বাগেরহাটে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও জমি দখলের চেষ্টা ॥ রাত জেগে পাহারা

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার পিপড়াডাঙ্গা এলাকায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত জমি জোরপূর্বক দখলে নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল। মহলটি জমির প্রকৃত মালিক জাহিদুল ইসলাম ও তার পরিবারের ওপর হামলা ও নানা প্রকার হয়রানির চেষ্টা করছে। যে কোন সময় প্রতিপক্ষ সাইফুল হাওলাদার ও হেলাল সরদারসহ অন্যরা ওই জমি দখলে নিতে পারেন। শুধু জাহিদুলের জমি নয়, প্রতিবেশী আব্দুস সোহবান বাওয়ালীর জমিও দখলের চেষ্টা করছেন সাইফুল ও হেলালরা। জমি রক্ষা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে ওই পরিবার দুটি।
প্রাইভেটকার চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা মৃত মো. জোহর আলী স্থানীয় হেমন্ত কুমার মন্ডল ও বসন্ত কুমার মন্ডলের কাছ থেকে ১৯৮৮ সালের ৯ এপ্রিল চিতলমারী উপজেলার কিসমত পিপড়াডাঙ্গা মৌজায় সাড়ে ২৫ শতক জমি কেনেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি আমরা এই জমি ভোগদখল করছি। আমাদের নামে এই জমির নামজারি (মিউটেশন) রয়েছে। চিতলমারী উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারস্থ এই জমিতে আমাদের বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় প্রভাবশালী সাইফুল হাওলাদার, হেলাল সরদার ও রফিকুল ইসলাম এই জমি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তারা এই জমির মধ্যে ৪ শতক জমি দলিল করেছেন বলে দাবি করেন। আমরা কোন উপায় না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালত জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তারপরও জমি দখল করতে একাধিকবার তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে।’
মৃত জোহর আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, ‘৩২ বছর ধরে স্বামী সন্তান নিয়ে এই জমিতে ঘর করে বসবাস করছি। কিন্তু সাইফুল হাওলাদার ও হেলালরা আমাদের জমি দখলে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। কয়েকদিন রাতেও আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করেছে। জমি বাঁচাতে আমরা রাতে ঘুমাইনা, সন্তানদের নিয়ে রাতে জেগে থাকি। কারণ তারা খুব বেপরোয়া, রাতে এসে আমাদের জমিতে ঘর তুলতে পারে।’ স্থানীয় বাসিন্দা তপন বিশ্বাস বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই দেখছি কালিগঞ্জ বাজারের পশ্চিমপাশের এই জায়গায় জাহিদুলরা বসবাস করেন। কয়েক বছর আগে জমিতে ভবন করে ভাড়াও দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন যে সাইফুলরা জমি দাবি করছে আমরা জানিনা।’ জাহিদুলের ভাড়াটিয়া মোটরসাইকেল মেকানিক রন বিশ্বাস বলেন, ‘কয়েক বছর আগে জাহিদুল ভাইয়ের কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে এখানে মোটরসাইকেলের গ্যারেজ করেছি। নিয়মিত জাহিদুল ভাইকে ভাড়াও পরিশোধ করি।’
প্রতিবেশী আব্দুস সোহবান বাওয়ালী বলেন, ‘জাহিদুলের বাবা জোহর আলী ও আমি দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি এই জমি ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে সাইফুল হাওলাদার, হেলাল সরদার ও রফিকুল ইসলাম আমার জমির মধ্যে সাড়ে তিন শতক জমি দাবি করেন। আমাকে জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। সাইফুল হাওলাদার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি বেগমের ভাই হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলে না। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত জমির ওপর স্থিতিবস্থা জারি করেছেন। তারপরও সাইফুল ও তার লোকেরা আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছেন। আমরা দুই পরিবারই একাধিকবার আইনজীবীদের মতামত নিয়েছি। আসলে তারা কোন জমি পাবে না। শুধু ক্ষমতার জোরে এই জমি দখল করতে চায়।’ সাইফুল হাওলাদার বলেন, ‘আমি এবং হেলাল সরদার হরেন্দ্রনাথ মন্ডল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১৭ সালে ৪ শতক জমি কিনেছি। হরেন্দ্রনাথ মন্ডলের নামে এই জমির এসএ ও বিআরএস পর্চা রয়েছে। আমাদের দলিল করা জমি ভোগ করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জমি কেনার পরে জমি বুঝে নিতে চাই, জাহিদুল ইসলামরা আমাদের নামে উল্টো অভিযোগ করেছেন।’ চিতলমারী থানা পুলিশের ওসি মীর শরিফুল হক বলেন, ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যার পক্ষে রায় দিবে তিনি জমি ভোগ করবেন। কেউ যদি জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা করে এবং আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আসে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’