ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা কেশবপুরে

0

স্টাফ রিপোর্টার, কেশবপুর (যশোর) ॥ যশোরের কেশবপুরের বাজারগুলিতে ধান-চালের মূল্য সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় খাদ্যগুদামে ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেশবপুরে ধান-চালের দাম কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় কৃষক ও মিল মালিকদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্যগুদামে ধান, চাল বিক্রি করতে হলে লোকসান গুণতে হবে। ফলে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবে মিল মালিকরা দাবি করেছেন, লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তাদের ৩ মাস সময় বৃদ্ধি করা হলে তারা খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করবেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় গুদামকে ঘিরে ওঠা শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ পরিস্থিতিতে ধান-চাল সংগ্রহের ল্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে স্বয়ং খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ৫শ ৫৩ মেট্রিকটন ধান ও ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৬ শ ৩৪ মেট্রিকটন চাল ক্রয়ের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মৌসুমের ২০ মে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। সে ল্েয উপজেলা কৃষি বিভাগে প্রতিজন কৃষক ১ মেট্রিকটন করে ধান দেয়ার শর্তে ২ হাজার ৫শ ৫৩ জন কৃষক লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে তালিকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। এ শর্তে গত ২৯ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকরা মাত্র ৬৩.১২০ মেট্রিকটন ধান খাদ্যগুদামে বিক্রি করেছেন। সংসারের দায়দেনা মেটাতে কৃষকের মুজদও শূন্যের কোটায়। অপরদিকে, খাদ্যগুদামের সাথে এ উপজেলার ৫৫ জন মিলমালিক ৩৬ টাকা কেজিদরে ১ হাজার ৬শ ৩৪ মেট্রিকটন চাল দেয়ার শর্তে চুক্তিপত্র করে। এ পর্যন্ত মিল মালিকরা খাদ্যগুদামে মাত্র ৫৫৩.৩৮০ মেট্রিকটন চাল বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট কৃষক ও মিল মালিকরা কবে নাগাদ খাদ্যগুদামে ধান ও চাল বিক্রি করবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা।
ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১২শ টাকায়। সে েেত্র সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিমণ ১ হাজার ৪০ টাকা। অপরদিকে, বাজারে প্রতিমণ চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭শ থেকে ১ হাজার ৮শ টাকায়। সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিমণ ১ হাজার ৪শ ৪০ টাকা। এেেত্র কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা কৃষক ও মিল মালিকদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। মিল মালিক হাফিজুর রহমান, বিষ্ণুপদ দাস জানান, বোরো ধান ঘরে উঠার মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ধান দিয়ে যে চাল উৎপাদন হচ্ছে তা খাদ্যগুদামে চলছে না। ইচ্ছা ছিল উত্তরবঙ্গ থেকে চাল আমদানি করে গুদামে সরবরাহ করবেন। কিন্তু বন্যার কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ধান সংকটের পর করোনা ভাইরাসের কারণে চাতাল শ্রমিকরা কাজ করতে অনীহা দেখান। তারা অভিযোগ করে বলেন, পুঁজিপতিরা মিলে চাল গুদামজাত করে রেখেছেন। ফলে বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৩ শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে কৃষকদের ধান তিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এ বছর খোলাবাজারে ধান-চালের মূল্য বেশি। ফলে কৃষক ও মিলাররা সরকারি গুদামে ধান, চাল বিক্রিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। তারা সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তবে মিল মালিকরা সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শেষ সময়ে হলেও তারা গুদামে চাল সরবরাহ করবেন বলে তিনি আশাবাদী।