মিলিটারিজম বনাম ‘ওড টু জয়’

0
জি. মুনীর
মিলিটারিজম হচ্ছে কোনো একটি দেশের সরকারের বা জনগোষ্ঠীর এক ধরনের বিশ্বাস বা প্রত্যাশার নাম। মিলিটারিজমে বিশ্বাসীরা মনে করে- একটি রাষ্ট্রকে শক্তিধর সামরিক সক্ষমতা ধারণ করতে হবে। আর এই সামরিক শক্তি আগ্রাসীভাবে ব্যবহার করতে হবে জাতীয় স্বার্থ, ভাবমর্যাদা ও শৌর্যবীর্য সম্প্রসারিত করার কাজে। সেই সাথে এরা মনে করে, একটি দেশের প্রশাসনে সেনাবাহিনীর প্রাধান্য থাকা উচিত। ইতিহাস জুড়ে এই মিলিটারিজম একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান ছিল সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী দেশগুলোর নীতি-আদর্শে। এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে আসিরীয় সাম্রাজ্য, গ্রিক নগররাষ্ট্র স্পার্টা, প্রুশিয়া কিংডম, বিভিন্ন রাজতন্ত্র, ওসমানীয় সাম্রাজ্য, জাপান সাম্রাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, মুসোলিনির শাসনামলের ইতালি সাম্রাজ্য, জার্মান সাম্রাজ্য ও নেপোলিয়ানের শাসনাধীন প্রথম ফরাসি সাম্রাজ্যে। এরই মধ্যে অনেক সাম্রাজ্যের অবসান ঘটেছে। তবে এখনো আমাদের পৃথিবীটা সেই মিলিটারিজমের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আধুনিক বিশ্বের অনেক দেশ সেই অতীতের মিলিটারিজমকে আঁকড়ে ধরে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা সন্ত্রাস দমনের নামে মিলিটারিজমের ব্যাপক সম্পসারণ ঘটিয়ে চলেছে। এই সম্প্রসারণের ব্যাপকতা আঁচ করা যায়, ‘স্মিথসোনিয়ান’ ম্যাগাজিনের ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন পাঠে। সে প্রতিবেদনে এরা একটি ইনফোগ্রাফ মানচিত্র প্রকাশ করে। এই মানচিত্রে দেখানো হয় ইউএস আর্মি বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে নানাধর্মী যুদ্ধ জারি রেখেছে। এই মানচিত্র অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী এখন বিশ্বের ৪০ শতাংশ দেশে তাদের সামরিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
নাইন-ইলেভেনের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২০০১ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী ব্রিটিশ, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মান ও অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন নিয়ে আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে তালেবানবিরোধী যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সূচিত ওই সন্ত্রাসী তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চলছে বিগত ১৭ বছর ধরে। সত্যিকার অর্থে এটি এখন রূপ নিয়েছে একটি বৈশ্বিক যুদ্ধে। এই যুদ্ধে বিশ্বের ৮০টি দেশে লড়াই করছে মার্কিন বাহিনী। দুই বছর অনেক পরিশ্রম করে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স’ ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’ এবং স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন এসব তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। তারা অনেক অপ্রকাশিত রিপোর্ট, মিলিটারি ওয়েবসাইট ও দূতাবাসের তথ্যে নানাধর্মী অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য বের করে আনেন।
অন্যান্য সূত্র মতে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে ব্যয় করেছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার। লোকক্ষয় ঘটেছে বেশুমার। বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে ব্যাপক হারে। এরপরও ফিরে আসেনি শান্তির সুবাতাস। অপর দিকে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধ সূচনা করে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পরিসর আরো বাড়িয়ে তোলে। এসব যুদ্ধ আজো চলমান। এ যুদ্ধে খরচ ও লোকক্ষয় বিপুল। যুদ্ধের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ সামরিক বাজেট কেবল বাড়িয়েই চলেছে। অনেক দেশের সামরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট ব্যয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট পরবর্তী প্রথম সারির ১০টি দেশের সম্মিলিত বাজেট বরাদ্দের চেয়েও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট