মোবাইল ফোন কিনতে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের চেষ্টা : বিপথগামী কিশোর নাতির হাতে খুন হলেন বৃদ্ধা

0

এস.এম.মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ বিপথগামী কিশোরে নাতির হাতে জখম এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। দামি মোবাইল ফোন কিনতে সজিব (১৫) নামের ওই কিশোর বৃদ্ধা সকিনা বেগমের (৭৫) এক জোড়া সোনার চেন ও কানের অলংকার ছিনিয়ে নিতে তার মাথায় উপর্যুপরী আঘাত করেছিল। ১০ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বৃদ্ধা সকিনার। ঘটনাটি ঘটে গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর ইউনিয়নের নোয়ালী গ্রামে। নিহত সকিনা ওই গ্রামের মোহাম্মদ আলী শেখের স্ত্রী।এ ঘটনায় ওই রাতেই পুলিশ সজিবকে আটক করে। গতকাল শনিবার সকালে নিহতের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাইদুল ইসলাম বাদি হয়ে সজিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। দুপুরে পুলিশ সজিবকে আদালতে হাজির করলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
নিহত সকিনা বেগমের ছেলে সাহিদুল ইসলাম জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সজিব হোসেনকে সাথে নিয়ে তার মা সকিনা বেগম পার্শ্ববর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার দিকদানা গ্রামে ছোট মেয়ে রেশমা খাতুনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নোয়ালী গ্রামের পশ্চিম মাঠের ফাকা রাস্তার কাছে পৌঁছালে পিছন থেকে নাতি সজিব লাঠি দিয়ে দাদি সকিনা বেগমের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সুযোগে সজিব দাদির গলা থেকে স্বর্ণের চেইন এবং কানের দুল নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আশপাশের লোকজন চলে আসলে সজিব সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সকিনা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার একটি হাসাপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর কিছুটা উন্নতি হলে গত বুধবার তাকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু ওই দিন বিকেলে হঠাৎ সকিনার বেগমের অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। বুধবার বিকেলে তাকে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার বিকেলে সেখানে সকিনা বেগমের মৃত্যু ঘটে। খবর পেয়ে ওই রাতেই পুলিশ সজিব হোসেনকে আটক করে।
মশ্বিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, নোয়ালী গ্রামের মফিজুল শেখের ছেলে সজিব হোসেন বয়সে কিশোর হলেও সে মাদকাসক্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সজিবের পিতা-মাতা ঢাকায় একটি পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করেন। লেখাপড়া ছেড়ে সজিব চারমাস আগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে দাদার সংসারে বসবাস করছিল। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, নিহতের ছেলে সহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে শনিবার সজিবের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই তপন কুমার নন্দী জানান, শনিবার দুপুরে যশোর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সজিব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আদালত সজিবকে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসআই তপন নন্দী জানান, সজিব আদালতে স্বীকার করেছে একটি ভাল মোবাইল সেট কেনার জন্য সে দাদির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এ সময় লোকজন চলে আসলে স্বর্ণালঙ্কার নিতে পারেনি।