চৌগাছার খাল-বিলে ফুটেছে শাপলা শিশ-কিশোর মেতেছে ফুল সংগ্রহে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। অতি পরিচিত এই জলজ উদ্ভিদ এক সময় ব্যাপকভাবে দেখা গেলেও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরাট করা, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত তুলনামূলক বেশি হওয়ায় খালে বিলে দেখা মিলছে শাপলা। শিশু-কিশোররা বিলের পানিতে মেতে উঠেছে খেলায়। খেলার ফাঁকে ফাঁকে সংগ্রহ করছে শাপলা ফুল।
খাল-বিল, পুকুর-ডোবা নালায় যে ফুলটি বেশি দেখা যায় সেটি হচ্ছে শাপলা। দেশে নানা জাতের শাপলা রয়েছে। নীল, লাল, সাদা, নীল-সাদাটে হরেকরকম। বৃষ্টির পানি বিল খালে জমার পর পরই সেই পানিতে জন্মে শাপলা। বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে শাপলার নরম ফাপা কান্ডটি। পানির ওপর দন্ডায়মান শাপলা গাছের গোড়া থাকে পানির নিচে কাদার ভিতরে। এরা পানির ওপর হৃৎপিন্ড আকৃতির এক একটি বড় পাতা মেলে থাকে। অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে উঠে এই জলজ ফুল গাছটি।
পাঁচনামনা গ্রামের আছের আলী (৬৫) বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার মত চৌগাছায় একসময় ব্যাপকভাবে দেখা যেত শাপলা ফুল। বিশেষ করে বাংলা সনের আশি^ন, কাত্তিক মাসে বিল খাল পুকুরে ফুটে থাকতো অসংখ্য শাপলা ফুল। পানির ওপর ভেসে থাকা এই ফুলটি অপরুপ সৌন্দর্য বহন করতো। কিন্তু এখন আর সেভাবে শাপলা ফুল দেখা যায় না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অনাবৃৃষ্টি। এ বছর তুলনামূলক বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় দীর্ঘদিন পরে বিলে বা পুকুরে দেখা যাচ্ছে শাপলা ফুল। ইছাপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ শামছুল বলেন, গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহমান বুড়ি ভৈরব নদ। ছোট বেলায় দেখেছি এই নদে প্রচুর পরিমানে শাপলা ফুল ফুটতো। কিন্তু ভৈরব ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেই ফুল প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যায়। নদ খননের পর যথেষ্ট পানিতে দেখা মিলছে শাপলার।
গতকাল পাঁচনামনা গ্রামের দক্ষিণে বিলের ধারে গিয়ে দেখা যায়, বিলের পানিতে সাদা শাপলা ফুল ফুটে এক অপরুপ সৌন্দর্য বহন করছে। বিলের পানিতে শিশুরা শাপলা ফুল সংগ্রহে মেতে উঠেছে। আবার কেউ শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। এমনই দুই শিশু আমির হামজা ও সিয়াম হোসেন। তারা জানায়, বইয়ে পড়েছি শাপলা ফুল পানিতে ফুটে, কিন্তু বাস্তবে তা দেখিনি। এ বছর বিলের পানিতে প্রচুর শাপলা ফুটেছে, তাই ফুল তুলতে এসেছি।
উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদেশে রয়েছে বহু নদী-নালা খাল-বিল আর হাওড়-বাওড়। এর পানিতে যেসব ফুল গাছ জন্মায়, সেগুলোর প্রায় সবই বাংলাদেশ আর ভারতের নিজস্ব উদ্ভিদ। এ অঞ্চলের পানি, আবহাওয়া আর মৃত্তিকায় এদের উৎপত্তি ঘটেছে। সে কারণে এরা আমাদের একেবারেই নিজস্ব ফুল। শাপলা ফুলের জীবনকাল প্রায় দুই সপ্তাহ। মজার বিষয় হচ্ছে, শাপলা ফুল সবসময় খোলা অবস্থায় থাকে না। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এর পাপড়ি। শাপলা ফুল গোলাকার ফল বীজে ঠাসা। স্থানীয়রা তাকে ঢ্যাব বলে চেনে। এই ঢ্যাব সংগ্রহ করে তার মধ্য হতে বীজ বের করে রোদে শুকিয়ে ভেজে নিলে সুন্দর খৈ হয়। শাপলার নলের তরকারি বেশ জনপ্রিয়। এর বেশ কদরও রয়েছে।