ট্রায়াল শুরু করতে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীনের সিনোভ্যাকের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দেশে হচ্ছে- এটা ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় সুবাতাস বয়ে এনেছিল। কিন্তু এর ট্রায়াল কয়েকটি দেশে চললেও বাংলাদেশে এখনো শুরু করা যায়নি। চীন থেকে ভ্যাকসিন না আসায় ট্রায়ালের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি আইসিডিডিআর,বি’। যদিও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। ওদিকে যে সাতটি হাসপাতাল ট্রায়ালের জন্য নির্ধারিত ছিল তার অন্তত দু’টিতে ইতিমধ্যে কোভিড চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন আসার বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারছে না।
চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের ট্রায়াল ভ্যাকসিন কবে দেশে আসবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আইসিডিডিআর,বি ভালো বলতে পারবে। আমরাও অপেক্ষায় আছি। এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি’র কর্মকর্তারা বলেছেন, ট্রায়ালের ভ্যাকসিন এখনো দেশে পৌঁছেনি। ভ্যাকসিন এলে জানানো হবে। এদিকে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক দেশই কাজ করছে। এদের মধ্যে ৯টি কোম্পানি তাদের পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই ৯টি কোম্পানির অন্তত ৫টির সঙ্গে সরকারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলো থেকে সঠিক ভ্যাকসিন, সঠিক সময়ে পেতে চাই আমরা। বিশ্বের যেকোনো দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলে আমরাও বসে থাকবো না। এ বিষয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব ধরনের নির্দেশনা রয়েছে।
গত ২৭শে আগস্ট বাংলাদেশ সরকার চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয়। আইসিডিডিআর,বি এই পরীক্ষা করবে। ট্রায়ালের প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে জামান জানিয়েছিলেন, সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষের দিকে ট্রায়াল শুরু করার চেষ্টা করবেন তারা। রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে ৪ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর চীনা টিকার পরীক্ষা হবে। আইসিডিডিআর,বি এরই মধ্যে প্রায় ২৫০ মাঠ গবেষক নিয়োগ দিয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ সাতটি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরীক্ষার প্রাথমিক প্রস্তুতির ব্যাপারেও কথা বলে এসেছে। হাসপাতালগুলো হচ্ছে: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ এবং বার্ন ইউনিট-১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতাল। আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে সিনোভ্যাকের চুক্তিতে বলা আছে, পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলে সিনোভ্যাক ১ লাখ ১০ হাজার টিকা বাংলাদেশকে বিনামূল্যে দেবে। এ ছাড়া টিকা তৈরির প্রযুক্তিও বাংলাদেশকে দেয়ার কথা আছে। সিনোভ্যাকের এই টিকার নাম ‘করোনাভ্যাক’। ইতিমধ্যে ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভ্যাকের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
আইসিডিডিআরবি,র’র কর্মকর্তারা বলছেন, গবেষণাটির স্বতন্ত্র ডাটা এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। দেশি এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং বোর্ড থাকবে। যা বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের টিকার শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি দক্ষিণ কোরীয় গবেষণা সংস্থা এলএসকে পরিচালনা করবে। জাতীয় পরামর্শক কমিটিকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ট্রায়ালের আপডেট ঔষধ প্রশাসন, বিএমআরসি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হবে। যেসব স্বেচ্ছাসেবক ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করবেন তাদের কোনো আর্থিক সহায়তা করা হবে না। তবে ট্রায়ালের সময় কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেয়া হবে। এই পরীক্ষার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সিনোভ্যাক তদন্তকারী ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সমস্ত দায়বদ্ধতা গ্রহণ করবেন এবং বীমাসহ উপযুক্ত দায়বদ্ধতা নেবে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন, রাশিয়া, ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে টিকা আনার সম্ভাব্য বিকল্প পথ খুঁজে দেখছে। কোভ্যাক্সের (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস) মাধ্যমে টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকা দেশে আনতে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশের খ্যাতিনামা বৃহৎ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
গত ২৬শে আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক আলোচনা সভায় করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে জানতে চাইলে টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে। বিশ্বের কিছু কিছু দেশে ইতিমধ্যেই তাদের জনসংখ্যার চেয়ে ৫ গুণ বেশি ভ্যাকসিনের জন্য অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে হু’র মাধ্যমে টিকা পেলেও আসবে কয়েক দফায়। লাগবে দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে প্রথম দফায় করোনায় সম্মুখ যোদ্ধা যারা তারা পাবেন ৫১ লাখ ভ্যাকসিন। দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ হারে প্রথমে এটা পাওয়া যাবে। এরপর যাদের বয়স বেশি (৬০-বছরের উপরে) এবং জটিল রোগে (কো-মরবিডিটি) ভুগছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন। ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য গত ৯ই জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে ২০ শতাংশ হিসাবে উল্লিখিত মোট ভ্যাকসিন আসবে দেশে। দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ২০ শতাংশ হারে এই টিকা পাবে। ডিসেম্বরে টিকা উৎপাদন হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি এই টিকা হাতে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবকিছু নির্ভর করছে টিকা উৎপাদানের উপর। ২০ শতাংশ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, এটা কো-ফাইন্যান্সিং হিসেবে আসবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, বাকি প্রায় ১৪ কোটি লোকের ভ্যাকসিন কোথা থেকে আসবে, তা এখনই বলা যাবে না। এজন্য সরকার যোগাযোগ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।