যশোরে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই মামলা : র‌্যাবের হাতে সোহেল শেখ ও মা সহ রাজু ডিবির হাতে আটকের খবর

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই মামলায় জড়িত সোহেল শেখকে আটক করেছে র‌্যাব। এছাড়া ৬ লক্ষাধিক টাকাসহ ছিনতাইকারী আরাফাত রাজু ও তার মা মেহেরুন নেছা ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বলে গতকাল খবর মেলে। রাজধানী ঢাকা থেকে মা মেহেরুন নেছাকে টাকাসহ ও আরাফাত রাজুকে যশোর থেকে আটক করা হয় এমন তথ্য মিলেছে। সোহেল শেখকে রোববার সকালে নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা ফেরিঘাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে র‌্যাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, যশোরে বোমা ফাটিয়ে ১৭ লাখ টাকা লুটের সাথে সরাসরি জড়িত আরাফাত রাজুকে দু’দিন আগে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাকে আটকের পর তার মা মেহেরুন নেছার কাছে রেখে দেয়া ৭ লাখ টাকা উদ্ধারে জোরালো অভিযান শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, ওই টাকা নিয়ে মেহেরুন নেছা রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপন করে আছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ঢাকায় অভিযানে যান। এরপর গত শনিবার রাতে তাকে ঢাকার একটি স্থান থেকে আটক করা হয়। এ সময় মেহেরুন নেছার কাছ থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার হয় বলে সূত্রের দাবি। অপরদিকে টাকাসহ আরাফাত রাজু ও তার মা মেহেরুন নেছা ঢাকা থেকে আটক হয়েছে বলে রোববার সকাল থেকেই যশোর শহরে গুঞ্জন চলতে থাকে। তবে এ বিষয়ে জানতে রোববার বিকেলে ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশকে মোবাইল ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তা সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর তুষার কুমার ম-লও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্যও মেলেনি। এদিকে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই মিশনে সরাসারি অংশ নেয়া সোহেল শেখকে রোববার আটক করেছে র‌্যাব। সে যশোর শহরের ধর্মতলার তবিবর রহমানের ছেলে। তবে আটকের পর সে তার পিতার নাম তৈয়ব আলী বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র‌্যাব-৬ সিপিসি-৩ যশোর ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার এইচ এম শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়ার ফেরিঘাট এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ফেরিঘাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের যশোর কাউন্টারের সামনে থেকে সোহেল শেখকে আটক করা হয়। একটি সূত্র জানায়, ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে সরাসরি জড়িত র‌্যাবের হাতে আটক সোহেল শেখ। সে আরাফাত রাজুর ফুফাতোভাই। ক্ষমতাসীন দল আশ্রিত এই সন্ত্রাসীকে ধর্মতলা কাঁচাবাজারে বোমা হামলার ঘটনার পর থেকেই পুলিশ খুঁজছিলো। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার নেতৃত্বে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ধর্মতলা কাঁচাবাজারে বোমা হামলা চালানো হয়েছিলো। এই মামলায় সোহেল, আরাফাত রাজু ও বারান্দীপাড়ার সাঈদ ইসলাম শুভও আসামি। ওই ঘটনার ৬ দিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে উল্লিখিত ৩ জনসহ তাদের সহযোগী দুর্র্বৃত্তরা শহরের এম কে রোডস্থ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে বোমা ফাটিয়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ছিনতাইকারীদের সরবরাহকারী জামাই রাজ্জাক ওরফে রাজ্জাক ফকিরসহ অন্যরা এখনো আটক হয়নি। সূত্র জানায়, জামাই রাজ্জাক ওরফে রাজ্জাক ফকির সস্ত্রীক পলাতক রয়েছে। শহরের গাড়িখানা রোডের তোফাজ্জেল হোসেন পেট্রোল পাম্পের সামনে সে ফলের ব্যবসা করতো। ওই ঘটনার পর থেকে তার দোকান বন্ধ রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বহু অপরাধের সাথে জড়িত জামাই রাজ্জাক ওরফে রাজ্জাক ফকির যশোর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কবীর হোসেন পলাশ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলো। পরে আদালত থেকে সে এই মামলায় খালাস পায়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে শহরের এম রোডস্থ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে বোমা ফাটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে এনামুল হক নামে এক যুবকের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ছিনতাইয়ের পর আরাফাত রাজু পূর্ব বারান্দীপাড়া টাওয়ারের মোড় এলাকায় বাড়িতে মায়ের কাছে যায়। এ সময় সে তার মা মেহেরুন নেছার কাছে ৭ লাখ টাকা রেখে দেয়। এরপর সে টাকার ব্যাগ নিয়ে বারান্দীপাড়া খালপাড়ে বন্ধু কালুর বাড়িতে যায়। সেখানে ব্যাগ খুলে সে সহযোগীদের জানায় যে, ১০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। পরে তারা ওই বাড়িতে বসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে। বাকি সাড়ে ৪ লাখ টাকা গডফাদারসহ অন্যদের দেওয়ার কথা বলে জামাই রাজ্জাক ওরফে রাজ্জাক ফকির নিয়ে যায়। অপরদিকে ছেলের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা পাওয়ার পর মেহেরুন নেছা যশোর থেকে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। যে কারণে ডিবি পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে পায়নি।