বরাদ্দ চীনের চারগুণের চেয়েও বেশি। আর রাশিয়ার বাজেটের প্রায় ১০ গুণের সমান। ‘বটমলাইন’ হচ্ছে- এই মিলিটারিজমই জন্ম দেয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং আজকের দিনে বিশ্বের এখানে-সেখানে চলমান যুদ্ধগুলো। আজকের দিনে পরাশক্তিগুলো যেমনি সামরিক বাহিনীর পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, তেমনি এরা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলছে একই সাথে। যুদ্ধ যত বেশি হবে, অস্ত্র বিক্রিও তত বাড়বে। যুদ্ধের সময় পরাশক্তিগুলো মিত্র দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রির সহজ সুযোগ পায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদকরা বিশ্ব অস্ত্র বাজারের ৩৬ শতাংশ দখলে রাখে। এফ-৩৫ জেট বিমান রফতানি বেড়ে যাওয়ার ফলে ২০১৩ সালের ৩০ শতাংশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার-অবদান ২০১৮ সালের মধ্যে ৩৬ শতাংশে পৌঁছে। পরাশক্তিগুলোর অর্থনীতি মিলিটারিজম সূত্রে বাড়লেও অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে যুদ্ধরত দেশগুলোর। মিলিটারিজম উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্যের আর দুর্ভিক্ষের সমান সম্প্রসারণ ঘটায়। নানাধর্মী যুদ্ধের কবলে পড়ে থাকা আজকের আফ্রিকান অনেক দেশই এর উদাহরণ।
আসলে আজকের এ লেখার আলোকপাতের বিষয় এই মিলিটারিজমের মাঝে আমাদের বেঁচে থাকা ব্যাপারটি। মিলিটারিজম আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর কী ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং তা যেভাবে মানবজাতির বাস্তু সংস্থানকে তথা বেঁচে থাকাকে হুমকির মুখে ফেলছে, তারই একটি সতর্কবার্তা দেয়াই বক্ষ্যমাণ লেখার মুখ্য বিবেচ্য। আমরা জানি, প্রায় ২০ বছর আগে আমরা একটি নতুন শতাব্দীতে প্রবেশ করি, তেমনি প্রবেশ করি একটি নতুন সহস্রাব্দেও। আসলে নতুন এই শতাব্দী ও সহস্রাব্দে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের ঠেলে দিয়েছে এক নয়া সঙ্কটে। পাশাপাশি ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবসমাজকে সুযোগ দিয়েছে ক্ষুধামুক্ত হয়ে ও রোগব্যাধিকে সহজে জয় করে অধিকতর আরাম-আয়েশে জীবন যাপনেরও। আবার একই সময়ে বিজ্ঞান আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে থার্মোনিউক্লিয়ার তথা তাপপারমাণবিক যুদ্ধের মাধ্যমে সভ্যতা ধ্বংসের ক্ষমতাও। এর সাথে নানা ধরনের দূষণ সৃষ্টি করে পৃথিবীটাকে বসবাসের অনুপযোগী করে তোলার ক্ষমতাও আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এই মিলিটারিজম ক্রমেই সঙ্কটকে আরো জোরালো করে তুলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসৃষ্ট এই সঙ্কটের এই দুই বিকল্পের কোনটিকে আমরা বেছে নেবো- সেটা আমাদের ও আমাদের ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য একটি জীবন-মরণ প্রশ্ন : আমরা কি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দেয়া সুযোগকে কাজে লাগাবো, না মিলিটারিজম বাস্তবায়নের পথ ধরে একে ধ্বংসযজ্ঞে প্রয়োগ করব? এটি মানবসভ্যতার ভিন্নমাত্রার আরেক সঙ্কট; বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ। এর মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়ে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির পথ ধরে এ সঙ্কট কিংবা চ্যালেঞ্জ আজ আমাদের দোরগোড়ায়। এই সঙ্কট থেকে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বের করার কাজটি খুবই সহজ, আবার খুবই কঠিন। বাস্তবতা হচ্ছে- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দ্রুততার সাথে যেসব পরিবর্তন আনছে, আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ধারণাগুলো তা মোকাবেলায় সে গতি নিয়ে চলতে পারছে না। এর জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিকাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন, যা হবে আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী একটি গ্লোবাল এথিক, যেখানে মিলিটারিজমের কোনো স্থান থাকবে না। বৈশ্বিক সেই ন্যায়নীতি প্রতিস্থাপন করতে পারতো আমাদের সঙ্কীর্ণ আনুগত্যকে। এর স্থান দখল করতে পারত সামগ্রিকভাবে মানবতার প্রতি আনুগত্য দিয়ে। এটি সুস্পষ্ট, মানবতার প্রতি আনুগত্য ও মিলিটারিজম পাশাপাশি চলতে পারে না। বিধ্বংসী অস্ত্র বিপুল পরিমাণে উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে শেষ পর্যন্ত একসময় আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। মানব সভ্যতাকে এ থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে, যুদ্ধের যাবতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবসান ঘটানো; যুদ্ধবাজ দেশগুলোর মিলিটারিজমের অবসান ঘটানো।
