কালীগঞ্জে রাতের আঁধারে কৃষকের ক্ষেতের ফসল কেটে বিনষ্ট করছে দুর্বৃত্তরা !

0

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সম্প্রতি ফসলি তে বিনষ্টের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবৃর্ত্তরা রাতের আঁধারে একের পর এক নৃশংসভাবে ধরন্ত -ফলন্ত তে নষ্ট করছে। কৃষকেরা ধারদেনার মাধ্যমে ফসল চাষ করার পর ভরা তে নষ্ট হওয়ায় তারা একেবারে পথে বসে যাচ্ছেন। কে বা কারা লোকচুর আড়ালে এমন জঘন্যতম কাজটি করছে সে বিষয়ে স্পষ্টতা থাকছে না। ফলে তিগ্রস্তরা নির্দিষ্টভাবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করতে পারছেন না। চলতি বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত ১১/১২টি এমন ঘটনা ঘটলেও মাত্র ৩টি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে থানায়। তাই এমন জঘন্য তিকর কাজ করেও দুর্বৃত্তরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে প্রায়ই তে নষ্টের ঘটনা ঘটায় সবজি েেতর মালিকেরা রয়েছেন অজানা এক আতঙ্কে। প্রশাসন বলছে, ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, গোষ্ঠিগত বিরোধের জেরে এমনটি হয়ে থাকে। তবে এটাকে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা হতে পারে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন। ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে শত্র“তা করে মানুষের অগোচরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সবজি তে কেটে সাবাড় করা হয়েছে। পুকুরে কখনো কখনো কীটনাশক গ্যাস বড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ নিধন করছে দুর্বৃত্তরা। কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলেও সমাজের গুটি কয়েক হীন মানসিকতার মানুষ দ্বারা তাদের স্বপ্ন ভাঙছে । তারা বলছেন, শত্র“তার মাধ্যমে কৃষকের ভরা তে নষ্ট হচ্ছে। এটা মনুষ্যত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত ২০ জুন বাবরা গ্রামের আলী বকসের ২ ছেলে কৃষক টিপু সুলতান ও শহিদুল ইসলামের ১৫ কাঠা জমির কাঁদিওয়ালা কলাগাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ৩ জুলাই মল্লিকপুর গ্রামের মল্লিক মন্ডলের ছেলে সবজি চাষি মাজেদুল মন্ডলের বেথুলী মাঠের আড়াই বিঘা জমির ৩ শতাধিক ধরন্ত পেঁপে গাছ কেটে দেয়। এর ঠিক ৪ দিন পরে ৭ জুলাই পৌর এলাকার ফয়লা গ্রামের তাকের হোসেনের ছেলে আবু সাঈদের ১৫ শতক জমির ধরন্ত করলা তে কেটে দেয়। ১৩ জুলাই বারোবাজারের ঘোপ গ্রামের মাহতাব মুন্সির ছেলে আবদুর রশিদের দেড় বিঘা জমির সিমগাছে কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দেয়। ৯ আগস্ট তিল্লা গ্রামের সতীশ বিশ্বাসের ছেলে কৃষক বিকাশ বিশ্বাসের ১৫ শতক ধরন্ত করলা তে কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ আগস্ট সাইটবাড়িয়া গ্রামের মাছচাষি ইউপি সদস্য কবিরুল ইসলাম নান্নুর পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে প্রায় দেড় লাধিক টাকার মাছ নিধন করে। এর ৩ দিন পর ৩১ আগস্ট একই ইউনিয়নের রাড়িপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের ৪৮ শতক মুল্যবান দার্জিলিং লেবু ও থাই পেয়ারার কলম কেটে দেয় দূর্বৃত্তরা। এর আগে ২৫ আগস্ট বলরামপুর গ্রামের মাছচাষি মমরেজ আলীর পুকুরে একইভাবে বিষ দিয়ে প্রায় ২ লাধিক টাকার মাছ মেরে দেয়। ৬ সেপ্টেম্বর সাইটবাড়িয়া গ্রামের আনছার আলী মোল্যার ছেলে হতদরিদ্র কৃষক বাপ্পি মোল্যার ৯ শতক ধরন্ত বেগুন তে কেটে দিয়ে সর্বশান্ত করে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার খয়েরতলা গ্রামের রফি বিশ্বাসের পুকুরে গ্যাস বড়ি প্রয়োগ করে লাধিক টাকার মাছ নিধন করে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার চাপালী গ্রামে মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে আতিয়ার রহমানের ১ বিঘা জমির লাউ গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
