দুর্নীতিমুক্ত হোক মিডডে মিল

0

শিক্ষা যে কোন জাতির প্রাণশক্তিই শুধু নয় জীবনগড়ারও নিয়ামক হাতিয়ার। সেটা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিার সর্বশেষ পর্যায়কেও বিবেচনায় রাখা হয়। প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নজরকাড়া। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম পর পর দুই বছরের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেছে, সমতাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ সারা দুনিয়ায় শীর্ষ স্থানে। আগের তুলনায় প্রাথমিক শিার্থীদের ঝরে পড়ার হারও নিম্নগামী। এমন অভাবনীয় অর্জনের মাঝপথে করোনা সঙ্কট তার সর্বনাশা থাবায় যে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে, সেখানে প্রাথমিক শিাও পড়েছে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। ব্র্যাক বাংলাদেশে প্রাথমিক শিার্থীদের ওপর এক জরিপে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, করোনার দুঃসহ সংক্রমণে শিা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে কোমলমতি প্রাথমিক শিার্থীরা। যারা বেতার কিংবা সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদান থেকেও প্রায় বঞ্চিত। সঙ্গত কারণেই হতদরিদ্র পিতামাতারা তাদের ঘরে বসে থাকা শিশুদের বিভিন্ন শ্রম-মজুরিতে কাজে লাগাচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে ঝরে পড়ার দৃশ্যও উঠে আসছে। ইউনিসেফ বৃহত্তর এশিয়ার ওপর জরিপ চালিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানেও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান এই ঝরে পড়া শিশুশ্রমের আধিক্য। বিশ্ব সংস্থার এই শিশু সংগঠনটি সতর্কও করেছে করোনাকালে যে হারে দারিদ্র্যতা বাড়ছে তাতে ৪ গুণ বাড়ার আশঙ্কা শিশু শ্রমের। করোনার দুঃসময়ে এমন বিপর্যয়কে ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এসেছে উপবৃত্তির সংখ্যা এবং পরিমাণ বাড়ানোর। আরও কিছু বাড়তি সুবিধা সংযোগ করা যাতে এই ঝরে পড়াকে রোধ করা যেতে পারে। সে হিসেবেই বিবেচনায় আনা হয়েছে প্রাথমিক শিার্থীদের জন্য মিডডে মিল। আর এ জন্য সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি এক বৃহৎ পরিকল্পনায় ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার কর্মসূচী হাতে নিতে যাচ্ছে। করোনাকালে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব অর্থনীতি এখন চরম হুমকির মুখে। অসহনীয়ভাবে হতদরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, সেও এক মহাদুর্বিপাক। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাড়তি খরচ কমানোও বিশেষ দায়বদ্ধতা। কিন্তু কোমলমতি শিশুদের এই দুপুরের খাবার প্রকল্পে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার প্রশিণের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাত্রা নিয়ে তুমুল বিতর্ক উঠেছে। বিদেশ ভ্রমণ করা হবে মূলত উন্নত দেশের খাবার ব্যবস্থাপনাকে সরেজমিনে জরিপ করতে। কৃচ্ছ্র সাধনের এই সময়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইরে প্রশিণ নিতে যাওয়া প্রায় কেউই ভাল চোখে দেখছে না। দুপুরের খাওয়া হিসেবে মেন্যুতে রয়েছে তিন দিন বিস্কুট আর বাকি দিনগুলোতে খিচুড়ি। আপত্তির মুখে প্রাথমিক ও গণস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, খিচুড়ি রান্না শিখতে মোটেও বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। বরং শিশুদের বিদ্যালয় সংক্রান্ত খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপযোগী বিষয়টি প্রত্যভাবে অবলোকন করতে এই সফরকে বিবেচনায় আনা হয়েছে। তবে দেশের অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মাটিতেই মাঠপর্যায়ে এই প্রশিণ দেয়া যেতে পারে। তবে সেটার জন্যও ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পাঁচ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিার্থীর এই খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় বিদেশ সফরের চাইতেও বেশি প্রয়োজন মানসম্মত পুষ্টিকর খাদ্য (ডিম, মাছ, মাংস) সরবরাহ করা। যা আগামীর ুদে প্রজন্মকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করতে সর্বাধিক ভূমিকা রাখবে। সংশ্লিষ্ট সচিবও উল্লেখ করেছেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তা মোটেও অপচয় হবে না। বরং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় সফররত কর্মকর্তারা দ হিসেবে নিজেদের পারদর্শিতা বাড়াতে সম হবেন। বিদেশ গমনের পরিকল্পনায় কয়েক শ’ কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানা যায়। সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিার্থীর জন্য সরকার কর্তৃক দুপুরের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি নিজের দেশে বসেই করা অসম্ভব কিছু নয়। সচিব মহোদয় মনে করেন, এই বিশাল কর্মযজ্ঞে যদি উন্নত দেশের কিছু ব্যবস্থাপনা সংযুক্ত করা যায়, তেমন উদ্দেশ্যেই এই বিদেশ গমন কর্মসূচী। পুরো প্রকল্পটি এখনও অনুমোদনের অপোয়। জাতীয় অর্থনৈতিক তহবিল (একনেক) এই মেগা কর্মযোগকে অনুমোদন করলেই জানুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে। পুরো প্রকল্পটি যাতে কোনভাবেই অনিয়ম-দুর্নীতির জালে আটকে না যায় সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। শিশুদের খাদ্য বিতরণে কোন অনিয়ম কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সচেতন দায়বদ্ধতার প্রয়োজন আছে।