যুদ্ধবিরোধী বিবেকবান মানুষ বলেছেন- যুদ্ধ হচ্ছে মানবজাতির দুর্ভোগের অন্যতম কারণ; যুদ্ধ হচ্ছে নিছক একটি পাগলামি। তাদের এই উক্তি যথার্থ। কিন্তু, এরপরও যুদ্ধ আজো অস্তিত্বশীল। চারদিকে চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। আমরা এও জানি- যুদ্ধ মানবজাতিকে অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ জন্য বিজ্ঞানের কোনো অপরাধ নেই, সেটাও আমরা বলতে পারি না। আইজেনহাওয়ার তার বিদায়ী ভাষণে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিলিটারি কমপ্লেক্স’ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য একটি হুমকি। তিনি যদি একই বক্তৃতা আজকের এই দিনে দিতেন, তবে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল-মিলিটারি কমপ্লেক্স’ কথাটির জায়গায় উল্লেখ করতেন ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল-মিলিটারি-সায়েন্টিফিক কমপ্লেক্স’ পদবাচ্য। হিরোশিমার আণবিক বোমা ফেলার ঘটনার পর থেকে আমরা জেনে আসছি, নতুন জ্ঞান সবসময় ভালো নয়। নতুন জ্ঞান বড় মাপে বিপদ ডেকে আনতে পারে। খুব শিগগিরই পারমাণবিক শক্তি এতটাই সর্বব্যাপী হয়ে উঠতে পরে যে- তখন একজন সন্ত্রাসীর, এমনকি একজন মাফিয়ার হাতেও চলে যেতে পারে পারমাণবিক বোমা। রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্রও একটি বড় ধরনের হুমকি। আমাদের বাস্তুসংস্থানগত এসব হুমকি সহজেই আমরা মোকাবেলা করতে পারি, যদি আমরা হই- ন্যায়নীতি, গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি অনুগত এবং আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারি এক নতুন গ্লোবাল এথিক। এই এথিকের অর্থ হবে মিলিটারিজম তথা যুদ্ধবিগ্রহকে সালাম জানিয়ে পরিবার, সমাজ ও জাতির প্রতি আন্তরিক নৈয়ায়িক আনুগত্য প্রকাশ, একই সাথে পরিপূরক হিসেবে এর পাশাপাশি থাকবে মানবজাতির প্রতি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিদায় দিয়ে অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ববোধের জোরালো মনোভাব। এ প্রত্যাশারই প্রতিফলন রয়েছে ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান কবি, নাট্যকার ও ইতিহাসবিদ ফ্রেডরিখ শিলারের ‘Ode to Joy’ নামের বিখ্যাত কবিতায়। ‘ওড’ হচ্ছে অনিয়মিত ছন্দে রচিত ও মহান অনুভূতি প্রকাশক কবিতা। এ ধরনের কবিতায় প্রায়ই কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয়ের মহিমাকীর্তন করা হয়। শিলারের এ কবিতার সামান্য পরিবর্তীত সংস্করণ প্রকাশ করা হয় ১৮০৮ সালে। এতে প্রথম স্তবকের দুটি লাইনের কিছুটা পরিবর্তন ও শেষ স্তবক বাদ দেয়া হয়। এই কবিতাটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত পায়, যখন লুফউইগ ভ্যান বিটুফেন তার ১৮২৪ সালে সমাপ্ত নাইনথ সিম্ফোনির ফাইনাল মুভমেন্টে এই করিতাটি ব্যবহার করেন। বিটুফেনের টেক্সট শিলারের এই কবিতার পুরোটার ওপর ভিত্তি করে নয়। এতে তিনি নতুন কিছু অংশ যোগ করেন। তার টিউন (তবে শিলারের কবিতার কথাগুলো নয়) ১৯৭২ সালের ইউরোপীয় কাউন্সিল ইউরোপের সমবেত স্তবগান বা অ্যান্থেম হিসেবে গ্রহণ করে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রোডেশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত ‘Rise, O Voices of Rhodesia’-তে ‘ওড টু জয়’-এর ‘টিউন’ ব্যবহার করা হয়। ‘বিটুফেনের মিউজিক ও শিলারের কথাগুলো শুনলে আজো আমাদের অনেকেই আবেগী হয়ে ওঠেন। এটি মানবজাতির একতাবদ্ধ হওয়ার আবেগের প্রতিধ্বনি। এর বার্তাটি হচ্ছে :All humans are brothers and sisters – not just some – all!
