মহেশপুরে প্রথমবারের মতো পুকুরে মনিপুরি ইলিশের চাষ

0

জিয়াউর রহমান জিয়া, মহেশপুর (ঝিনাইদহ) ॥ বাজারে প্রায় সময়ই ইলিশ মাছের দাম চড়া। ইচ্ছা থাকলেও সবার কেনার মতা নেই। আবার বছরের অধিকাংশ সময় ঠিকমতো ইলিশ পাওয়াও যায় না। জাতীয় এই মাছটির স্বাদ অনেকের কাছেই আজ অচেনা। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে ঝিনাইদহের মহেশপুরে শুরু হয়েছে মনিপুরি ইলিশের চাষ। মাছটির মাথার অংশ ইলিশের আর পেছনের অংশ পুটি মাছের মতো। স্বাদ ও গন্ধে পুরোটাই ইলিশ। অনেকে মাছটিকে পেংবা বলেও চেনেন। মৎস্য চাষিরা জানান, এ বছরই তারা প্রথম এই মনিপুরি ইলিশের চাষ করেছেন। মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ও পান্তাপাড়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে প্রায় অর্ধশত পুকুরে ১২ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। দু’মাস আগে পোনা ছেড়ে আশা করছেন ৭ থেকে ৮ মাস বয়স হলেই বাজারে তুলতে পারবেন। মিঠাপানিতে উৎপাদিত এই মাছ বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি হলে ইলিশের চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। মৎস্য বিভাগ বলছে, তারাও আশাবাদী। এই মাছ চাষে ইলিশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি চাষিরাও লাভবান হবেন।
সরেজমিন পুকুরে গিয়ে কথা হয় একাধিক মৎস্য চাষির সাথে। তারা জানান, মহেশপুর উপজেলায় প্রচুর বিল-বাঁওড় ও পুকুর রয়েছে। এখানে প্রচুর মাছ চাষ হয়। এই মাছ চাষিদের একজন পান্তাপাড়া গ্রামের আলিউজ্জামান প্রথম এই মনিপুরি ইলিশ তাদের এলাকায় নিয়ে আসেন। এর আগে কেউ এই মাছের চাষ সম্পর্কে বুঝতেন না। তুলসীতলা গ্রামের মৎস্য চাষি আব্দুল আলিম জানান, পান্তাপাড়া ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের তুলসীতলা ও বাগানমাঠ গ্রামে অর্ধশত পুকুরে এই মনিপুরি মাছের চাষ হয়েছে। অলিমুজ্জামান প্রথমবারের মতো মাছটি এই এলাকায় নিয়ে আসলেও বর্তমানে আয়াত আলী, আত্তাব আলী, সজিব হোসেন, ওসমান গণী, জায়েদ আলী, আব্দুর রহিম, নয়ন মিয়া, সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, ইদ্রিস আলী, মনিরুল ইসলাম, মকছেদ আলী, জুলমত আলী, আলিউজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন এই মাছের চাষ করেছেন। প্রথম বছরেই এই পুকুরগুলোতে ১২ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। আব্দুল আলিম আরো জানান, তিনি ৪ বিঘা জলাকারের একটি পুকুরে ৬০ হাজার পোনা ছেড়েছেন। এই মাছের বয়স ৭ থেকে ৮ মাস হলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। তখন একটি মাছের ওজন হবে ৪ থেকে ৬ শ’ গ্রাম। তিনি বলেন, অন্য সব মাছের মতোই এর খাবার দিতে হয়, তবে খাবার একটু বেশি প্রয়োজন হয়। এই মাছ দ্রুত বড় হয়।
মো. আলিউজ্জামান জানান, বাংলাদেশে এবারই প্রথম পেংবা বা মনিপুরি ইলিশের চাষ হচ্ছে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে এই মাছের পোনা আমদানি করেন। তিনি জানান, মাছটি ভারতের মনিপুরি রাজ্যে চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সেখানে ৮ শ থেকে ৯ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই মাছ। ইলিশের সংকটে জামাইষষ্ঠীতে এই মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকে। সেখান থেকে ময়মনসিংহের একটি হ্যাচারি মালিক ২০১৯ সালে মা মাছ সংগ্রহ করেন। এরপর সেই মাছ থেকে ডিম সংগহ করে পোনা তৈরি করেছেন। এই পোনা তিনি প্রথম সংগ্রহ করে নিজ এলাকায় নিয়ে আসেন। বর্তমানে তার পুকুরে ২ লাখ পোনা বড় হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তার এই চাষ দেখে এলাকার অনেক চাষি এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ পোনা বড় হচ্ছে তিন গ্রামের অর্ধশত পুকুরে।
আনোয়ার হোসেন নামের এক মৎস্য চাষি জানান, তারা নতুন জাতের এই মাছের চাষ করেছেন। যেখান থেকে পোনা সংগ্রহ করেছেন তারা জানিয়েছেন এই মাছটি ভারতের মনিপুরি রাজ্যে চাষ হচ্ছে। তারা ইলিশের বিকল্প হিসেবে এই মাছ চাষ করে থাকেন। তবে নতুন জাত হওয়ায় এর বাজারমূল্য কত হবে তা নিয়ে চিন্তিত মৎস্য চাষিরা। তারা আশা করছেন, ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে তারা লাভবান হবেন। ময়মনসিংহ জেলার বন্ধন হ্যাচারির মালিক কামাল হোসেন জানান, তারা এ বছর পেংবা মাছের পোনা ছেড়েছেন। প্রায় ১৫ লাখ পোনা বিক্রি করেছেন। যার বেশিরভাগই ঝিনাইদহে দেওয়া হয়েছে। তাদের এলাকায় সামান্য কিছু চাষ হয়েছে। তিনি আরো জানান, মাছটি একেবারেই নতুন জাত। যে কারণে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার অপোয় আছেন। তবে ভারতে মনিপুরি ইলিশ হিসেবে ব্যাপক প্রচলিত রয়েছে মাছটি। এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, মাছটি চাষিরা সংগ্রহ করলেও তারা সার্বণিক দেখভাল করছেন। কখন কী পরিচর্যা করতে হবে তা দেখিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, মাছটি পেংবা বলেও অনেক স্থানে পরিচিত। তবে ভারতের মনিপুরি রাজ্যে এর বেশি চাষ হওয়ায় এটি মনিপুরি ইলিশ হিসেবে পরিচিত। মাছটিতে ইলিশের স্বাদ থাকায় ইলিশের চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। বাজারে একটু দাম পেলে চাষিরাও লাভবান হবেন।