মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান হোক

0

নিত্যপণ্যের মধ্যে বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। সরকার অবশ্য চেষ্টা করছে নানাভাবে, নানা উপায়ে। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমবে। ভোজ্যতেলের েেত্র কি হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আপাতত সরকার ব্যস্ত রয়েছে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। দফায় দফায় চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে খাদ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বৈঠক হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়া ও নওগাঁর জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকও স্বীকার করেছেন, চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। দেশে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চালের মজুদও সন্তোষজনক। অথচ, মিল মালিক ও পাইকারি বিক্রেতারা অজুহাত দিচ্ছেন অতিবৃষ্টি ও বন্যার এবং সর্বশেষ ধানের দাম বৃদ্ধির। সত্য বটে, সরকার এবার ধান-চালের সংগ্রহ বাড়ানোর ল্েয এর ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে। এতে কৃষকরা ধান-চালের অপেক্ষাকৃত ভাল দাম পাচ্ছেন। তাই বলে ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। মিল মালিকরা বৈঠকে আপাতসম্মত হলেও অনতিপরেই তারা জোটবদ্ধ হয়ে দাম বাড়াচ্ছেন চালের। অতঃপর সরকার চালের দাম বেঁধে দিয়েছে- মোটা চাল ও মিনিকেটের। বলা হয়েছে, বেশি দামে চাল বিক্রি করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এটা কতটা কাজ দেবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
দেশের করোনা মহামারী পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য বিভাগে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা বিষয় সমালোচিত হলেও আক্ষরিকভাবে দণি এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাও পেয়েছে বহির্বিশ্বে। করোনা মহামারী থেকে রা পেতে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে যখন লকডাউন চলছে, অর্থনীতি প্রায় অচল হয়ে পড়ছে তখন বাংলাদেশে অন্তত মূল্যস্ফীতি ঘটেনি। খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম তখন তেমন বাড়েনি। ধান-চালের সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সহায়তা করেছে কৃষককে, যাতে তারা লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্যে এখন সেই বর্ধিত মূল্যের খেসারত দিতে হচ্ছে সর্বস্তরের জনগণকে। প্রায় প্রতিদিনই দাম বাড়ছে চালের।
প্রধানমন্ত্রী গভীর প্রত্যয়ে বলেছেন যে, দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। বরং নিজেরা খেয়ে-পরে যদি সম্ভব হয় তবে অন্যদের সহায়তা করব। করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বে এটি অবশ্যই ইতিবাচক। খাদ্য মজুদের ল্েয সরকার এবার ২১ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কিনে। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। সরকারি ব্যবস্থা ও হিসাব অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ছাড়াও সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এই চাল বিতরণের জন্য বর্তমানের ৫০ লাখ ওএমএসের কার্ডের অতিরিক্ত আরও ৫০ লাখ কার্ড দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি কার্ড থেকে সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। প্রতি জেলা পর্যায়ে নগদ ৫০ কোটি টাকা ও ৯০ হাজার টন খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। অথচ, বাজারে এর কোনো প্রভাব আছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে না। খোলা বাাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, প্রশ্ন উঠছে, সরকারের এরই বিশাল ব্যবস্থা কারা ভোগ করছে ! এতো চাল, তেল যাচ্ছে কোথায় ? এতো সস্তায় চাল দেয়ার পরও কেন চালের দাম বেড়েই যাচ্ছে ? আমরা মনে করি, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই বেরিয়ে আসবে সংকটের রহস্য, সমাধান হবে সহজ। আমরা আশা করবো, সরকার রহস্য উদ্ঘাটনে বিশেষ টিম গঠন করে অনুসন্ধান চালাবে এবং সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।