অবৈধ গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ উচ্ছেদ করতে হবে

0

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখার সময় নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণ উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। কীভাবে গ্যাসলাইনের ওপর মসজিদ নির্মিত হলো, সেটা খতিয়ে দেখতে বলেছেন, এয়ার কন্ডিশনের জন্য বিদ্যুতের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে কিনা তাও দেখতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে এ ধরনের বিস্ফোরণ খুবই দুঃখজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ওইটুকু জায়গায় ৬টি এসি লাগানো হয়েছে। আবার শোনা যাচ্ছে, গ্যাসের লাইনের ওপরই নাকি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এতটুকু ছোট জায়গায় ৬টি ইয়ারকন্ডিশনা বিদ্যুৎ সংযোগ এবং গ্যাসের পাইপলাইনের ওপর নির্মাণ অনুমোদিত হওয়ার কথা নয়। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ঘটনা কেন ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। শিগগিরই এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। ওদিকে ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে, এয়ারকন্ডিশনার নয়, গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাসের গ্যাস লাইনটি অবৈধ এবং মসজিদে দুটি বিদ্যুৎ সংযোগের একটি অবৈধ। এই মর্মান্তিক প্রাণহানিকর ঘটনার জন্য পুলিশের তরফে মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস ও ডিপিডিসির অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। ফতুল্লা থানায় দায়ের করা এ সংক্রান্ত মামলায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করে তাদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনেছে।
গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটার প্রেক্ষিতে জনমনে ব্যাপকভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও গ্যাসের লিকেজ থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বিরল নয়। গ্যাসলাইনের অবস্থা যে মোটেই ভালো নয়, লিকেজের ছড়াছড়ি থেকে সেটাই প্রমাণিত হয়। গ্যাসের বিতরণ ও সার্ভিস লাইনের দৈর্ঘ্য ২০ হাজার কিলোমিটার, যার ৭০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিনের পুরানো লাইনের বেশির ভাগই উপযোগিতা হারিয়েছে। দুর্বল হতে হতে তা কোথাও ভেঙ্গেচুরে গেছে, কোথাও বা ছিদ্র হয়ে গেছে। এসব থেকে গ্যাসলিকেজ অবধারিত এবং যাতে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। এইসঙ্গে আছে অবৈধ সংযোগ ও লাইন। গ্যাসের সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকলেই তিতাসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কারসাজিতে অবৈধ সংযোগ ও লাইন বন্ধ নেই। সারাদেশে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমানের মতে, তিতাসের এলাকাতে অন্তত দু’লাখ অবৈধ সংযোগ থাকতে পারে। উল্লেখ্য, অবৈধ সংযোগ দিতে যে মালামাল ব্যবহার করা হয়, তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ঝুঁকিপূর্ণ। সংযোগ ও লাইন দেয়ার পর অল্পদিনেই তা নষ্ট হয়ে গ্যাসলিকেজের উৎসে পরিণত হয়। যারা অবৈধ সংযোগ নিয়েছে তারা ও তাদের আশেপাশের লোকজন যে কতবড় বিপদের মধ্যে রয়েছে তা বিশাদ বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিদ্যুতের সংযোগ ও লাইন সম্পর্কেও এই বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করা যায়। বিদ্যুতেরও অসংখ্য অবৈধ সংযোগ ও লাইন রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি ও অর্থললুপতার কারণে এইসব অবৈধ সংযোগ ও লাইন গড়ে উঠেছে। অবৈধ সংযোগ ও লাইনের ন্যূনতম মান নেই। ফলে বিদ্যুৎজনিত দুর্ঘটনা নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, দুষ্কৃতি, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা যেভাবে চেপে বসেছে তাতে এ দু’ক্ষেত্রে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন আলোচ্য মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ বের করতে। একই সঙ্গে তিনি সারাদেশের মসজিদ বিদ্যুৎ সংযোগ, এসি স্থাপন, যথাযথ জায়গায় মসজিদ নির্মাণ এবং অনুমোদিত নকশা অনুসরণ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং এসব দেখার জন্য বলেছেন। তার এ-নির্দেশনা শুধু সময়োচিতই নয়, অত্যন্ত জরুরিও। বলতে গেলে সারাদেশের প্রায় সকল মসজিদেই বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। শহরে তো আছেই, গ্রামেও অনেক মসজিদ এসি লাগানো হয়েছে। এসির দাম এমন বেশি কিছু নয়। অনেকেই মসজিদে এসি দান করে। বিদ্যুৎ লাইনের লাড বহনের ক্ষমতা কতটা সেটা অনেকের জানা থাকে না। আবার এসি অপারেট করার সক্ষমতাও সকলের থাকে না। এসব ক্ষেত্রে এতটুকু ত্রু টি ও ব্যত্যয় ঘটলে দুর্ঘটনা অবধারিত। অন্যদিকে অনুমোদিত নকশায় ভালো জায়গায় মসজিদ হওয়া উচিৎ। আমরা আশা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক দেশের সকল মসজিদে অনুসন্ধান চালিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করবে। যার ভিত্তিতে মসজিদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এই সঙ্গে আমরা আরো বলবো, গ্যাস-বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ও লাইন উচ্ছেদে সাঁড়াষী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যারা অবৈধ সংযোগ ও লাইন দিয়েছে এবং যারা নিয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।