মৃত ৫৬ জনের মধ্যে ১৯ শনাক্ত : জ্বর হলেই রোগী পাঠানো হয় করোনা ওয়ার্ডে : মেলেনা যথাযথ চিকিৎসা

0

বিএম আসাদ ॥ জ্বর হলেই মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। তারপরও যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসকগণ তা মানছেন না। শরীরে একটু জ্বর দেখা দিলেই জরুরি বিভাগ থেকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। অথচ, সেখানে রয়েছে চিকিৎসার চরম সংকট। অনেকে মারাও যাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পলিয়নপুর গ্রামের বিশারত আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি জন্ডিস, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। মহেশপুরের কিওর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার পেটের নাড়ী পেচিয়ে গেছে বলে প্যাথলজি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কারণে তার শরীরে উত্তাপ বেড়ে যায়। জ্বর আসে। এ অবস্থায় প্যাথলজি রিপোর্টসহ রোগী নিয়ে তার জামাতা মঞ্জুরুল ইসলাম গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আনেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তার সব রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন। রোগীর স্বজনরা জানান তিনি করোনায় আন্তান্ত হননি। বিভিন্ন সময় প্রাইভেট কিনিকে রোগী দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোন চিকিৎসক তাকে করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেননি। অন্য সমস্যার কারণে বিশারত মাঝে মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হন। সেভাবে তারা তাকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এসব বলার পরও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন তা মানতে চাননি। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বিশারত আলীকে সন্দেহজনক করোনা রোগী হিসেবে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সেবিকাগণ সকল ১০টা ১০ মিনিটে রোগী রিসিভ করেন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডের ৮নং বিছানায় দেন। রোগীর রেজিস্ট্রেশন নং-৩৩৪৫৭/২৪। এ ওয়ার্ডে লোকজন ইচ্ছামত যেতে পারেন না। চিকিৎসক রাতে দেখবেন বলে ওয়ার্ড থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। জামাই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের লোকজনের কথা অনুযায়ী সারাদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসবেন না। তাই যদি হয়, তাহলে করোনা ওয়ার্ড থেকে রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। এ কথ বলে জোরপূর্বক ছাড়পত্র নিয়ে জামাই মঞ্জুরুল ইসলাম হাসপাতাল হতে বিশারত আলীকে কোটচাঁদপুরে নিয়ে যান। সেখানে আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজি পরীক্ষা করান এবং ডাঃ মুসফিকুর রহমানের কাছ থেকে চিকিৎসা করিয়ে রোগী বাড়িতে নিয়ে যান। কোটচাঁদপুরে প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা করানোর পর বিশারত আলী পূর্বের তুলনায় ভাল রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছেন, শুধু বিশারত আলী নন, কোন রোগী জ্বরে আক্রান্ত হলেই জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। আর যেখানে চিকিৎসার মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়। করোনা ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত ৫৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের ভেতর সকলেই করোনা রোগী ছিলেন না। নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ১৯ জনের শরীরে মৃত্যুর পর করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকি ৩৭ জন ছিলেন করোনামুক্ত। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকগণ বিশারত আলীর মতো অন্যদেরও করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। চিকিৎসা সংকটের কারণে তাদের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে আরএমও ডাঃ মোঃ আরিফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইসোলেশন ওয়ার্ডে মৃত ৫৬ জনের মধ্যে ১৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছেন। জ্বর হলেই করোনায় আক্রান্ত নন। তারপরও কেন সকল জ্বরের রোগী করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ আরিফ আহমেদ বলেন, জরুরি বিভাগে যে চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগী ভর্তি করা হয়। বিশারত আলীকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেছিলেন, ডাঃ দেলোয়ার হোসেন। তিনি দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, জ্বর হলেই করোনায় আক্রান্ত নন একথা ঠিক। তারপরও যদি হয়ে বসে তাহলে কি হবে? জ্বরে আক্রান্তদের আইসোলেশনে রেখেই চিকিৎসা করতে হবে।