ঝুঁকিতে যাত্রী-পথচারী-যানবাহন: যশোর-খুলনা মহাসড়কের মনিহার থেকে মুড়লী মোড় বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে তিন বছর পার

0

আকরামুজ্জামান ॥ বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে তিন বছর পার করলেও আজো সংস্কার করা হয়নি যশোর মনিহার প্রেক্ষাগৃহ মোড় হতে মুড়লী মোড় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। সড়কটি এক শ পনের কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নীত করা হবে এসব অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর এভাবেই ফেলে রাখছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) যশোর কর্তৃপক্ষ। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই র্দীঘদিন ধরে চরম ঝুঁকি নিয়েই চলছে শ শ যানবাহন। মাঝে মাঝে ছোট গাড়ি উল্টে যাওয়াসহ ঘটে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। এতে যাত্রীরা যেমন অনিরাপদ বোধ করেন তেমনি পথচারীরা থাকেন শঙ্কিত। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। আবার সড়ক জুড়ে হেলেদুলে যান চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তীব্র যনজট।
যশোর-খুলনা মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এ সড়কটির বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালের শেষ দিকে মহাসড়কের এই অংশটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে কোনরকম জোড়াতালি দেয় সওজ বিভাগ। সেই থেকেই সড়কটি আর পুন:নির্মাণ বা সংস্কার করা হয়নি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই এখানে বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে কোনোরকম চলাচলের উপযোগী করে তোলে সওজ। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের প্রথম দিকে সড়কটির মনিহার প্রেক্ষাগৃহ মোড় হতে মুড়লী পর্যন্ত ইট বিছিয়ে দেয়া হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে চরমে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর শহরের মনিহার প্রেক্ষাগৃহের এলাকার ফলপট্টি ও বকচর এলাকার র‌্যাব কার্যালয়ের সামনে অন্তত দেড় কিলোমিটারজুড়ে বিটুমিনের সড়কের ওপরে ইটের বিছানা বসানো রয়েছে। এছাড়া রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ উঁচু নিচু। ইটের ওই বিছানাও টিকছেনা। মাঝেমধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই এলাকা দিয়ে যানবহন চলাচল করছে হেলেদুলে। সব সময় ধুলায় আচ্ছন্ন থাকছে গোটা এলাকা। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও যানবহনের যাত্রী সবাইকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একই অবস্থা সড়কের বিসিএমসি কলেজ থেকে শহরের টায়ারপট্টি এলাকা পর্যন্ত। সড়কের এই অংশে ইট-বালি, পিচ উঠে বড় বড় খানা-খন্দে রূপ নিয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে এ অংশ দিয়ে যান চলাচল দুস্কর হয়ে পড়ে। গর্তে পানি জমে থাকায় এর গভীরতা নির্ণয় করা কঠিন হয় তখন ইজিবাইক, মোটর সাইকেল বা রিকশা উল্টে যায়, আহত হয় যাত্রীরা। সড়কে কথা হয় ট্রাক চালক আজমল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, এটি যশোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। অথচ গত তিন বছর ধরে সড়কটিতে এ করুণ অবস্থা, সেটি দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন, বর্ষার সময় যখন আমরা গাড়ি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে যাই, তখন মনে হয় এই যেনো খাদে পড়লাম। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাঁদা-মাটি একাকার হয়ে যায় সড়কটিতে। এতে গাড়ির চাকা পিচলে পড়ে যায়। একই কথা বলেন, ইজিবাইক চালক শামসুর রহমান। তিনি বলেন, যাত্রী আনা-নেওয়ার সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সামান্য পথ যেতে সময় লাগে অনেক সময়। প্রচন্ড ঝাকুনিতে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। তিনি বলেন, শুনেছি এ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। কিন্তু কবে হবে তা কেউই বলতে পারছেন না। তাই আমাদের দাবি জেলা শহরের প্রবেশ মুখের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দ্রুত পুন:নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয়রা জানান, সড়কের দুই পাশ দখল করে ব্যবসায়ীরা পুরোনো বাস-ট্রাক ভাঙচুর ও যানবাহনের নতুন কাঠামো তৈরির কাজ করেন। এ ছাড়া সড়কের ওপরে সারি সারি ট্রাক পার্ক করে রাখা হচ্ছে। এতে সড়কটি ছোট হয়ে মানুষের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মনিহার বকচর এলাকায় শ শ যানবাহনের জট লেগেই থাকছে প্রতিনিয়ত। এ রাস্তা দিয়ে খুলনা, ঢাকা, কুস্টিয়া আঞ্চলিক পথের বাস-ট্রাক চলাচল করে। এ ছাড়া নওয়াপাড়া বন্দরের সারবোঝাই ট্রাকও এ সড়ক দিয়ে যায় উত্তর বঙ্গে। তাছাড়া আন্ত:জেলা বাস-ট্রকা ও ঢাকাগামী পরিবহন চলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে পালবাড়ি-দড়াটানা-মনিহার-মুড়লি মহাসড়ক পুন:নির্মাণের জন্য পৌনে সাত কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে যশোর শহরের মঈনউদ্দীন বাঁশি নামের একজন ঠিকাদারকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালে কাজ বুঝিয়ে দেয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই ওই সড়কের মনিহার থেকে বকচর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার অংশে সড়কের মাঝখান ফুলে-ফেঁপে বড় ঢিবি হয়ে যায়। কিছুদিন পরে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এতে যানবাহনের নিচের অংশ আটকে যায়। ঘটতে থাকে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সওজ বিভাগ থেকে ওই রাস্তার মাটি পরীা করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, চলতি বছরেই এই সড়কটি আধুনিকায়ন করা হবে। এরজন্য সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সড়কের পুন:নির্মাণের টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মূল্যায়ন রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই রিপোর্টটি আসা মাত্রই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, সড়কটি পুন:নির্মাণে যেহেতু বড় একটি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এজন্য আমরা আপাতত অন্য কোনো কাজ করতে চাচ্ছি না। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে মূল্যায়ন রিপোর্ট চলে আসবে। মেগা প্রজেক্টের কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে। পাল্টে যাবে শহরের পুরো চেহারা বলেও তিনি দাবি করেন।