যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল: করোনার অজুহাতে ওষুধ কিনতে পারেনি কর্তৃপক্ষ ব্যর্থতা ঢাকতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তালিকা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রোগীদের ওষুধ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রোগীদের আগের মতো ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। এদিকে, সরকারি বিনামূল্যের ওষুধের নাম যাতে মানুষ জানতে না পারে সে জন্য হাসপাতাল ফার্মেসি ও ওয়ার্ডে থাকা ওষুধের তালিকা সম্বলিত বোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে কি কি ওষুধ সরকার থেকে দেয়া হয়, তা জানাতে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ওষুধের লিষ্টসম্বলিত বোর্ড টাঙিয়ে দেয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ওই বোর্ড আর পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বোর্ডগুলো দেয়াল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এর ফলে হাসপাতালে বিনামূল্যের সরকারি কি কি ওষুধ রোগীদের দেয়া হয়ে থাকে তা মানুষ জানতে পারছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যে এ কাজটি করেছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রোগীরা হাসপাতালে এসে যেমন চিকিৎসা সংকটে ভুগছেন, তেমনি ভুগছেন ওষুধ সংকটে। এর ভেতর মার্চ থেকে শুরু হয় করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এপ্রিলে একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হলে সকল চিকিৎসক রোগী দেখলেই পালাতে থাকেন করোনা রোগী হতে পারে এ সন্দেহে। এক পর্যায়ে বহিঃবিভাগের সরকারি চেম্বারে চিকিৎসা দেয়া বন্ধ করে দেন চিকিৎসকগণ। হাসপাতাল প্রশাসন ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মিটিং-সিটিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমএসআর দ্রব্য ক্রয়ের টেন্ডার আহ্বান থেকে বিরত থাকেন। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি-এর ওষুধের উৎপাদন কমে যায়। এসব সমস্যার কারণে হাসপাতালে দেখা দেয় ওষুধের মারাত্মক সংকট। বর্তমানে ইডিসিএল থেকে যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে তা দিয়ে রোগীদের বিদায় করা হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর সাথে এমএসআর টেন্ডারের মাধ্যমে বাইরের ওষুধ যোগ হলে রোগীর যথেষ্ট চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু তা হচ্ছে না। অর্থ বছরের শেষ সময়ে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও ওষুধ ক্রয় সম্ভব হয়নি। এ খাতের লাখ লাখ টাকা হাসপাতাল থেকে ফেরত যায় সরকারি কোষাগারে। কর্তৃপক্ষের এ ব্যর্থতার কারণে যশোরের মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছে না। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাদের বাইরের ফার্মেসি হতে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। স্বচ্ছল লোকজন ওষুধ কিনে চিকিৎসা নিতে পারলেও বেকায়দায় পড়েছেন অস্বচ্ছল পরিবারের লোকেরা। বেশিরভাগ দুস্থ ও গরিব মানুষ আসেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু ওষুধ সংকটের কারণে তারা হাসপাতাল থেকে তেমন সহায়তা পাচ্ছেন না। হাসপাতালে ইডিসিএল লিঃ হতে দেয়া গ্যাসের ক্যাপসুল প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ইন্ডোমেথাসিন, মেট্রোনিডাজল, হিস্টাসিন, এন্ডাসিড, সিপ্রোসিনসহ ২০/২৫ প্রকার ওষুধ দেয়া হচ্ছে রোগ অনুসারে। তাও ঠিকমতো থাকে না। চোখের ভালো কোন ওষুধ নেই। সিপ্রোসিন, ক্লোরোফেনিকল ড্রপ, জিংক, সেফিক্সিন ওষুধ মাঝে মধ্যে সরবরাহ করা হয়। শিশুদের জন্য অ্যামোস্ক্রসিলিন, স্যালবুটামল, প্যারাসিটামল সিরাপ, এ্যাব্রোস্কলসহ ভালো ভালো ওষুধ দেয়া হতো আগে। বয়স্কদের অনেক ওষুধ রয়েছে, যা আগে দেয়া হতো অথচ, এখন দেয়া হচ্ছে না। ওষুধের এসব সংকট ঘটেছে সময়মতো টেন্ডার আহ্বান না করার কারণে। এসব ব্যর্থতা ধামাচাপা দেয়ার জন্যে ওষুধের তালিকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ব্যর্থতা ঠিক না। করোনা পরিস্থিতিতে সময়মতো টেন্ডার করা যায়নি। টাকা ফেরত গেছে অর্থবছর শেষ হওয়ার কারণে। আবার সত্ত্বর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সংস্কার কাজ চলছে। তাই ওষুধের তালিকা সরিয়ে রাখা হয়েছে। ওষুধের তালিকা সম্বলিত বোর্ড সরবরাহকারী সনাকের সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি লোকসমাজকে বলেন, এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।