- মধ্যম এখলাসপুরের রহমত উল্লাহর ছেলে বাদল (২২), জয়কৃষ্ণপুরের শেখ আহমদের ছেলে রহিম (২০), খালপাড় এলাকার জুলফিকার আলীর ছেলে আবদুল কালাম (২২) মধ্যম এখলাসপুরের আমিন উল্লাহর ছেলে ইসরাফিল হোসেন (২০), পূর্ব এখলাসপুরের লোকমান মিয়ার ছেলে সাজু (২১), নেয়ামত উল্লাহর ছেলে শামসুদ্দিন সুমন (৩৯), খালপাড়ের আবদুল জলিলের ছেলে আবদুর রব ওরফে চৌধুরী (৪৮), মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে আরিফ (১৮) ও মৃত আবদুল করিমের ছেলে রহমত উল্লাহ (৪১)। এদিকে ঘটনার প্রধান হোতা যুবলীগ নেতা দেলোয়ারের নাম নেই মামলার এজাহারে। দেলোয়ারের নাম না থাকায় এলাকার সর্বত্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার রাতে অভিযুক্তরা তার ঘরের ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ তার স্বামীকে মারধর করে বেঁধে ফেলেন। তাকে পাশের রুমে নিয়ে টর্চলাইট জ্বালিয়ে তার পরনের কাপড় খুলে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। বাদীকে উলঙ্গ করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন এবং শরীরের লজ্জাস্থানে হাত দেন। পরে অভিযুক্তরা মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ রবিবার রাত ১১টায় এলাকার মোহর আলী মুন্সিবাড়ির মৃত আবদুর রহিমের ছেলে রহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করে। এর আগে বিকালে খালপাড় এলাকার হারাধন ভুইয়াবাড়ির শেখ আহমদ দুলালের ছেলে আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করা হয়। রহিম ও রহমতকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তিন দিন মঞ্জুর করেছে বলে বেগমগঞ্জ থানাসূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, এজাহারে নাম না থাকলেও নির্যাতনের মূল হোতা দেলোয়ার হোসেনকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আটক করে র‌্যাব-১১। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, গোয়েন্দা নজরদারি ও গোপন অনুসন্ধানের মাধ্যমে র‌্যাব-১১-এর বিশেষ দল রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় দেলোয়ারের কাছ থেকে ১টি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকার কামরাঙ্গীর চর ফাঁড়ির গলি এলাকা থেকে প্রধান আসামি নূর হোসেন বাদলকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ‘দেলোয়ার বাহিনী’ ওই এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত এবং দেলোয়ার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে এলাকার লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুটি হত্যা মামলা আছে।
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বর্বর নির্যাতন : ভিকটিম বলেন, ‘আমাকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় ও পরে দেলোয়ার আমাকে ইয়াবা ব্যবসা করতে বলে। আমি রাজি না হওয়ায় আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয় এবং ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমার চিৎকার আশপাশের সবাই শুনলেও কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেনি। আসামিরা কাউকে কিছু জানালে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। তারা আমাকে হুমকি দিয়ে ভিটেবাড়ি-ছাড়া করে।’ আসামিরা চলে যাওয়ার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি জেলা শহর মাইজদীতে বোনের বাড়ি আশ্রয় নেন। সেখানে থাকা অবস্থায় আসামিরা মুঠোফোনে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বাবা জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় এত দিন ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস হয়নি তাদের। তিনি সুষ্ঠু বিচার চান। নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে এবং নির্যাতিতা পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের পাঁচটি ইউনিট মাঠে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
আদিম বর্বরতাকেও হার মানায় : মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান : বেগমগঞ্জের ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এনডিসি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ঘটনা আদিম যুগের বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্যাতনকারীরা পশুর চেয়েও অধম। এমন জঘন্য ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। নারীর মানবাধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে নারীর প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। নির্যাতনকারী যে-ই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ঘটনায় আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিবাদের স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ : ধর্ষক ও নির্যাতনকারীদের বিচার দাবিতে দিনভর উত্তাল ছিল রাজধানীর শাহবাগ। নোয়াখালীতে গৃহবধূ নির্যাতনসহ সারা দেশে সংঘটিত ধর্ষণ-নিপীড়নের বিচার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সম্মিলিত ছাত্র-জনতা। গতকাল বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও প্রগতিশীল ছাত্রজোট শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয়। সকাল থেকেই শাহবাগ মোড় ও জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হতে থাকে ছাত্র-জনতা। মানববন্ধন, বিক্ষোভ আর মিছিলের পর দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় প্রতিবাদ কর্মসূচি। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ধর্ষকদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘মানুষ তুমি চুপ কেন?’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বেগমগঞ্জ নারীকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতন। সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূকে ধর্ষণসহ সাম্প্রতিক প্রতিটি ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা। গতকাল বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন। এর একটু পর শাহবাগ মোড়ে ‘বন্দী সময়ের চিৎকার’ ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শুরু করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এতে প্রধান সড়কগুলো আটকে যায়। ‘এই ধর্ষক রাষ্ট্র, এই ধর্ষক সরকার চাই না’, ‘যে সরকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ পালে সেই সরকার চাই না’- এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভের পাশাপাশি চলতে থাকে ধর্ষণবিরোধী পারফরম্যান্স আর্ট, কবিতা আবৃত্তি ও মূকাভিনয়। অবস্থান কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীসহ অন্য নেতারা। একই সঙ্গে শিশুদেরও প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। এক কন্যাশিশুকে ‘আমি কন্যা ইহাই আমার পাপ’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়। ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশে শাহবাগে গণপরিবহন চলাচলে বিঘ্ন হলেও তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়নি। তবে গণসমাবেশের আশপাশে পোশাকে, সাদা পোশাকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকাল ৪টার দিকে লাঠিমিছিলের মধ্য দিয়ে শাহবাগের গণজমায়েত সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শাহবাগে আবারও গণজমায়েত ও ধর্ষণের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে গণভবন অভিমুখে পতাকামিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তরা অভিযোগ করেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের দলীয় কর্মীরা এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। গত দুই মাসে সরকারদলীয় কর্মীরা কমপক্ষে ১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিচার না হওয়ায় তারা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। এসব ঘটনায় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। গতকাল বেলা ২টার দিকে শাহবাগ থানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগানের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান সাত নারী। তাদের হাতে ‘বাঃ, পুলিশ চমৎকার ধর্ষকদের পাহারাদার, এখানে ধর্ষণের বিচার করা হয় না, এ প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় চালিত’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এখানে প্রায় আধা ঘণ্টা প্রতিবাদ জানানোর পর তারা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশে নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্য নাসরীন আক্তার বলেন, বেগমগঞ্জের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এভাবে নারীর ওপর নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসন ও দুষ্কৃতকারীদের জবাবদিহি নেই বলেই এমন ঘটনা দেশে বারবার ঘটছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী। এরপরে ডাকসুর সদ্যসাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে একটি গণপদযাত্রা বের হয়। পদযাত্রাটি শাহবাগ থেকে টিএসসি-শহীদ মিনার-পলাশী-নীলক্ষেত-কাঁটাবন হয়ে পুনরায় শাহবাগ এসে শেষ হয়। এ সময় আজ মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে ছবি পোস্ট করে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। পদযাত্রা শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভিপি নূর বলেন, আমাদের দুর্বলতার কারণেই ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক দুর্নীতিবাজ এ সরকার এখনো ক্ষমতায় টিকে আছে। এখন আর সময় নেই, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন ঐক্যবদ্ধ লড়াই প্রয়োজন এ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। ৩১ ডিসেম্বর নোয়াখালীতে চার সন্তানের জননী এক নারীকে ধর্ষণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মশিউর রহমান ও তারেক রহমান। নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও সব ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি দাবিতে ইসলামী যুব আন্দোলন ঢাকা মহানগরী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছে। নগর দক্ষিণ সভাপতি মুফতি মানসুর আহমাদ সাকীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন বলেন, এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষকদের মূলোৎপাটন করার এখনই সময়।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ : নোয়াখালীসহ সারা দেশে সংঘটিত ধর্ষণের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজু ভাস্কর্যে এক সমাবেশে মিলিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মো. রাকিবুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমানসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২ শতাধিক নেতা-কর্মী। সমাবেশে ফজলুর রহমান খোকন বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা যদি পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে প্রতিটি ঘটনায় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। আজকে যদি ধর্ষণের সঠিক বিচার করা হয় তাহলে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে।
লাগাতার অবস্থান ঢাবি শিক্ষার্থীদের : এদিকে ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড এবং তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকরের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। গতকাল তারা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হাতে ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্র সংসদের সদ্যসাবেক জিএস ইমাম হাসান, সংগীত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিবুল ইসলাম সুজন, একই বর্ষের সোয়েব আহাম্মেদ সাজিব, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজের লিমন সিকদার, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের মেহেদী হাসান এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের মাসুম বিল্লাহ।
সারা দেশে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ : বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজসহ সারা দেশে নারী ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম তপু। দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে জেলা কওমি মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র ও সচেতন যুবকরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন। মানববন্ধনে মুহাম্মদ ইউসুফ ভূইয়া সভাপতিত্ব করেন। ধর্ষকদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জেলা শাখা। গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে শহীদ রফিক সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে নেত্রকোনা জেলা ছাত্র ইউনিয়ন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের ফটকে চলা ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতের জোর দাবি জানান। পরে জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণের পাশাপাশি নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে এলাকাভিত্তিক সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখার নির্দেশ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। দেশব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরামের আহ্বানে ‘নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বন্ধে সবাই এগিয়ে আসুন’ এ স্লোগান সামনে রেখে ফরিদপুর জজ কোর্ট চত্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ পর্ষদ, রাসিন-ফরিদপুর নেটওয়ার্ক এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।