তিগ্রস্ত মাছচাষি সাইটবাড়িয়া গ্রামের কবিরুল ইসলাম নান্নু জানান, ধারদেনার মাধ্যমে মাছ চাষ করেছিলেন। পুকুরের মাছও বেশ বড় হয়েছিল। কিন্তু রাতের আঁধারে কে বা কারা পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে লাধিক টাকার মাছ মেরে দিয়েছে। সকালে পুকুর থেকে মরা মাছ তোলার সময় গ্যাস বড়ি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি কারও শত্রু হতে পারেন অথবা তার কোন অপরাধ থাকতে পারে কিন্তু পুকুরের মাছগুলো কী অপরাধ করেছে ? তাছাড়াও একজনের তি করে তাদেরই বা কী লাভ ? এখন কোনভাবেই তি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। নান্নু আরও জানান, রাতের আঁধারে কে বা কারা মাছ নিধন করেছে। তিনি কাউকে দেখেননি ফলে শুধু থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেছেন। তিগ্রস্ত কৃষক আবদুর রশিদ জানান, আমি একজন সবজি চাষি। মাঠে অন্য ফসলের সাথে দেড় বিঘা জমিতে সিমের চাষ করেছিলেন। সতেজ গাছগুলো বানে উঠে লতিয়ে ফুল ধরা শুরু হয়েছিল। কিছুদিন পরেই সিম তোলা যেতো। কিন্তু শত্র“তা করে কে বা কারা রাতের আঁধারে গাছ বিনাশকরা কীটনাশক স্প্রে করে েেতর সব সিমগাছ পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, তার জানামতে তিনি কারো তি করেননি। সারাদিন চাষকাজে ব্যস্ত থাকেন। সে কারণে মনে করেন তার কোন শত্র“ নেই। তে নষ্ট করার পর এলাকাবাসীর সাথে নিজেও হতবাক হছেন। তারা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। সে কারণে ঝামেলা এড়াতে থানা পুলিশ করেননি। সাইটবাড়িয়া গ্রামের তিগ্রস্ত আরেক কৃষক বাপ্পি মোল্যা জানান, মাঠের ৯ শতক জমিই তার একমাত্র সম্বল। সারাবছর পরের েেত কামলার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে বিকেলে নিজের ওই জমিটাতে বেগুন লাগিয়ে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করেন। েেতর বেগুন গাছগুলোতে বেগুন ধরা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ধরন্ত বেগুন তে ধারালো কিছু দিয়ে মাটি সমান করে কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। না দেখে অনুমান নির্ভর হয়ে কাউকে দোষারোপও করতে পারছেননা। তে নষ্ট হওয়ার ফলে তিনি আর্থিকভাবে চরম তিগ্রস্ত হয়েছেন। যে তি কাটিয়ে উঠতে তার অনেক সময় পার হবে। তিনি বলেন, যারা কৃষকের ভরাতে নষ্ট করতে পারে সমাজের দুষ্টু প্রকৃতির এই মানুষগুলো সব ধরণের অপরাধমুলক কাজ করতে পারে। এমন জঘন্য কাজ করা শুধুমাত্র জঘন্য মানসিকতার মানুষদের পইে সম্ভব। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, কৃষকের ভরা তে কেটে দেয়ার মত তি পুশিয়ে ওঠার নয়। সম্প্রতি এমন ঘটনার কথা শুনছেন। কিন্তু দুষ্টু প্রকৃতির এ মানুষগুলোর বিরুদ্ধে তিগ্রস্থরা সন্দেহ করলেও তা অনুমান নির্ভর হওয়ায় কেউ অভিযোগ দিতে চাচ্ছেন না। বিগত ৩/৪ মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলহানি ঘটলেও মাত্র ৩ জন থানায় সাধারন ডাইরি করেছেন। তারাও বলতে পারছেন না কারা এমন জঘন্য কাজ করছে। ফলে এক ধরনের জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। তারপরও পুলিশ সামাজিক ও গোষ্টিগত বিরোধ, সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে এটা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। তবে এটা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কোন বিশেষ মহল করছে কিনা সেটাও উড়িয়ে না দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল যারা রাতের আঁধারে বিনষ্ট করছে তারা মনুষ্যত্বহীন পশুর মত। ভরাতে নষ্ট হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের তিগ্রস্থ কৃষকেরা পথে বসে যাচ্ছেন। যে বিরোধের জের ধরেই হোক না কেন কৃষকের তি কোনভাবেই কাম্য নয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, একজন কৃষকের ভরা তে নষ্ট হলে তার পাঁজর ভেঙে যায়। যারা তে নষ্ট করছে তাদের কোন লাভ হচ্ছে না। তবে যাদের তে নষ্ট হচ্ছে তারা নিঃস্ব হচ্ছে। রাতের আঁধারে কৃষকের ভরাতে নষ্ট করাটা এক ধরণের বর্বরতা, নৃশংসতা, যা কোন মানুষের পইে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিষয়টি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারা এমন অমানবিক কাজ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান এই সংসদ সদস্য।