মনিরামপুরে ৫৫৫ বস্তা চাল পাচার মামলা : উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

0

এস. এম মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে সরকারি ৫৫৫ বস্তার চাল পাচার মামলায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান যুবলীগের আহবায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার যশোর ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশ আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ছাড়াও অভিযুক্ত অন্যরা হলেন-পৌর শহরের ভাই ভাই রাইস মিলের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদার, চাল পাচার সিন্ডিকেট নেতা পৌর শহরের তাহেরপুর এলাকার শহিদুল ইসলাম, সিন্ডিকেটের প্রধান আদায়কারী পাতন-জুড়ানপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী জগদীস দাস ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস। এর মধ্যে আব্দুলাহ আল মামুন, ফরিদ হাওলাদার, শহিদুল ইসলাম, জগদীস দাস ও আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ত্রাণের সরকারি চাল ক্রয়-বিক্রয়ে সার্বিক সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। চার্জশিটের ৬ নম্বর আসামি উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুকে প্রধান হোতা উল্লেখ করে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মনিরামপুর থানা পুলিশের একটি টিম চলতি বছরের ৪ এপ্রিল বিকেলে পৌর শহরের বিজয়রামপুরে ভাই ভাই রাইস মিল এন্ড চাতালে অভিযান চালায়। পরে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর উপস্থিতিতে সরকারি কাবিখা’র ৫৫৫ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। এ সময় আটক করা হয় চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদারকে। অবশ্য এসময় সেখানে চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ উপস্থিতিদের সামনে চাল পাচারের ঘটনায় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, চাল বেচাকেনার সিন্ডিকেটের সদস্য শহিদুল ইসলাম, অষ্টম দাস, জগদিশ দাস, দেবাশীষ দাসসহ জড়িত অনেক কুশিলবদের নাম প্রকাশ করেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ভাগ্নে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু সরকারি চাল পাচারের ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগও তোলেন। তবে পুলিশ বাদী হয়ে শুধুমাত্র চাতাল মালিক মামুন ও ট্রাকচালক ফরিদের নামে মামলা করেন। পুলিশ ৫ এপ্রিল মামুন ও ফরিদকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরাম হোসেন দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৭ এপ্রিল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বসুর আদালতে ১৬৪ ধারায় মামুন ও ফরিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন চাল পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন সিন্ডিকেট নেতা শহিদুল ইসলাম, জগদিশ দাসসহ আরো দু’জন সরকারি কর্মকর্তা। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ২১ এপ্রিল যশোর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামুনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চাল পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ মে রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম পৌর শহর থেকে সিন্ডিকেট নেতা শহিদুল ইসলামকে আটক করে। পরে শহিদুল ইসলাম আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, সরকারি চাল পাচারের ঘটনায় তার সাথে জড়িত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ভাগ্নে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ও পাতন-জুড়ানপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা কুদ্দুস আলম। এরপর সিন্ডিকেটের প্রধান আদায়কারী জুড়ানপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী জগদিশ দাসকে গত ২৭ জুন ডিবি আটক করে। জগদিশ দাসও আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন চাল পাচারের ঘটনায় জড়িত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ও কুদ্দুস আলম। ফলে ডিবি পুলিশ কুদ্দুসকেও আটক করে। তারা বর্তমান জামিনে রয়েছেন।