‘কাঠগড়ায়’ এমসি’র অধ্যক্ষ সুপার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘কাঠগড়ায়’ সিলেটের এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন ও হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। ছাত্রাবাসের তদারকিতে তাদের ‘দুর্বলতা’র বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। করোনাকালে বন্ধ থাকার কথা ছাত্রাবাস। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খোলা ছিল ছাত্রাবাস। শিক্ষক বাংলো থাকার কথা শিক্ষকদের দখলে। কিন্তু সেটি ব্যবহার করতো ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর। ছাত্রাবাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে ছাত্রাবাস পুরোটাই ছিল অন্ধকার।
নতুন ছাত্রাবাসের ধারে-কাছেও ছিল না কোনো আলোর ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা থাকলেও হোস্টেল সুপার কখনোই সেদিকে নজর রাখতেন না। মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ। এ কারণে সুপার থাকতেন না হোস্টেলে। শিক্ষক বাংলোটির অবস্থান হচ্ছে ৪র্থ ব্লকে। দীর্ঘদিন ধরে ‘পরিত্যক্ত’ করে রাখা হয়েছে বাংলোটি। কোনো হোস্টেল সুপার ওই বাংলোতে থাকতেন না। গত ৮ বছর ধরে এই অবস্থা। এই সুযোগে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান বাংলোটি দখল করে নেয়। আর ওখানেই সে বসবাস করতো। তার বসবাসের খবরটি জানতেন সবাই। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিকার করতেন না। সাইফুর এমসি’র বর্তমান ছাত্র না। সে বহিরাগত। এরপরও দিব্যি বাংলোতে বসবাস করতো। ঘটনার দিন গভীর রাতে পুলিশ ওই বাংলোতে অভিযান চালিয়েছিলো। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র। ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- ওই বাংলোতে সাইফুর তার অপরাধ আস্তানা গড়ে তুলেছিলো। বাংলোটির অবস্থান একেবারে পেছনে। সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী ওদিকে যায় না। রাত হলেই অন্ধকারময় হয়ে পুরো এলাকা। ফলে সন্ধ্যার পর ভয়ে কেউ যায় না। এই সুযোগে সাইফুর সেখানে নিরাপদ বসতি গড়ে তুলেছিলো। বাংলোতে থাকার কথা হোস্টেল সুপারের। কিন্তু ৪র্থ ব্লকে সুপারের দায়িত্বে নেই কেউ। এ কারণে ৩য় ব্লকের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ওই ব্লকের। হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন ঘটনাকালীন সময়ে হোস্টেলে ছিলেন না। ছিলেন তার নিজ বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে। তিনি রাতেই ওই ঘটনা শুনেন বলে সাংবাদিকদের জানান। পরদিন সকালে তিনি কলেজে আসেন। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি নিজ বাড়িতেই রয়েছেন। ফলে হোস্টেলের দিকে তার নজর ছিল না। মার্চ মাস থেকে বন্ধ এমসি’র ছাত্রাবাস। সেখানে কোনো ছাত্রের থাকার কথা না। তবে- বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়েছিলো বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন। কেউ কেউ টিউশনি করে। এ কারণে তারা হোস্টেলে থাকার আবদার জানিয়েছিলো। অধ্যক্ষ সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে জানান। হোস্টেলে শিক্ষার্থী বসবাসের সুযোগ দিলেও দেখভালের দায়িত্ব কাউকে দেননি। এমনকি তিনিও সেদিকে নজর রাখেননি। ঘটনার পর এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি ব্লকেই ছিল শিক্ষার্থীরা। এর সংখ্যা অর্ধশতাধিকের ওপর। হোস্টেল ছিল সরব। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান- তারা বিসিএস’র প্রস্তুতির জন্য হোস্টেলে থেকেছিলেন। এমসি’র ছাত্রাবাস মূলত দখলে ছিল ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর, শাহ রনি ও রবিউলের। তিনজনই ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। নতুন করে আসাম প্যাটেলে হোস্টেল নির্মাণের পর থেকেই তারা দখলে রেখেছে। হোস্টেলের সব দেখভাল করতো তারা। এমনকি অধ্যক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের খাওয়ার বিল পর্যন্ত মওকুফ করাতো তারা। পাশাপাশি নিজেরা ফ্রি বসবাস ও খাওয়া-দাওয়া করতো। কোনো টাকা দিতে হতো না। বরং ডাউনিংয়ের কর্মচারী, হোস্টেলের নিরাপত্তা রক্ষীরাও তাদের নির্দেশ মতো চলতো। হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন গতকাল জানিয়েছেন- তিনি হোস্টেলের ৩য় ব্লকে থাকেন। ৪র্থ ব্লকের শিক্ষক বাংলোটি পরিত্যক্ত। ওই বাংলোর দেওয়ালও ভাঙ্গা। ফলে ওখানে কেউ থাকার কথা ছিল না। কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই বাংলোটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। তবে- শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- শিক্ষক বাংলোগুলোতে সাধারণত শিক্ষকরা বসবাস করেন না। তারা বসবাস করলে রেন্ট হিসেবে ২৫ হাজার টাকা করে মাসে কেটে রাখা হয়। সুপাররা বাইরে ১০-১২ হাজার টাকায় ভালো বাসা পান। ফলে তারা হোস্টেলের নির্ধারিত বাংলোতে বসবাস না করে বসবাস করতেন হোস্টেলের বাইরের এলাকায় ভাড়া বাসায়। এদিকে- এমসি কলেজের হোস্টেলে ও ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব খুঁজে পেয়েছেন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে হোস্টেল খোলা রাখা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। তদন্ত দলের প্রধান প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরীও জানিয়েছেন- করোনাকালে ছাত্রাবাস খোলা রাখার কোনো নির্দেশনাই ছিল না। কেন ছাত্রাবাস খোলা রাখা হয়েছিলো সেটি খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে- শুধু ছাত্রাবাসই নয়, এমসির ক্যাম্পাসেও নানা সময় ঘটেছে নানা ঘটনা। মন্দিরের টিলা ও আশপাশের নির্জন এলাকা সব সময়ই থাকে অরক্ষিত। ফলে এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ ও সুপারের তদারকির গাফিলতির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।