জালিয়াতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

0

ভুয়া পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ নেওয়া, বাংলাদেশী না হয়েও বাংলাদেশের পাসপোর্ট বানানো, বাংলাদেশী পরিচয়ে বিদেশে যাওয়া, এমনকি ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করানোসহ অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে মূলত ভুয়া এনআইডির মাধ্যমে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম অনেক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা মানুষকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি তৈরি করে দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ভুয়া এনআইডির তথ্য সার্ভারেও ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, অনলাইনে যাচাই করেও ভুয়া এনআইডি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো থেকে এভাবে কোটি কোটি টাকার ভুয়া ঋণ তুলে নেওয়া হয়েছে, যেগুলো ফেরত পাওয়ার কোনো আশা নেই। শত শত রোহিঙ্গার এভাবে পরিচয়পত্র পাওয়া জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এর পরও এই এনআইডি জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে না কেন?
দৈনিক লোকসমাজসহ প্রায় সকল গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, অনেক বছর ধরেই চলছে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা। নির্বাচন কমিশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে ওঠা এসব চক্র বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে একেকটি এনআইডি তৈরি করে দিতে লাখ টাকা বা তারও বেশি নেয় প্রতারকচক্র। এর আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্বাচন কমিশনের কর্মীসহ জালিয়াতচক্রের অনেক সদস্যকে আটকও করা হয়েছে। কিন্তু এনআইডি জালিয়াতি বন্ধ হয়নি। অথচ, নির্বাচন কমিশন এনআইডি জালিয়াতির বিরুদ্ধে বারবার তাদের কঠোর অবস্থান ও জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছিল। বছর দুয়েক আগে এনআইডি জালিয়াতির চিত্র তুলে ধরে তা বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাগাদাও দেওয়া হয়েছিল। তাতেও বিশেষ কোনো কাজ হয়নি। গত শনিবার রাতেও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ এনআইডি জালিয়াতচক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে। তাঁদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দুজন কর্মীও রয়েছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় আরো কয়েকজনকে। এর আগে চট্টগ্রামে ইসির চার কর্মীসহ চক্রের ডজনখানেক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। করোনার ভুয়া টেস্টের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টিও গণমাধ্যমে উঠে আসে। এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তাদের দায় এড়াতে পারে কি? নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, মিরপুরে আটক হওয়া কমিশনের দুজন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে। চট্টগ্রামের ঘটনায়ও তদন্ত চলমান আছে। গত কয়েক বছরে এ রকম আরো অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু জালিয়াতি রোধে কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
বিশেষজ্ঞরা এনআইডি সার্ভারের এমন নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, ইসির ভেতরের কর্মীদের সহায়তা ছাড়া ভুয়া এনআইডির তথ্য সার্ভারে আপলোড করা সম্ভব নয়। ইসির মধ্যকার এই দুর্বলতা দ্রুত দূর করতে হবে। এভাবে চললে শুধু রোহিঙ্গারা নয়, জঙ্গিরাও এই দুর্বলতার সুযোগ নেবে। আর সেটি হবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এক বড় হুমকি। পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশীদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। রোহিঙ্গা ও জঙ্গিদের অপরাধের দায় বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। যার ক্ষতি হবে সুদূর প্রসারী। সময় থাকতে তাই কঠোর হওয়া জরুরি।