বললে ভুল হবে না, এটি হচ্ছে পুরো মানব জাতির কিংবা মানবতার জাতীয় সঙ্গীত। বিটুফেনের মিউজিক ও শিলারের কবিতার কথা আমাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, তবে আরো বৃহত্তর পরিসরে। এখানে পরিবার হচ্ছে সার্বজনীন পরিবার। এই সার্বজনীনতার চর্চা চলবে শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ধর্মে। এর একটি নীতি হবে- ‘কোনো যুদ্ধ নয় : নো ওয়্যার’। যুদ্ধ না থাকার অপর অর্থ, মিলিটারিজমের অস্তিত্ব হারানো। এই মিলিটারিজম বাধা হয়ে আছে সত্যিকারের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। আমাদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে ‘ওড টু জয়’-এর আরাধ্য জগতে নিয়ে যেতে; সমাজকে পরিবর্তন করতে সমগ্র মানবজাতির ভ্রাতৃত্ববোধের আলোকে। আজকের যে সমাজধারা ও অমানবিক বাস্তবতা, তা রেখে মানবজাতির কোনো সঙ্কটই মোকাবেলা করা যাবে না। বিদ্যমান পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অস্তিত্ব বিলোপের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মিলিটারিজম যে কোনো সমাধান নয়, সে শিক্ষা কোভিড-১৯ আমাদের সামনে হাজির করেছে। আমরা দেখছি, আমাদের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা ভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারছে না। এই ভাইরাস না থাকা অবস্থায়ও সত্যিকার অর্থে ‘প্রতিরক্ষা বিভাগ’ আমাদের রক্ষা করতে পারে না। এটি সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে, যথন আমরা পারমাণবিক যুদ্ধের কথা স্মরণে আনি। পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। আজকের বেসামরিক লোকজন মিলিটারিজমে বিশ্বাসী রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার লড়াইয়ের কাছে জিম্মি। আমরা অনেকেই ভাবছি, করোনার পর আমরা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবো। পুরনো ‘স্বাভাবিক’ অবস্থা আসলে সমস্যার একটি অংশ। প্রকৃতপক্ষে তখন আমরা ফিরে যাবো ‘ক্লাইমেট ইমার্জেন্সির’ অবস্থায়। সে অবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয় মিলিটারিজমের অবসান না ঘটিয়ে। তাই মিলিটারিজমের অবসান ঘটিয়ে সামরিক খাতে ব্যয়ের বিপুল অর্থ খরচ করতে হবে পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষায়, আমাদের বাস্তু সংস্থান অস্তিত্বহীনতা থেকে বাঁচানো আন্তরিক লক্ষ্য নিয়ে। তবেই যদি আমরা পাই নিরাপদ বাস্তুসংস্থান। সবশেষে আগ্রহী পাঠকদের জন্য ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাউনলোডেবল একটি বইয়ের কথা জানিয়ে রাখি। জন-স্কেলস-এভারির লেখা এই বইটির নাম : ‘দ্য ইকোলজিক্যাল ইমপ্যাক্ট অব মিলিটারিজম’। বইটিতে মিলিটারিজমের ফলে কী ভয়াবহভাবে আমাদের বাস্তুসংস্থান তথা ইকোলজিক্যাল ডিজাস্টার চলছে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বইটি ডাউনলোড করে যে কেউ চাইলে অবাধে পড়তে ও বিতরণও করতে পারেন। বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক হচ্ছে : http://eacpe.org/app/wp-content/uploads/2020/09/The-Ecological-Impact-of-Militarism-by-John-Scales-Avery.pdf