অনলাইন শিক্ষায় যুক্ত ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এটা টিকিয়ে রাখা এইসময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে টেলিভিশন ও অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। কিন্তু মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক বর্তমানে টেলিভিশনে আর মাত্র ১৭ শতাংশ অনলাইন মাধ্যমে লেখাপড়ায় যুক্ত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন।
এতে বলা হয়, দারিদ্র্য, ইন্টারনেটের গতিশীলতা এবং বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ব্যবস্থার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়পক্ষকে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে হোমওয়ার্ক দিয়ে পরে তা ফের গ্রহণ করতে পারেন। সোমবার বিকালে এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।
অতিথি হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল মালেক, অধ্যাপক আবদুস সালাম, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কেএম এনামুল হক এবং এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশনের (ইরাব) সভাপতি মুসতাক আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহসীন হাওলাদার রেজা। ‘করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া; শিক্ষকদের করণীয়” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমিতির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শাখা প্রধান মোঃ মোহসিন তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম।
মাউশি মহাপরিচালক বলেন, অনেকে মনে করেন যে, অনলাইন ও দূরশিক্ষণে লেখাপড়া পরিচালনার এই ব্যাপারটি সাময়িক। করোনা চলে গেলে আগের অবস্থায় ফিরে যাবেন তারা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে বলেছে যে, দুবছরও এই পরিস্থিতি থাকতে পারে। তাই শিক্ষকদেরকে দূরশিক্ষণ আর অনলাইনে অভ্যস্থ হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাথীদেরকে আর কীভাবে সেবা দেয়া যায় সেটি উদ্ভাবন করতে হবে। অধ্যাপক ড. আবদুল মালেক বলেন, করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য অনলাইন ও টেলিভিশন মাধ্যমের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। এতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে। অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক করা জরুরি। এজন্য তাদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া বলেন, ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে শহর ও গ্রামের একটা বৈষম্য আছে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে। নইলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়বে। এতে শিক্ষায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
কেএম এনামুল হক বলেন, জরুরি অবস্থায় শিক্ষার মূল নীতি হচ্ছে শিক্ষার্থীর সুরক্ষা। রোববারে একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রথম দিন প্রমাণ করেছে এমন সুরক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। সব জিনিস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। তাই পরীক্ষামূলকভাবে স্কুল খুলে দেয়ার আগে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কেন্দ্রিক প্রকল্প এটুআইয়ের মতে মাত্র ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে। টেলিভিশন পাঠদানে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক যুক্ত হচ্ছে। তাই করোনাকালে শিক্ষা বড় সংকটে পড়েছে। মুসতাক আহমদ বলেন, যেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে যে, ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে পাঠদানে যুক্ত হচেছ সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে ৯৩ শতাংশ। এটা একটা ভুয়া হিসাব। তিনি করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধেক টিউশন ফি নেয়ার সংক্রান্ত অভিভাবকদের দাবি যৌক্তিক বলে উলে­খ করেন। অনুষ্ঠানে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষকেরা যুক্ত হন। তারা বলেন, অনলাইন শিক্ষায় নানা প্রতিবন্ধকতার অন্যতম ইন্টারনেটের দাম। এটা কমানো খুবই জরুরি। এছাড়া এই শিক্ষা চালিয়ে নিতে অল্প অর্থে ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইলসহ উপকরণের ব্যবস্থা করা দরকার। নইলে দরিদ্র মানুষ লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়বে। তারা আরও বলেন, অনলাইন ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা সেভাবে যুক্ত হচ্ছে না। ইন্টারনেটের গতির সমস্যা আছে। এই অজুহাতে তারা যুক্ত হতে সেভাবে চেষ্টা করে না। আর ভবিষ্যতেও যেহেতু এ শিক্ষা চালিয়ে নিতে হবে, তাই এব্যাপারে শিক্ষকদের ট্রেনিং দরকার। ট্রেনিংয়ের অভাবে বর্তমানে এই মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম সেভাবে চালিয়ে নিতে পারছেন না শিক্ষকরা।