‘আকাশ-বুদবুদ’ তৈরি করে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে শিগগিরই ফ্লাইট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কমার্শিয়াল ফ্লাইট বা বাণিজ্যিক বিমান চলাচল আবারও চালু হতে যাচ্ছে। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে আভাস দিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে জয়েন্ট কনসাল্টেটিভ কমিশনের (জেসিসি) ভার্চুয়াল বৈঠকের পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে চলেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের হাজার হাজার নাগরিক চিকিৎসার প্রয়োজনে বা নানা ব্যবসায়িক কাজে ভারতে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা আসতে পারছেন না। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তাদেরও দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে। বাংলাদেশে আবারও যেতে পারবেন ভারতীয় নাগরিকরা।


যে ব্যবস্থার অধীনে দুই দেশের মাঝে এই বিমান চলাচল আবারও শুরু হবে সেটাকে বলা হচ্ছে ‘ট্রান্সপোর্ট বাবল’ অথবা ‘এয়ার ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’। অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘আকাশ-বুদবুদ’। এই ধরনের নামকরণের কারণ হলো, এই পদ্ধতিটা কাজ করবে পারস্পরিকভাবে শুধুমাত্র দুটো দেশের মধ্যে। এখানে তৃতীয় কোনও দেশের ভূমিকা থাকবে না। অর্থাৎ কোনও যাত্রী ঢাকায় বিমানে উঠে সরাসরি যেন একটা ‘বুদবুদে’র মধ্যেদিয়ে এসে ভারতের কোনও বিমানবন্দরে এসে নামবেন, মাঝে তিনি অন্য কোথাও অন্য দেশের সংস্পর্শে আসবেন না। শুধু সংশ্লিষ্ট দুটো দেশের এয়ারলাইন্সগুলোই এই পদ্ধতিতে অপারেট করতে পারবে।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসদুয়েকের ভেতর তারা আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান-সহ মোট ১৪টি দেশের সঙ্গে ‘এয়ার বাবল’ স্থাপনে সমঝোতা করেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার, আরব আমিরাত, বাহরাইন, আফ্রিকার নাইজেরিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও ভুটান এই তালিকায় আছে। সব ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গেও দিনদুয়েকের মধ্যে ভারতের ‘আকাশ-বুদবুদ’ তৈরির কথা ঘোষণা করা হবে। ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ‘এয়ার বাবল’ চালু করা নিয়ে তাদের কথাবার্তা চলছে গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই। গত ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা যখন ঢাকা সফরে যান, তখনও এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তার কাউন্টারপার্ট মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছিল।
বস্তুত, ভারতে এখন সবচেয়ে বেশি বিদেশি নাগরিক আসেন বাংলাদেশ থেকেই , যে সংখ্যাটা প্রায় (বার্ষিক) ১৭-১৮ লাখের কাছাকাছি। করোনাভাইরাস মহামারিতে সেই পর্যটকের ঢল স্তব্ধ বহুদিন ধরে। আর এখন যেহেতু ভারত লকডাউন শেষ করে ‘আনলকিং’য়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তাই অর্থনীতির চাকাকে ফের সচল করতে বাংলাদেশিরা আবারও ভারতে আসুন— দিল্লির দিক থেকে সেই তাগিদও আছে পুরোমাত্রায়। ফলে ঠিক এক মাস আগে (২৭ আগস্ট) ঢাকায় ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলি দাস যখন বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সঙ্গে দেখা করতে যান, তখনও দুদেশের মধ্যে ‘আকাশ-বুদবুদ’ চালু করার নানা দিক নিয়ে তাদের মধ্যে বিস্তারিত কথাবার্তা হয়েছিল। এরপর এর বিভিন্ন ‘লজিসটিক্স’ চূড়ান্ত করা নিয়ে দুদেশের কর্মকর্তারা দফায় দফায় কথাবার্তা বলেছেন, যা এখন অচিরেই চূড়ান্ত রূপ পেতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের নেতৃত্বে দুদেশের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৈঠকে মিলিত হবেন বলে চূড়ান্ত হয়েছে। দুদেশের মধ্যে জেসিসি-র বৈঠক এই প্রথম অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে, তবে নিয়মমাফিক যেসব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে জেসিসি-তে আলোচনা হয়, এবারেও তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না। এই বৈঠকে দুদেশের মধ্যে আকাশ-বুদবুদ চালু করা ছাড়াও আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে:
ক. যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ এবং গোমতী-দুধকুমার-ধরলাসহ ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে প্রাথমিক সমঝোতা।
খ. মুজিববর্ষ এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের রূপরেখা স্থির করা এবং
গ. ভারতের ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় যেসব প্রকল্প বাংলাদেশে রূপায়িত হচ্ছে, সেগুলোর মনিটরিংয়ের জন্য সচিব পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন।