ঐতিহ্যবাহী তসবীর মহল নামমাত্র টাকায় দীর্ঘ ৩ যুগ ইজারা নিয়ে আছেন এক নারী

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন ধরে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলা যশোর ইন্সটিটিউটের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান তসবীর মহল দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে ইজারা নিয়ে আছেন এক মহিলা। বিপুল অংকের ভাগবকেয়া থাকার পরও তার ইজারা বাতিল হচ্ছে না। এখনো ইজারাদার মাসুমা নোমানীর দখল অব্যাহত রাখতে এখনো বিভিন্ন মহল দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্বামী জাফর আহমেদ মুন্না। তবে, বর্তমান জেলা প্রশাসক ইনস্টিটিউট থেকে সকল প্রকার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সূত্র মতে, ১৯৮৫ সাল থেকে মাসুমা নোমানী নামে তসবীর মহল ইজারা পেয়েছেন। মাসিক মাত্র ১১ হাজার টাকা ভাড়ায় এই তসবীর মহল ও সংলগ্ন ছয়টি দোকান ব্যবহার করছেন তিনি। প্রতিবার পনের বছর মেয়াদী ইজারা পেয়ে থাকেন তারা। বর্তমানে এর মাসিক ভাড়া মাত্র ১৩ হাজার টাকা। ভাড়া নিয়ে বহু বছর তিনি ইংরেজি ছবির নামে বিকৃত রুচির অশ্লীল দৃশ্যের সিনেমা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বহুবার ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বাধীন টিম অভিযান পরিচালনা করে সিনেমার রিল, মেশিনসহ বিভিন্ন দ্রব্য জব্দ এবং জরিমানা করেছে। তারপরও ইজারাদাররা অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শন করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভাড়া দিচ্ছেন না। বর্তমানে এগার লাখ টাকার বেশি ভাড়া বকেয়া রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। মাত্র তের হাজার টাকা মাসিক এতো টাকা বকেয়া থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ২০১০ সালে তিনি পুনরায় লিজ পান এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সূত্রমতে, খাতা কলমে ভাড়া তের হাজার হলেও সাবেক কমিটির কোনো কোনো নেতাকে অলিখিত অর্থ দিয়ে ইজারা টিকিয়ে রেখেছে নোমানী। এমন অভিযোগ অনেক প্রভাবশালী সদস্যের। তবে লিজ নেয়া সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে থাকা নোমানীর স্বামী জাফর আহমেদ মুন্না সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, শুধু লিজ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে এককালীন এক লাখ টাকা দিতে হবে। তার মতে, বকেয়ার পরিমান ৯ লাখ টাকার কিছু বেশি।  এদিকে, ভাড়া বকেয়ার অজুহাতে বিগত কার্যনির্বাহী পরিষদের একাধিক নেতা মুন্নার কাছ থেকে তসবীরমহল ফেরত নিয়ে সেখানে আধুনিক মার্কেট নির্মাণের প্রস্তাবনা দেন। প্রস্তাবদানকারীদের সাথে স্থানীয় একটি প্রভাবশালীমহল রয়েছে প্রচার রয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত কমিটির এক নেতা বলেন, ঠিক মার্কেট নয়, সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে উপরে অডিটোরিয়াম এবং নীচে স্থায়ী একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ করার প্রস্তাবনা ছিল। সে মঞ্চে নিয়মিত কবিতা, নাচ, আলোচনা ও গান হবে আর পাশ দিয়ে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হবে। তাতে ইন্সটিটিউটের আয় বাড়তো।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খানের কাছে মার্কেট করার অলিখিত প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি এর বিরোধিতা করে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ইতিহাস ঐতিহ্য তিনি নষ্ট হতে দেবেন না। এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটুর সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, লিজ গ্রহিতার কাছে বিপুল অংকের ভাড়া বকেয়া সংক্রান্ত একটি এজেন্ডা গত ২ সেপ্টেম্বরের সভায় উত্থাপিত হয়। সেখানে মার্কেট করা সংক্রান্ত কেউ কোন মন্তব্য করেছেন কিনা তা তিনি বলতে পারেননি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, মাঠটিও অব্যবস্থাপনায় পড়ে সৌন্দর্য হারিয়েছে। সকলের উচিৎ ইন্সটিটিউটের স্কুল বেদখল হওয়া সম্পত্তি, বকেয়া ভাড়া আদায়সহ উন্নয়ন কাজে অংশ নিয়ে যশোর ও ইন্সটিটিউটের সুনাম ফিরিয়ে আনা। তসবীর মহলের বকেয়া ভাড়া আদায়সহ পরবর্তী করণীয় সংক্রান্ত একটি সাব কমিটিও গঠিত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।