মায়ের সাথে তিন্নির শেষ কথা : ‘আমার তো সব শেষ, বেঁচে থেকে লাভ কী?’

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ বোনের সাবেক স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার পর মায়ের সাথে তিন্নির শেষ কথা ছিল, ‘আমার তো সব শেষ, বেঁচে থেকে লাভ কী?’ এরপর রাত ১২ টার দিকে আত্মহত্যা করে তিন্নি। লোকলজ্জার ভয় ও ক্ষোভে অভিমানে নিজ ঘরে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ে। ওই রাতে তিন্নির সাথে যা ঘটেছিল, তা উঠে এসেছে তার মা ও বোনের কথায়। গণমাধ্যমকে সে সব কথা জানান তারা।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার যুগীপাড়া গ্রামে তিন্নিদের গ্রামের বাড়ি। বসবাস করতেন শেখপাড়া বাজারে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজের ঘর থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার হয়। মা হালিমা বেগম বলেন, বৃহম্পতিবার তিন্নি এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া গিয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরে রাত আটটার দিকে। এর কিছু সময় পর মেজো মেয়ে মিন্নির তালাকপ্রাপ্ত স্বামী জামিরুল গোপনে তিন্নির রুমে ঢুকে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। তিন্নি বাইরে থেকে এসে পোশাক বদল করে বাসার নিচতলায় মা ও বড় বোনের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ঘুমানোর জন্য দোতালার রুমে প্রবেশ করে। তিন্নির মায়ের বর্ণনা মতে, ঘরে ঢুকে তিন্নি বুঝতে পারে তার খাটের নিচে কেউ লুকিয়ে আছে। লোকটি খাটের নিচ থেকে বের হয়ে এক পর্যায়ে তিন্নিকে জাপটে ধরে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এসময় চিৎকার দেয় তিন্নি। সেই লোকটি ছিল জামিরুল। হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা তখন বুঝতে পারি বাসার চারপাশে জামিরুলের অনেক সহযোগী ছিল। তারা একে এক ঘরে ঢুকে আমাদের বলতে থাকে কোনও হৈ চৈ করবি না। আজ সবাইকে মেরে ফেলবো।’ তিন্নির মেজো বোন মিন্নি জানান, বোনের চিৎকারে তিনি ছুটে যান তিন্নির রুমের সামনে। কিন্তু রুম ছিল ভেতর থেকে আটকানো। মিন্নি বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে দরজার লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি সেখানে জামিরুল। তখনো তারা ধস্তাধস্তি করছে। বাধা দিতে গেলে সে আমাকে মারতে আসে। আমি অন্য রুমে গিয়ে আত্মরা করি। এরপর অনেক সময় চলে তিন্নির রুমে তান্ডব। পরে রুম থেকে বের হয়ে আমাকে ও আমার মাকে খুঁজতে থাকে সে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের উপস্থিতি টের পেয়ে জামিরুল দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়।’ মা হালিমা বেগম ও মিন্নির ভাষ্য মতে, ‘জামিরুল চলে যাওয়ার পর তিন্নি নিচে নেমে আসে। নিচে নেমে আমাদের তিন্নি প্রশ্ন করে বাইরের লোক কেন আমার রুমে প্রবেশ করল মা? আমার তো সব শেষ! আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ? এই বলে সে নিজের রুমে চলে যায়। ১০ মিনিট পর আমরা উপরের ঘরে গিয়ে দেখি তিন্নি ফ্যানের সাথে ঝুলছে।’ মিন্নি জানান, জামিরুল যখন তার স্বামী ছিলেন তখন এই বাড়িতে এসে ওই রুমেই থাকতেন এবং জামিরুল হয়তো ভেবেছিলেন এখনও আমি ওই রুমেই থাকি। তিনি বলেন, আমাকে তুলে নিতে বা হত্যা করতে জামিরুল ওই রুমের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। তালাকের পর সে বিশ্বাস করেনি আমার আবার বিয়ে হয়েছে। সে আমাকে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা চালাতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে তিন্নীর মা বলেন, আমি আর কী নিয়ে থাকব। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু সে কোনো সময় রাজি হয়নি। শুধু বলতো, মা দোয়া করো আমি বিসিএস দিয়ে চাকরি পেয়ে সংসারের যেন হাল ধরতে পারি। ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে তিন্নি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। স্বজনদের অভিযোগ, তার বোনের সাবেক স্বামী শেখপাড়া গ্রামের কুনুরুদ্দীনের ছেলে জামিরুল ও তার সহযোগীরা জোর করে তিন্নিদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এসময় তিন্নির ঘরে ঢুকে তাকে শ্লীলতাহানি ঘটালে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে জামিরুল।