৩ মাস বেতন নেই সুগার মিলে, পড়ে আছে ২১ কোটি টাকার চিনি

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চলছে চরম দৈন্যদশা। মিলের গুদামে ২১ কোটি টাকার চিক্রি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া মিলের ট্যাংকে ও পুকুরে পড়ে রয়েছে ৭ কোটি টাকার চিটাগুড়। আখ চাষিদের পাওনা বকেয়া রয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিলের ৮৫০ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনভাতা পাচ্ছেন না। তবে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর জানিয়েছেন, ধীরগতিতে চিনি বিক্রির কারণে এমনটি সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও পর্যায়ক্রয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও চাষিদের আখের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। চিনি বিক্রি হলে সব সমস্যা কেটে যাবে। এদিকে সুগার মিলে আখ দিয়ে সময় মতো টাকা না পাওয়ায় অনেক চাষি আখ চাষ থেকে মুখ ফিরেয়ে নিচ্ছেন।
সুগারমিল সূত্রে জানা গেছে, চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিলের গুদামে ২১ কোটি টাকার ৩৫০০ মেট্রিক টন চিনি পড়ে আছে। এছাড়া মিলের ট্যাংকে ও পুকুরে পড়ে আছে ৭ কোটি টাকা মূল্যের ৩৫০ হাজার মেট্রিক টন চিটাগুড়। এসব চিনি ও চিটাগুড় ঠিকমতো বিক্রি না হওয়ার কারণে মিলের ৮৫০ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। সুগারমিলের প্রশাসন বিভাগের অফিস সহকারী আব্দার রহমানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, সর্বশেষ তারা মে মাসের বেতন পেয়েছেন। তিন মাস যাবত তারা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। চলতি মাস দিয়ে প্রায় ৪ মাস বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। তারা আরও জানান, মিলের গোডাউনে ২১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে না বলে তারা বেতন পাচ্ছেন না। বেতন ভাতা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ৪ মাস বেতন না পাওয়ায় অনেকে বাজারে দেনা হয়ে পড়েছেন। চাল, ডাল, ক্রয় ও ছেলে মেয়েদের খরচ দিতে পারছেন না।
গত মৌসুমে সুগার মিলে আখ বিক্রি করে কৃষকরা তাদের বিক্রিত আখের মূল্য এখনও পাননি। বকেয়া টাকার জন্য তারা প্রায়ই মিলে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিল কর্তৃপক্ষ তাদের বকেয়া টাকা দিতে পারছেন না। এ কারণে অনেক চাষি আখ রোপণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দিন দিন কমে যাচ্ছে আখ চাষ। যার কারণে মিলটির উৎপাদন কার্যদিবস কমে যাবে এবং আরও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে অভিজ্ঞজনরা মনে করেন। মিলের বিগত কয়েক বছরের চিত্রে আখ রোপণ কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। ২০১০-১১ মৌসুমে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে অর্জন হয় ৭ হাজার ৪৫৪ একর। ২০১১-১২ মৌসুমে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখান অর্জন হয় ৭ হাজার ৮ একর। ২০১২-১৩ মৌসুমে ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অর্জন হয় ৮ হাজার ৫০০ একর। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখান অর্জন হয় ৩ হাজার ৩২৬ একর। ২০১৪-১৫ মৌসুমে মিলটি ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সেখানে অর্জন হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৩ একর। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ১০ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অর্জন হয় ৪ হাজার ৯৪১ একর। ২০১৬-১৭ মৌসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার একর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৮০ একর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ৫০০ একর জমিতে। সেখানে অর্জন হয় ৬ হাজার ৫ একর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ হাজার একর জমিতে। সেখানে অর্জিত হয় ৮ হাজার ৪০০ একর।
মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ডিজিএম আনোয়ার হোসেন জানান, যথাসময়ে চাষিদের আখের টাকা দিতে না পারায় আখ চাষ কমে যাচ্ছে। চাষিদের গত মৌসুমের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। এছাড়া পরিবহন, শ্রমিক সমস্যাসহ বর্তমানে কৃষকরা স্বল্প মেয়াদি ফসল করতে আগ্রহী হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদি ফসল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর জানান, চিটাগুড় বিক্রির জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। টন প্রতি ১৮ হাজার টাকা দর পাওয়া গেছে। কিন্তু চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নির্দেশ রয়েছে টন প্রতি ২২ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। তাই চিটাগুড়ও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ধীরগতিতে চিনি বিক্রির কারণে সময়মতো চাষিদের আখের বকেয়া টাকা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হলে সব সমস্যা কেটে যাবে।