৪২ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলা ; ঝিকরগাছায় দুটি পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস

0

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) ॥ একটি দেওয়ানি মামলা দীর্ঘ ৪২ বছরেও নিষ্পত্তি না হওয়ায় যশোরের ঝিকরগাছায় দুটি পরিবার পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। নি¤œ আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এই মামলাটি। পাল্টাপাল্টি মামলায় দীর্ঘ সূত্রিতার মাঝেও সমঝোতায় আসতে পারেননি তারা। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে জরাজীর্ণ ভবনের সংস্কার কিংবা স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছেন না তারা। ফলে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানি মামলার বাদী আ. আজিজ ও তার বৈমাত্রেয় ভাই বিবাদী আব্দুল লতিফের বাবা জয়নাল আবেদীনের জীবদ্দশায় উভয়পক্ষ সৃষ্ট মামলার আগে থেকেই নিজ নিজ অংশে আপস মতে শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে ছিলেন। এ মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ বিবাদীপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনে প্রতিকার চেয়ে আপিল মামলা করেছেন। দীর্ঘ ১৮ বছর পর হাইকোর্ট এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, হাইকোর্টের বিচারক মো. এমদাদুল হক আজাদের আদালত বাদী-বিবাদী দু’ভাইয়ের পিতা মৃত জয়নাল আবেদীনকে জমির মালিকানা থেকে বেনামদার সাব্যস্ত করে তার মূল দলিল বাতিল করেন এবং তার জীবদ্দশায় তিনি মূল দলিল থেকে বিভিন্ন সময়ে যেসব জমি হস্তান্তরিত করেছেন সেগুলো রদ ও রহিতের আদেশ দেন। এর আগে ঝিকরগাছা সহকারী জজ আদালতের বিচারক শেখ আবু তাহেরের আদালত ০৮/১০/১৯৯৮ ও যশোরের যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেনের আদালত ৩০/১০/২০০১ তারিখে পৃথক রায় ঘোষণা করেন। আপিল মামলার বাদী ঝিকরগাছা রেলস্টেশন রোডের মৃত আব্দুল লতিফের বড় ছেলে তরিকুল ইসলাম তারিক। বিবাদীরা হলেন-নেওয়াজ মোহাম্মাদ জাহেদী গং। তারা দু’জনই চাচাতো ভাই। এ মামলার মূল বাদী-বিবাদী দু’ভাই অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। বাবার রেখে যাওয়া ১৩ শতক জমির ওপর বসতভিটায় ১৯৫৯ সাল থেকে বাদী-বিবাদী দুই ভাই সমান সাড়ে ৬ শতক অংশে বসবাস করে এসেছেন। এখন তাদের ওয়ারিশ গং এই সম্পত্তিতে বসবাস করেন। মরহুম আ. আজিজ ও আব্দুল লতিফের দু’ভাইয়ের জেদাজেদির কারণেই এই মামলার উৎপত্তি। পারিবারিকভাবে অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ করলে অনেক আগেই এই ধরনের মামলা নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব ছিল বলে বিবাদী মরহুম আব্দুল লতিফের ছেলে তরিকুল ইসলাম তারিক জানিয়েছেন। কিন্তু উভয় পরিবারের কেউই সমঝোতায় না আসায় আজও মামলাটি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বর্তমান আপিল মামলার বাদী মো. তরিকুল ইসলাম তারিকের দাবি, জয়নাল আবেদীন ১৫/০৮/১৯৫৯ তারিখে ৭২৫৩ নম্বর কবলা দলিলমূলে মোট ২ একর ৪৩ শতক জমি ক্রয় করার পর থেকে সরকার সেরেস্তায় ১৯৬২ সালে নিজ নাম রেকর্ডভুক্ত করে কর খাজনা প্রদান সাপেক্ষে ভোগ দখলকার ছিলেন। পরবর্তীতে ৭২৫৩ নম্বর কবলা দলিল থেকে ২ একর ৩৫ শতক জমি শিক্ষক হরিপদ পালদ্বিগের কাছে বিক্রি করে দেন। এই দলিলের শনাক্তকারী ও সাক্ষী বিবাদী আব্দুল আজিজ নিজে। অথচ তিনি তার বাবা জয়নাল আবেদীনকে ৩৮ বছর পরে ওই দলিলের বেনামদার আখ্যায়িত করে আরজি দাখিল করেন। যা অযৌক্তিক বলে মনে করেন তরিকুল ইসলাম তারিক। কারণ জয়নাল আবেদীনের ক্রয়সূত্রে নিজনামীয় কবলা ৭২৫৩ নম্বর দলিল সৃষ্টি হলো ১৫/০৮/১৯৫৯ তারিখে। তার মৃত্যু হলো ১৯৮৭ সালে। জয়নাল আবেদীনের জীবিতকালীন সময়ের ২৮ বছরের মধ্যে বাদী আব্দুল আজিজ কোনো অভিযোগ কিংবা নিজেই ওই জমি জায়গার একক মালিক হিসেবে দাবি করেননি কেন? মামলার বাদীর প্রশ্ন। মামলার বিবাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. বিভাষ চন্দ্র বিশ্বাস এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আলোচিত মামলাটির যথেষ্ট মেরিট থাকা সত্ত্বেও রায় অনুকূলে না আসা দুঃখজনক। আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল আবেদন করেছি। বর্তমানে শুনানির অপেক্ষাই আছি। আশা করছি ন্যায়বিচার পাবো।’ এদিকে মামলার বাদী মো. তরিকুল ইসলাম তারিক বিষয়টি সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।