নিজেদের করোনা আক্রান্ত ভাবা অর্ধেক বৃটিশই আক্রান্ত নন: গবেষণা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) উপসর্গে ভোগা অর্ধেক বৃটিশই আদতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত নন। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, জ্বর বা কাশির মতো উপসর্গে ভোগা ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত নাও হতে পারে। করোনার বিভিন্ন উপসর্গে ভোগার কারণে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন-এমনটা ভাবা ১০০০ ব্যক্তির ওপর চালানো এক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে। এ গবেষণা চালিয়েছে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই)। এ খবর দিয়েছে দ্য ডেইলি মেইল।
পিএইচইকে উদ্ধৃত করে দ্য মেইল জানায়, গবেষণাটিতে অংশ নেওয়া ৪৯ শতাংশ মানুষের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। অর্থাৎ, তাদের রক্তে ভাইরাসটি মোকাবিলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশ্য, কেবল অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমেও কেউ আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা তা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
রক্তের পাশাপাশি টি-সেলের মতো দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যান্য অংশও ভাইরাস মোকাবিলা করে থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে না। যদিও বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই ভাইরাস মোকাবিলা করতে দেহে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সে অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমে যায়। তাই দেরিতে পরীক্ষা করা হলে অনেকের ক্ষেত্রে ওই অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ধরা নাও পড়তে পারে।
তবে সকল দিক বিবেচনা সত্বেও গবেষকদের ধারণা, বৃটেনে নিজেকে করোনা আক্রান্ত মনে করে পরীক্ষার জন্য আবেদনকারী অর্ধেক জনসংখ্যাই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত থাকেন না। গ্রীষ্মের সময়ে চালানো এই গবেষণা আগামী শীতে বৃটেনের করোনা পরীক্ষা পরিস্থিতি আরো প্রকট হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাধারণত শীতে বৃটেনজুড়ে বহু মানুষ করনা-সদৃশ উপসর্গে ভুগেন। জ্বর, কাশি, সর্দি শীতকালের নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু চলতি বছর করোনা মহামারির মধ্যে এসব উপসর্গ ভিন্ন প্রভাব ফেলবে। মানুষজন বেশি করে পরীক্ষা করতে চাইবে। পরীক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
পিএইচই’র মাঠ পর্যায়ের মহামারি বিষয়ক ফেলো ও সাম্প্রতিক গবেষণার প্রধান গবেষক রানিয়া মুলচন্দনী বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা এমন প্রায় ১০০০ মানুষকে পরীক্ষা করেছি, যারা করোনা-সদৃশ উপসর্গে ভোগার কারণে নিজেদের আক্রান্ত ভেবেছেন। আমরা দেখেছি যে, তাদের অর্ধেকের মধ্যেই আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তাদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গেছে।
তিনি বলেন, এখনো এই গবেষণার ফলাফল পিয়ার-রিভিউ হয়নি, তবে এটা খুবই সম্ভব যে বিশাল সংখ্যার মানুষ নিজেদের করোনা আক্রান্ত ভেবে ভুল করেন। কেউ পূর্বে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন মনে করলেও, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা সরকারি নির্দেশনা মেনে চলেন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন।
গবেষকরা সবমিলিয়ে ৩ হাজার গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী কর্মীদের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী ও ১ হাজার ১৪৭ জন পুলিশ, দমকল ও উদ্ধারকর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘এ’ এবং পুলিশ, দমকল ও উদ্ধারকারীদের ‘বি’ দলে ভাগ করা হয়। তাদের পাশাপাশি, পূর্বে নিশ্চিতভাবে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এমন ১৫৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপরও পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের ‘সি’ দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
গবেষণা শেষে দেখা যায়, ২ হাজার ৮৪৭ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৯৪৩ জন, করোনার উপসর্গে ভোগার কারণে মনে করেছিল তারা পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও তাদের মধ্যে ৪৬৬ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ, তাদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এছাড়া, গবেষণায় আরো একটি কৌতহলোদ্দীপক বিষয় লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা দেখেছেন, যেসব অংশগ্রহণকারীদের দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তাদের মাত্র ৬৮ শতাংশ করোনার উপসর্গে ভোগার কথা জানিয়েছেন। বাকি ৩২ শতাংশ কোনো উপসর্গেই ভোগেননি।