দ্রুত ভৈরব নদ খননের দাবি যশোরবাসীর

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভৈরব নদ নিয়ে আর টালবাহানা দেখতে চায় না যশোরবাসী। বর্ষার অজুহাত দিয়ে এতদিন খননকাজ বন্ধ রাখা হলেও চলতি শুকনো মৌসুমে দ্রুত কাজ শুরু করার তাগিদ সচেতন মহলের। এ ক্ষেত্রে চলমান কার্যাদেশেই কাজ সমাপ্তের দাবি সকলের। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ খননের কাজ শুরু হয় বিগত ২০১৯ সালে। নদের গুরুত্বপূর্ণ এ অংশের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে পানি উন্নয়ন বোডের্র (পাউবো) পক্ষ থেকে নদী কমিশনে চিঠি পাঠানোর পরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনার বিষয়ে কোনো সাড়া না মেলায় সিএস রেকর্ডের ম্যাপ অনুযায়ী নদের দড়াটানা ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত খননকাজ শুরু করার উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যশোরবারসীর আশা ছিলো ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটির খনন কাজ সম্পন্ন করবে পাউবো। কিন্তু বর্ষার অজুহাত দেখিয়ে খনন কাজ বন্ধ রাখা হয় ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের প্রথমদিকে উচ্চ আদালত নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণার পর বর্তমান সরকারের নির্দেশে আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীপাড়ে বহুতল ভবন ভাঙা শুরু হয়। তারই ধারবাবাহিকতায় যশোর ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গত বছরের ১৮ আগস্ট যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পানি আইনের ‘প্লাবন ভূমি’র’ নিয়ম প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় অবৈধ দখলদারদের। এসব দখলদারের বহুতল ভবন রক্ষার জন্য তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনদের কাছে তদবির শুরু করেন। তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সে ময়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীর ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে আপসহীন থাকায় একপর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে যশোর থেকে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি কক্সবাজারে কর্মরত আছেন।
সূত্রটি জানায়, পানি আইনে যাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হয় সে জন্য নদী কমিশনেও জোরালো তদবির শুরু করেন অবৈধ দখলদাররা। যে কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার পরও প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও নদী কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা এখনও যশোরে পৌঁছেনি। অজ্ঞাত কারণে আটকে রয়েছে নদী কমিশনের নির্দেশনা। এদিকে নদী কমিশনের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় পাউবোর পক্ষ থেকে ভৈরবের এ অংশে চলমান নিয়মেই খনন কাজ শুরু হয়। দেড় মাস আগে থেকে দড়াটানা ব্রিজের পশ্চিমাংশে খনন কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে পূর্বাংশে কাঠেরপুল থেকে নীলগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ৫৯ টি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে ৫৮ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। শহরের মূল অংশে খননকাজ শুরু করতে পারেনি পাউবো। বরং বর্ষার অজুহাত দেখিয়ে বিগত ৬ মাস ধরে খনন কাজ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভৈরবের শহরাংশের দড়াটানা ব্রিজ থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত শহরের মূল অংশে আমরা বর্ষার আগে খনন কাজ শুরু করতে গেলেও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি খুব দ্রুত ফের কাজ শুরু করতে পারবো। এদিকে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ায় এখন নদীপাড়ের লোকজন ভৈরবের পূর্ণাঙ্গ খনন দেখতে চান। তাদের দাবি বর্ষার আগে পর্যাপ্ত সময় থাকা সত্ত্বেও সে সময় ঠিকাদাররা খনন কাজ নিয়ে টালবাহানা বা কালক্ষেপন শুরু করেন। নদী খননের বরাদ্দ হওয়া টাকা আত্মসাৎ করার জন্য এ টালবাহানার আশ্রয় নেয়া হয় বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট অধ্যাপক মশিউল আজম বলেন, ভৈরব খনন যশোরের মানুষের প্রাণের দাবি। সেটি যেভাবেই হোক শুরু হয়েছিলো। কিন্তু নানা কারণে বর্ষার আগে কাজ শেষ করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস আন্তরিকতা থাকলে অবশ্যই বর্ষার আগে শেষ করা যেতো। তাই আমার দাবি, চলতি বছরের শুকনো মৌসুমেই এ কাজ শেষ করতে হবে। এরজন্য আর ২১ সাল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে চাই না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পানি আইনের প্লাবন ভূমির শর্ত অনুযায়ী ভৈরবের দড়াটানা ব্রিজের পূর্বাংশের দুই পাড়ে একাধিক বহুতল ভবনের কিছু অংশ অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইন অনুযায়ী বছরের যে কোনো সময়ে সর্বোচ্চ যে পর্যন্ত পানি যায় তার আরও ১০ মিটার পর্যন্ত প্লাবন ভূমি হিসেবে বিবেচ্য হবে। অথচ এ আইন কার্যকর না হওয়ায় অবৈধ দখলদাররা তাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভৈরব নদ সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের সাথে যুক্ত কয়েকজন বলেন, একটি নদকে তার পূর্ণাঙ্গ নাব্যতা ফিরিয়ে দিতে হলে নদতট রক্ষা করতে হবে। পানি আইনে সেটি বিদ্যমান আছে। বর্তমান সরকারও সেই লক্ষ্যে সারাদেশের নদী খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা চাই ভৈরব তার পূর্বের চেহারায় ফিরে আসুক। কারোর স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে নদের নাব্যতা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনো কারণে নদ খননের বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিৎ বলে তারা মন্তব্য করেন। ভৈরব নদ খনন ও নদের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে যশোরের মানুষের দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবির প্রেক্ষিতে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব নদ অববাহিকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় নদের ৯২ কিলোমিটার এলাকা খনন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে (এলজিইডি) সঙ্গে নিয়ে নদের দুই তীরে ইকো পার্ক ও ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো। ইতিমধ্যে শহরাংশে ভৈরব নদের তীরে সৌন্দর্যবর্ধন ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।