অর্থ অভাবে থমকে গেছে সংস্কার কাজ : চৌগাছার স্বরুপপুরে সুলতানি আমলের মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় সুলতানি আমলের একটি মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিক প্রাচীন এই মসজিদে এখন আর সে ভাবে সুলতানি আমলের স্থাপত্যশিল্প দেখা না গেলেও দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা সেখানে নামাজ আদায়ে ছুটে আসেন। অনেকে আসেন বিভিন্ন মানত করতে, নিয়ে যান গায়েবি পাথরে মাখা পানি আর তেল। প্রাচীন এই মসজিদটির এখন চলছে সংস্কার কাজ, কিন্তু অর্থ অভাবে কাজ সেভাবে এগিয়ে নিতে পারছেন না মসজিদ কর্তৃপক্ষ। সরকারি বা বেসরকারি কোন সহযোগিতা পেলে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের কাজ দ্রুত শেষ করতে পারবেন বলে জানান মসজিদ কতৃপক্ষ। উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামে অবস্থিত এ অঞ্চলের প্রাচীনতম মাটির ঢিবি থেকে বের হয়ে আসা একটি মসজিদ। যার নামকরণ করা হয়েছে স্বরুপপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা জানান, সুলতানি আমলে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। সুলতানি আমলের শাসনের অবসান ঘটলে মসজিদকে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। মসজিদের উত্তর পাশে আছে সিঁড়ি বাঁধা একটি পুকুর। অনেকের ধারনা এই সিঁড়ি বেয়ে মানুষ পুকুরের পানিতে ওজু করে মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। পুকুরটি থাকলেও সেই সিঁড়ি মাটির সাথে মিশে গেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ভারতের নদীয়া দখলের পর এর দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্বে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দিকে মনোযোগী না হয়ে উত্তর দিকে অকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ফলে তার রাজ্য উত্তর দিকে প্রশ্বস্ত হতে থাকে। পরবর্তীতে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের ছেলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে বর্তমান যশোর ও খুলনার কিছু অংশ তার অধীনে আনেন। ওই অঞ্চল বিজয়ের গৌরব অর্জন করেন খান জাহান আলী। খান জাহান আলী এক সময় নিজের আত্মরক্ষার্থে একটি ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হয়ে বর্তমান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর প্রবেশ করেন। সেখান থেকে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর হয়ে চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে পার্শ^বর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে মানুষের পানীয়জলের কষ্ট দেখে তিনি এ অঞ্চলে অনেকগুলো দীঘি আর পুকুর খনন করেন, নামাজ আদায়ে তৈরি করেন মসজিদ। কথিত আছে এক রাতেই এসব জলাশয় খনন করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ঝিনাইদহের বারবাজারে ৮৪ একর পুকুর ও দীঘি এবং ১৯ টি মসজিদ বিদ্যমান আছে।
হাকিমপুরের স্বরুপপুর গ্রামসহ এলাকার একাধিক বয়োবৃদ্ধ বলেন, ধারনা করা হয় ৪শ থেকে ৫শ বছর আগে বর্তমান স্বরুপপুর গ্রামের এই মসজিদ স্থাপন করা হয়। যুগযুগ ধরে মসজিদটি মাটির নিচে ঢাকা ছিল। পরবর্তীতে প্রতœতাত্বিক বিভাগ মসজিদটি মাটির নিচ থেকে উন্মোচন করে। এরপর হতে সেখানে নামাজ আদায় শুরু হয়। মসজিদের ভিতরে পাওয়া যায় দুইটি অলৌকিক পাথর। কথিত আছে এই পাথরের একটিতে পানি অপরটিতে তেল লাগিয়ে সেই তেল শরীরে মালিশ ও পানি পান করলে রোগ থেকে মুক্তি মেলে। মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. আবুজার গিফারী বলেন, প্রায় ৪ বছর ধরে মসজিদে তিনি ইমামতি করেন। ঐতিহ্যগাথা এই মসজিদে প্রতি জুম্মায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় ল্য করা যায়। মসজিদ কমিটির নেতা প্রাক্তন শিক্ষক হাজী তোফাজ্জেল হোসেন (৭০) বলেন, বুদ্ধি জ্ঞান হওয়া থেকেই এই মসজিদে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে দেখে আসছি। মসজিদটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় আমরা পুরানো নিদর্শন ভেঙে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম রবি বলেন, জরাজীর্ণ মসজিদটি ভেঙে আমরা নতুনভাবে দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছি। কিন্তু অর্থ অভাবে সে ভাবে কাজ করতে পারছি না। মসজিদের বাকি কাজ সমাপ্ত করার জন্য তিনি সরকারি বা সমাজের দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতা কামনা করেন।